আবুল কাসেম ফজলুল হক
প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:৪৭ এএম
আবুল কাসেম ফজলুল হক
“১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের পরে ছাত্রলীগের সম্মেলন থেকে সুচিন্তিতভাবে ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চূড়ান্ত অভিব্যক্তি ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উত্থাপিত হয়। তখনই প্রথম এই স্লোগানের শক্তি ও তাৎপর্য সকলের উপলব্ধিতে আসে এবং তখন থেকে ধারাবাহিকভাবে এই স্লোগান চলতে থাকে।”
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মারা যান ১৯৬৩ সালের শেষ দিকে। তখন শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে অধিষ্ঠিত হন। আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো তখন ধারণা ব্যক্ত করেছিল যে, মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দুর্বল হয়ে পড়বে; কিন্তু কার্যত হয়েছে তার বিপরীত। বিরোধীদলীয় আন্দোলনের কর্মীদের মধ্যে যখন হতাশা, অনাস্থা ও সংশয় বিরাজ করছিল, সমগ্র জনসাধারণের মধ্যে যখন দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের সুস্পষ্ট কর্মসূচির তাগিদ প্রবল হয়ে উঠেছিল তখনই- ১৯৬৬ সালের প্রথম দিকে- আওয়ামী লীগ থেকে প্রচার করা হয় ছয় দফা কর্মসূচি। ছয় দফা প্রচারিত হলে আন্দোলনের সামনে একটা সুস্পষ্ট লক্ষ্য প্রতিভাত হয় এবং জাতীয় আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হতে থাকে আর আওয়ামী লীগ দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে। এতদিন আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল নেগেটিভ- সরকার উৎখাত; এবার সামনে এলো পজিটিভ লক্ষ্য- ছয় দফার নির্দেশিত লক্ষ্য, আর সূচিত হলো আন্দোলনের এক বৃহত্তর নতুন পর্যায়। এ-পর্বে আন্দোলনের প্রধান স্লোগান ছিল : ‘জাগো জাগো-বাঙালি জাগো’।
১৯৬৬ সালের প্রথম দিকে ছয় দফা ঘোষিত হওয়ার শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ অত্যন্ত ব্যাপকভাবে নতুন নতুন পুস্তিকার মাধ্যমে পুনঃ পুনঃ একই কর্মসূচি (ছয় দফা) প্রচার করতে থাকে। বাংলাভাষী ভূভাগে কখনো আর কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি এত পারম্পর্যের সঙ্গে এমন ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়নি, আর কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি বক্তব্য যাই হোক ভাষা ও রচনারীতির দিক দিয়ে এত সুলিখিতও হয়নি। ছয় দফা কর্মসূচি পূর্ব বাংলার বাঙালি জাতিকে জাগিয়ে তুলতে এক আশ্চর্য টনিকের মতো কাজ করে। ‘জাগো জাগো-বাঙালি জাগো’- এই স্লোগানে যুবসমাজের রক্তে নাচন ধরে। বক্তব্যের কালোপযোগিতা, রচনারীতির আকর্ষণ-শক্তি, নির্ভুল পরিচ্ছন্ন মুদ্রণ, অন্য কোনো দলের আকর্ষণীয় কোনো বক্তব্য না থাকা, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ পুনঃ পুনঃ প্রচার এবং প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে সম্প্রসারিত করা- এসবের ফলেই সৃষ্টি হয় উজ্জীবনী শক্তি। ছয় দফা প্রচারিত হওয়ার পর থেকে আইয়ুব সরকার আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর সীমাহীন নির্যাতন চালায়; শেখ মুজিবসহ নেতা ও কর্মীদের ব্যাপকভাবে কারারুদ্ধ করে; কিন্তু এর ফলে ছয় দফার প্রতি জনসমর্থন দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
বক্তব্য যত ভালোই হোক, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ বারবার প্রচার না করে এবং অভিজ্ঞতার সারসংকলন না করে তার উপযোগিতা ও গ্রহণযোগ্যতা বিচার করার উপায় নেই। শেখ মুজিবের নেতৃত্বে তৎকালীন আওয়ামী লীগ চরম নির্যাতনের মধ্যেও অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে প্রচারকার্য চালিয়েছিল।
ছয় দফা কর্মসূচিতে যাই লেখা থাক না কেন, আইয়ুব সরকার মনে করেছিল এই কর্মসূচি আসলে পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ব বাংলার ভূখণ্ডে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কর্মসূচি। সে জন্যই ছয় দফা আন্দোলনের প্রতি তারা এত মারমুখো হয়েছিল।
পাকিস্তান আন্দোলনের সময়কার এবং পরবর্তী কালের যেসব নেতা পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলের স্বাতন্ত্র্য ও পার্থক্যকে অস্বীকার করে ‘এক ধর্ম এক রাষ্ট্র ও এক জাতি’র যুক্তি দেখিয়ে পূর্ব বাংলাকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার এবং পূর্ব বাংলার সংস্কৃতিকে পাকিস্তানি সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করতো তারাই ‘পাকিস্তানবাদী’।
পাকিস্তানবাদী দৃষ্টিভঙ্গির পরিপন্থী বাঙালি জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির ছয় দফা আন্দোলনের কালে ঘনীভূত রূপ লাভ করে। পাকিস্তানকালে বাঙালি জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, প্রতি বছর ক্রমবর্ধমান আয়োজনের মধ্য দিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন ইত্যাদি ঘটনার ধারায় দ্রুত বিকশিত হয়। তাছাড়া আমাদের সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রশ্নে পাকিস্তানকালে প্রচুর বিতর্ক হয়। সেসব বিতর্কের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারণা সুদৃঢ় ভিত্তি লাভ করে। বাঙালি মুসলমানের মাতৃভাষা বাংলা না উর্দু- এ প্রশ্নে গত শতকের ত্রিশের দশক অবধি বিতর্ক হয়েছে। আশরাফ বা কুলিনদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে বাঙালি মুসলমানের মাতৃভাষা উর্দু, বাংলা নয়।
দেশের শতকরা ৯৯ ভাগের বেশি মুসলমান, যাদের পূর্বপুরুষ স্মরণাতীত কাল থেকে এদেশেরই অধিবাসী, যাদের পূর্বপুরুষ একসময়ে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হয়েছে, যাদের মাতৃভাষা বাংলা তাদেরকে তারা মুসলমান রূপে গণ্য করতে চাইত না। ছয় দফা আন্দোলনের কালে সুগভীর বাঙালি চেতনা যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবেই অসাধারণ বিক্রমে মাথা তোলে। এতে আওয়ামী লীগের ‘জাগো জাগো- বাঙালি জাগো’ স্লোগান বিরাটভাবে ইন্ধন জোগায়। অন্যদিকে পাকিস্তানবাদী শক্তি তাদের প্রমাদ গোণে এবং নিজেদের অস্তিত্বকে তারা বিপন্ন দেখতে পায় এবং দিশেহারা হয়ে অপরিণামদর্শী কার্যক্রম চালায়।
১৯৬৭ সালের শেষে আইয়ুব সরকার পূর্ব বাংলার কয়েকজন সামরিক ও বেসামরিক চাকরিজীবীর ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে এক মামলা খাড়া করে। মাস দুয়েকের মধ্যেই আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানকে এই মামলায় জড়ানো হয় এবং তাঁকে মামলার এক নম্বর আসামি করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তাঁরা পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ব বাংলা নামে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন।
১৯৬৮ সালের শুরুতে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’র খবর প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনগণের সচেতনতা শত গুণ বৃদ্ধি পায়। এ মামলার প্রতিক্রিয়ায় ‘পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ব বাংলার ভূখণ্ডে স্বতন্ত্র স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে’- এ আকাঙ্ক্ষা অনেকের মনে, বিশেষ করে ছাত্র-তরুণদের অনেকের মনে প্রবল সেন্টিমেন্ট রূপে দেখা দেয়। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার গণচেতনা সৃষ্টিতে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’র গুরুত্ব অন্য যে কোনো রাজনৈতিক ঘটনা থেকে বেশি বই কম নয়। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি তৈরি হয়েছে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’র ঘটনাবলির দ্বারা।
১৯৬৭ সালের দিকে পশ্চিম বাংলার বিধানসভায় পশ্চিম বাংলা প্রদেশের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশে করার বিল পাস করা হয়। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী ও আবদুল হক প্রমুখ লেখক ‘সমকাল’ পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখে পূর্ব পাকিস্তানের নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ’ করার দাবি উত্থাপন করেন। তাঁদের বক্তব্য তখন দেশের ভাবুক ও কর্মীদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময়ে ‘জেগেছে জেগেছে- বাঙালি জেগেছে’, ‘বীর বাঙালি জেগেছে- রক্তসূর্য উঠেছে’, ‘খতম করো খতম খতম করো- আইয়ুবশাহী খতম করো’- প্রভৃতি স্লোগান আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রবলভাবে তোলা হয়। এর পাশাপাশি পিকিংপন্থীদের পক্ষ থেকে ‘মুক্তির একই পথ- সশস্ত্র বিপ্লব’, ‘মুক্তি যদি পেতে চাও- হাতিয়ার তুলে নাও’, ‘শ্রমিক কৃষক অস্ত্র ধর- জনগণতন্ত্র কায়েম করো’, প্রভৃতি স্লোগান তোলা হয় এবং প্রচারপত্র বিলি করা হয়।
অভ্যুত্থানের কালে ছাত্ররা ও তরুণ সংগ্রামীরা সুন্দর সুন্দর নতুন স্লোগান উদ্ভাবন করে। এসব স্লোগানের সবই হয় বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশের লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে; না হয় সমাজতন্ত্র অভিমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা ও জীবন-পদ্ধতির লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে। পাকিস্তানবাদী মহল গণঅভ্যুত্থানের স্রোতে ভেসে যায়; তাদের শক্তির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে স্লোগান তোলা হয়, ‘পাকিস্তানের উৎস কি - লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ‘, ‘বাঁচলে গাজী-মরলে শহীদ’ ইত্যাদি; কিন্তু এসব স্লোগানের পেছনে জনসমর্থন ছিল না বললেই চলে।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ফলে আইয়ুব সরকারের উৎখাত ঘটে, দেশে পুনরায় ১৯৬৯-এর ২৫ মার্চে মার্শাল ল’ জারি হয় এবং পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধান সেনাপতি জেনারেল ইয়াহিয়া খান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও প্রেসিডেন্ট হয়ে ক্ষমতায় আসীন হয়। ১৯৬৯ সালের ২৮ নভেম্বর এক বেতার ভাষণে জেনারেল ইয়াহিয়া পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট বাতিল করে চার প্রদেশ প্রবর্তনের ঘোষণা দেয় এবং ঘোষণাকে অবিলম্বে কার্যকর করার তারিখও প্রদান করে। পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে ইয়াহিয়া সম্পূর্ণ নীরব থাকে। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় পূর্ব পাকিস্তানকে ‘বাংলাদেশ’ নামে অভিহিত করার দাবি তোলা হয়। শেখ মুজিব তখন পূর্ব পাকিস্তানকে বাংলাদেশ নামে অভিহিত করে বলেন যে, ভবিষ্যতে নতুন শাসনতন্ত্র প্রণীত হলে এই অঞ্চল বাংলাদেশ নামেই অভিহিত হবে।
আন্দোলনের এই পর্বের গোড়াতেই ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের পরে ছাত্রলীগের সম্মেলন থেকে সুচিন্তিতভাবে ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চূড়ান্ত অভিব্যক্তি ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উত্থাপিত হয়। তখনই প্রথম এই স্লোগানের শক্তি ও তাৎপর্য সকলের উপলব্ধিতে আসে এবং তখন থেকে ধারাবাহিকভাবে এই স্লোগান চলতে থাকে। এই স্লোগানের পাশাপাশি ছাত্রলীগের মধ্যে থেকেই তখন ‘তোমার দেশ আমার দেশ- বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ এবং ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা তোমার আমার ঠিকানা’ প্রভৃতি আরও কয়েকটি জাতীয়তাবাদী স্লোগান তোলা হয়। শেখ মুজিবও তখন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে আরম্ভ করেন। ক্রমে তিনি ‘পদ্মা-মেঘনা-যমুনা- তোমার আমার ঠিকানা’ এবং ‘তোমার দেশ আমার দেশ- বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ এ দুটি স্লোগানও ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের সঙ্গে যোগ করে নেন।
১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের উদ্দেশে যে বিবৃতি দেন, তার সমাপ্তিতে তিনি ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটা যোগ করেছিলেন। তৎকালীন জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের পর, ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ যে শপথ দিবস উদযাপন করে তাতে রমনা রেসকোর্স ময়দানে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সদস্যদের যে শপথবাণী পাঠ করান, তার শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটা ছিল। রমনা রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চের বক্তৃতা তিনি শেষ করেন কেবল ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিয়ে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান বাংলাদেশের মানুষকে জাতীয়তাবাদী চেতনায় বিরাটভাবে উদ্বুদ্ধ করে। ওই পর্বে তৎকালীন ‘পাকিস্তান অবজারভার’ পত্রিকায় এই স্লোগানের বিরুদ্ধে অনেক চিঠিপত্র ও মন্তব্য প্রকাশিত হয়। জামায়াতে ইসলামী ও পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি) প্রভৃতি দল নির্বাচনকালে প্রচার চালাতে থাকে যে এই স্লোগান ‘জয় হিন্দ’ স্লোগানের দাঁড়া প্ররোচিত এবং যারা এই স্লোগান উত্থাপন করেছে তারা ভারতের দালাল। কিন্তু জনগণ তখন জয় বাংলা স্লোগানকে আরো গভীর আবেগের সঙ্গে গ্রহণ করে এবং নির্বাচনে এই স্লোগানের প্রতি সমর্থন দান করে।
দলীয় ভিন্নতার কারণে যারা সেদিন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান গ্রহণ করেনি হয়তো তাদেরও অনেকের অন্তরে এই স্লোগানের প্রতি সমর্থন দানের আকুতি সেদিন জেগেছিল। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ভেসে আসা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান এবং ‘জয় বাংলা জয় বাংলার জয়’ গানটি সাড়ে সাত কোটি বাঙালির প্রাণে বিজয়ের আশা ও দৃঢ় ঐক্যবোধ সঞ্জীবিত রেখেছিল। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারাও এই স্লোগান থেকে সঞ্জীবনী শক্তি লাভ করেছেন।
আমাদের অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে এবং সবসময় মনে রাখতে হবে যে, ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের মর্মে যে শক্তি নিহিত ছিল এবং এই স্লোগানের অনুষঙ্গে সেদিন যে চেতনা জেগেছিল তার উপাদানসমূহ এই ভূভাগের জনসাধারণের অস্তিত্বে অন্তর্নিহিত রয়েছে।