নৈরাজ্য কমাতে প্রয়োজন রাজনৈতিক অঙ্গীকার : মোজাম্মেল হক চৌধুরী

আহমেদ সেলিম

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২১, ০৯:২১ এএম | আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২১, ১২:৫৩ পিএম

মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক চৌধুরী পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য নিয়ে কথা বলেছেন সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আহমেদ সেলিম।

তেলের দাম বাড়ার পর বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে; কিন্তু ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য থামছে না কেন?
জ্বালানির মূল্য যে হারে বেড়েছে গণপরিবহনের ভাড়া তার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি বাড়ানো হয়েছে। এই ভাড়া বাড়ানোকে আমরা কোনোভাবেই যৌক্তিক মনে করছি না। দূরপাল্লার বাসে এই চিত্র বেশি ফুটে উঠেছে। ২০১৬ সালে জ্বালানির মূল্য যখন তিন টাকা কমানো হয়, তখন প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া কমেছিল তিন পয়সা। এখন জ্বালানির দাম বাড়ায় আমাদের বিশ্লেষণ বলছে, সর্বোচ্চ প্রতি কিলোমিটারে ১৬ পয়সা ভাড়া বাড়ানো যেতে পারে। বাসের মালিক ও সরকার মিলে একচেটিয়াভাবে এই ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। বাসের মালিকরা তাঁদের অন্য খাতের খরচ ভাড়ার মাধ্যমে যাত্রীর মাথায় চাপিয়ে দিচ্ছেন।

রাজধানীতে সিটিং, ওয়েবিল ও গেটলক বন্ধ করতে বলা হয়েছে; কিন্তু তা বন্ধ হচ্ছে না কেন?
এটা এটা প্রতারণামূলক উদ্যোগ। সিটিং সার্ভিস ও গেটলক বাস বন্ধ করার কোনো স্বদিচ্ছাই বাস মালিকদের নেই। তাঁরা সিটিং সার্ভিস বন্ধের নামে ইঁদুর-বিড়াল খেলছেন। এ ধরনের কোনো বাসই চলার কথা না। সিটিং সার্ভিসের নামে যাত্রীর পকেট কাটা হচ্ছে। বাসের ভাড়া নির্ধারণের সময় ধরেই নেওয়া হয় ৫৫ আসনের একটি বাসে ১০ থেকে ১৫টি আসন খালি থাকবে। সেই হিসাব করেই ভাড়া ঠিক করা হয়। খালি আসনের ভাড়াও অন্য যাত্রীরা দেন। বাসের মালিকরা সিটিং সার্ভিস বন্ধের কথা মুখে বলেন আর শ্রমিকরা বাস চালানো বন্ধ করে দেয়। সিটিং সার্ভিসে যাত্রীর চাহিদা আছে- এমন কথা বলে মালিকরা কিছু দিন পর আবার এটা চালু করেন।

আপনার সংগঠন থেকে বলা হয়েছে, ঢাকায় বেশির ভাগ বাস সিএনজিচালিত; কিন্তু এখন তো সিএনজিতে চলে এমন স্টিকার লাগানো বাস চোখেই পড়ে না।
বহু বাস আছে যেগুলো সিএনজিতে চললেও ডিজেলচালিত লেখা আছে। এখন যদি সিএনজির দাম বাড়ে তাহলে আবার দেখবেন সব বাস সিএনজিচালিত হয়ে গেছে। সব সিএনজিচালিত বাসই এখন রাতারাতি ডিজেলচালিত হয়ে গেছে। এটা অন্যায়। 

চলমান শিক্ষার্থীদের হাফ পাসের আন্দোলনকে কি সমর্থন করেন?
রাজধানীর গুলিস্তান থেকে কাজলা এই সাত কিলোমিটার রাস্তার ভাড়া ১৫ টাকার জায়গায় আদায় করা হচ্ছে ২৫ টাকা। সেখানে ছাত্ররা যদি অর্ধেক ভাড়া দেয় তাহলেও ওরা মূল ভাড়ার থেকে খুব একটা কম দিচ্ছে না। হাফ পাস ছাত্রদের অধিকার। একই সঙ্গে বাসে যাঁরা আসন না পেয়ে দাঁড়িয়ে যাতায়াত করেন, তাঁদের কাছ থেকেও অর্ধেক ভাড়া নেওয়া উচিত।

দীর্ঘ প্রচলিত রেওয়াজ গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের ‘হাফ ভাড়া’ নেওয়ার; কিন্তু সরকারিভাবে এটার সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। নির্দেশনা বা প্রজ্ঞাপন কী জরুরি?
২০১৫ সালে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কমলাপুরে বিআরটিসির বাস ডিপো উদ্বোধনকালে পরিষ্কারভাবে বলেছেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নিতে হবে। কোনো বাস যদি হাফ ভাড়া না নিলেও আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়াও রাষ্ট্র যারা নেতৃত্ব দেন তারাও বিভিন্ন সময় এই কথা বলেছেন। ছাত্রজীবনে আমরা সবাই কিন্তু হাফ ভাড়ার সুবিধা নিয়েছি। তাই সবকিছু যে আইনে থাকতে হবে, তা নয়। আইনের বাইরের সামাজিক দায়বদ্ধতার কিছু বিষয় রয়েছে। আমাদের মনে রাখা দরকার, রাষ্ট্র গণপরিহন মালিকদের জন্য অনেক সুবিধা নিশ্চিত করে। তাই একটি বাসে যদি ৫-৭ জন শিক্ষার্থীকে হাফ পাস দেওয়া হয়, তাহলে ব্যবসায় খুব একটা লস হবে না তাদের; কিন্তু আমরা মানবিকতার জায়গা যদি এভাবে তলিয়ে যাই, তাহলে দেশটা কীভাবে চলবে- সেই প্রশ্ন রাখতে চাই তাদের কাছে। 

এসবের সমাধান কী?
গণপরিবহনের কেন্দ্র হচ্ছে যাত্রী। অথচ কোনো কিছুতেই যাত্রীর অংশগ্রহণ নেই। ১৫ জন মিলে ভাড়া বাড়িয়েছেন, যেখানে ৯ জনই হলেন বাস মালিকদের প্রভাবশালী নেতা। আর পাঁচজন হলেন আমলা। আমলাদের আমি জনগণ মনে করি না। আর বাসের এই নেতারা মন্ত্রীর কথাই শোনেন না। আমলাদের কথা আর কি শুনবেন। নতুন কমিটি করে বাসের ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। সেই কমিটিতে সমপর্যায় যাত্রী ও ভোক্তা অধিকার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ থাকবে। তাহলেই কেবল যৌক্তিক ভাড়া ঠিক হতে পারে।

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারের পরিকল্পনায় কী ঘাটতি আছে বলে আপনি মনে করেন?
সড়কের নৈরাজ্য থামাতে হলে সবার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক অঙ্গীকার। সরকার চাইলে পারে না এমন কিছু নেই। আমরা দেখেছি জঙ্গি দমনে বর্তমান সরকারের সফলতা। আমরা উন্নয়নে বিস্ময় দেখেছি। তাহলে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকার ব্যর্থ হবে এমনটা আমরা আশা করতে পারি না। সরকার চাইলেই শৃঙ্খলা ফেরাতে পারবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh