আমাকে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে: সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:৫১ পিএম

সাবেক আফগানর প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি

সাবেক আফগানর প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি

তালেবান গত অগাস্টে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে ঢুকে পড়তে শুরু করার পর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি হঠাৎ করেই পালিয়ে গিয়েছিলেন। সেই মুহূর্তের বর্ণনা দিয়েছেন বিবিসি রেডিও ফোরস টুডে প্রোগ্রামে। এসময় তিনি বলেন, আমাকে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) এই প্রোগ্রামে গানি তার পালিয়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় বলেছেন, কাবুলকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতেই তিনি একাজ করেছিলেন।

গানি জানান, কাবুল ছেড়ে পালাবেন কিনা সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মাত্র ২ মিনিট সময় হাতে ছিল এবং বিমান কাবুল ছাড়ার আগ পর্যন্ত কোথায় যাচ্ছেন তা তিনি জানতেন না। এমনকী তালেবানের কাবুল দখলের দিন ১৫ আগস্টে ঘুম থেকে উঠেও তিনি বিন্দুমাত্র বুঝতে পারেননি যে, এটাই আফগানিস্তানে তার শেষ দিন হবে।

তালেবানের কাবুল দখল করে নেওয়ার সময়টিতে দেশকে ফেলে রেখে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানির বিদেশে পালিয়ে যাওয়া নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছে। গানি পালিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আশ্রয় নেন। এখনও সেখানেই আছেন তিনি।

বিবিসি রেডিও ফোরস টুডে প্রোগামে অতীতের সেই দিনটির ঘটনা স্মরণ করে গানি বলেন, দিনের শুরুতে তালেবান যোদ্ধারা কাবুলে প্রবেশ না করতে রাজি হয়েছিল, 'কিন্তু ঘণ্টা দুয়েক পরই তাদের অবস্থান বদলে যায়।'

‘তালেবানের দুটি আলাদা দল দুই দিক থেকে কাবুল ঘিরে ফেলছিল। তাদের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষ বেধে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। এতে ৫০ লাখ অধিবাসীর এই শহর ধ্বংস হয়ে যাওয়া এবং মানুষজনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারত।’

গানি জানান, তিনি তখন তার স্ত্রী এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে কাবুল ছেড়ে যেতে দিতে রাজি হন এবং নিজে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার জন্য একটি গাড়ির অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু সেই গাড়ি আসেনি; বরং ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে গানির নিরাপত্তা প্রধান তার কাছে এসে তাকে বলেন যে, তিনি (গানি) যদি কোন পদক্ষেপ নেন তাহলে সবাইকে মারা পড়তে হবে।

গানি বলেন, ‘তিনি (নিরাপত্তা প্রধান) আমাকে দুই মিনিটের বেশি সময় দেননি। আমার নির্দেশনা ছিল খোস্ত শহরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া। কিন্তু তিনি জানান, খোস্ত এবং জালালাবাদ ইতোমধ্যেই দখল হয়ে গেছে।’

‘আমি জানতাম না আমরা কোথায় যাব। যখন আমরা বিমানে উঠে উড্ডয়ন করলাম, তখনই এটি স্পষ্ট হয় যে আমরা আফগানিস্তান ছেড়ে যাচ্ছি। সুতরাং, এটি হঠাৎ করেই ঘটেছিল।’

ওই ঘটনার পর আফগানিস্তানের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ-সহ অনেক আফগানই তখন গানির সমালোচনা করেছিলেন। আমরুল্লাহ এ ঘটনাকে ‘লজ্জাস্কর’ আখ্যা দেন।

তালেবান একদিনে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করেনি। কিন্তু অনেকেই বলছেন, ১৫ আগস্ট গানি হঠাৎ পালিয়ে যাওয়ার ফলে একটি চুক্তি বাতিল হয়ে গেছে, যে চুক্তিটি প্রায় হয়ে এসেছিল এবং যেটি থাকলে ক্ষমতা হস্তান্তর আরও সুশৃঙ্খলভাবে হতে পারত।

অন্যদিকে, তালেবানের ক্ষমতায় আসাটা অনেকটা নিশ্চিতই ছিল। কিন্তু যে মানুষটি আমৃত্যু লড়ে যাওয়ার কথা বারবার বলে এসেছিলেন, তার হঠাৎ চলে যাওয়ায় যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তাতেই সবকিছু আরও বেশি তালগোল পাকিয়ে গেছে।

তবে ১৫ আগস্ট আশরাফ গানি পালিয়ে গিয়ে যা করেছেন, তার জন্য যতটা না মানুষ তাকে দায়ী করেছে তার চেয়েও বেশি দায়ী করেছে আরও আগেই তিনি সব কাজ না করে যাওয়ার জন্য।

পালানোর সময় বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়েছেন-এমন অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক এই আফগান প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক তদন্ত আহ্বান করেছেন এবং বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে তার নামের কালিমা মুছে যাবে।

গানি কাবুল ছাড়ার দিনই তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে। তারপর থেকেই দেশটি মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তালেবান শাসনক্ষমতায় আসার পর দেশটিতে আন্তর্জাতিক সমর্থন কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

কাবুল পতনের তিনমাস হতে চলল, গানি এখন বলছেন, কিছু কিছু জিনিসের দায় তিনি মাথা পেতেই নেবেন। আর তা হচ্ছে, যে সব কারণে কাবুলের পতন ঘটল এবং আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের বিশ্বাস করার মতো বিষয়গুলো।

তিনি বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ার ধ্বংস করা হয়েছে। আমার মূল্যবোধ ধুলিস্যাৎ করা হয়েছে, আমাকে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে।’

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh