বিশ্বসাহিত্যে আফ্রিকার জয়জয়কারের বছর

মহিউদ্দীন মোহাম্মদ

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২২, ০১:২৭ পিএম

আবদুল রাজাক গুর্নাহ, বুবাকার বরিস ও ডেভিড ডিউপ

আবদুল রাজাক গুর্নাহ, বুবাকার বরিস ও ডেভিড ডিউপ

২০২১ সালে বা চলতি বছর সাহিত্যে বিশ্বের সেরা পুরস্কারগুলো পকেটে পুরেছে আফ্রিকা। কী নোবেল, কী বুকার, কী গনকোর্ট সবটাই তারা জয় করেছে। প্রকাশনার একটি প্রধানশক্তি হিসেবে এবার মহাদেশটি আবির্ভূত হয়েছে। 

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের বিখ্যাত সোরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে আফ্রিকান সাহিত্য পড়ান জেভিয়ার গার্নিয়ার। তিনি মন্তব্য করেছেন- ইউরোপীয় সাহিত্যজগতে আফ্রিকার প্রতি আগ্রহের পুনর্জাগরণ শুরু হয়েছে। আসলে বিষয়টি তাই-ই। চলতি বছর পুরস্কার অর্জনের মধ্য দিয়ে আফ্রিকার সাহিত্য সবার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

এ বছর সাহিত্যে নোবেল জিতেছেন তাঞ্জানিয়ার লেখক আবদুল রাজাক গুর্নাহ। তার জন্ম ২০ ডিসেম্বর ১৯৪৮। বর্তমান বয়স ৭৩। গুর্নাহ দশটি উপন্যাস ও বেশ কয়েকটি ছোটগল্প প্রকাশ করেছেন। তিনি ২১ বছর বয়সে লিখতে শুরু করেন। সোয়াহিলি তার প্রথম ভাষা হলেও, ইংরেজি এখন তার সাহিত্যের হাতিয়ার। আরবি, ফার্সি কবিতা, বিশেষ করে দ্য অ্যারাবিয়ান নাইটস (আলিফ লায়লা ওয়া লায়লা) তার লেখার প্রাথমিক উৎস। এ ছাড়া কোরআনের সুরা দ্বারাও প্রভাবিত। তার বিখ্যাত কয়েকটি উপন্যাস- মেমরি অব ডিপারচার (Memory of Departure), পিলগ্রিমস ওয়ে (Pilgrims Way), দৈতে (Dottie),প্যারাডাইস (Paradise), বাই দ্য সি (By the Sea), আফটার লাইভস (Afterlives) ইত্যাদি। 

নভেম্বরে ব্রিটেনের মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার বুকার জিতেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার লেখক ডেমন গ্যালগুট। তার বয়স বর্তমানে ৫৮। ১৯৬৩ সালের ১২ নভেম্বর প্রিটোরিয়ায় তার জন্ম। ১৭ বছর বয়সে প্রথম তিনি উপন্যাস লেখেন- দ্য প্রমিজ (The Promise) উপন্যাসের জন্য তাকে বুকার পুরস্কার দেওয়া হয়।

এ বছর ৩১ বছর বয়সী একজন সেনেগালিজ লেখক মোহাম্মদ এমবুগার সার ফ্রান্সের শীর্ষ সাহিত্য পুরুস্কার গনকোর্ট ছিনিয়ে নিয়েছেন। এম বুগার সার সাব-সাহারান প্রথম লেখক যিনি এই পুরস্কার জয় করেছেন। দ্য মোস্ট সিক্রেট মেমরি অব মেন (The Most Secret Memory of Men) উপন্যাসটির জন্য এই পুরস্কারে তাকে ভূষিত করা হয়। সেনেগালের রাজধানী ডাকারে ১৯৯০ সালের ২০ জুন তার জন্ম।

শুধু কি তাই! সেনেগালের আরেকজন লেখক এ বছরের মাঝামাঝিতে ইন্টারন্যাশনাল বুকার জিতেছেন। এই লেখকের নাম ডেভিড ডিউপ। অবশ্য ডিউপের জন্ম প্যারিসে। এখানে তিনি বড় হয়েছেন। যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ড থেকে প্রকাশিত অন্যভাষায় লেখা ইংরেজিতে অনূদিত বই ইন্টারন্যাশনাল বুকারের জন্য আবেদন করতে পারে। 

ডেভিড ডিউপ একজন ঔপন্যাসিক ও শিক্ষাবিদ। তার জন্ম ১৯৬৬ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি। সেই অর্থে তার বয়স এখন ৫৫ বছর। তিনি অষ্টাদশ শতকের ফরাসি ও ফ্রাঙ্কোফোন আফ্রিকান সাহিত্যে বিশেষজ্ঞ। তাকে যে বইটির জন্য এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে তা হলো- অ্যাট নাইট অল ব্লাড ইজ ব্লাক (At Night All Blood Is Black). এটা ফরাসি থেকে অনুবাদ করেন আনা মস্কোভাকিস। এই অনুবাদক একজন কবিও বটে। আর একই দেশের বুবাকার বরিস ডিউপ শিশু-কিশোর সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন নিওস্ট্যাড আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কার। ১৯৪৬ সালের ২৮ অক্টোবর ডিউফের জন্ম। তার বয়স ৭৫।

পর্তুগালের ক্যামোয়েস সাহিত্য পুরস্কার জিতেছেন মোজাম্বিক লেখিকা পলিনা চিজানে। পলিনার জন্ম ১৯৫৫ সালের ৪ জুন। বর্তমান বয়স ৬৬ বছর।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাহিত্য পর্যালোচনা, উৎসব ও আঞ্চলিক পুরস্কারের সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশনা সংস্থাগুলো আফ্রিকার দিকে ঝুকে পড়েছে। এতে প্রতিফলিত হয় কালো কালো মানুষের দেশ আফ্রিকা সত্যিই জেগে উঠেছে। 

যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ে আফ্রিকান সাহিত্যের অধ্যাপক মধু কৃষ্ণান। তিনি বলেন- আফ্রিকান লেখকদের একটা পাঠকশ্রেণি রয়েছে। এটা খুব করে অতিমারির সময় শনাক্ত করা গেছে। আমরা যখন অনলাইন দুনিয়ায় সাহিত্যের খোঁজ খবর রাখতাম তখন এটা ভালোভাবেই টের পেয়েছি। যেটাতে অস্বীকারের জো নেই। অনেক কিছুরই সন্ধান পাই না আমরা। এই ইউরোপ থেকে ছোট্ট একটা পৃথিবীকে দেখতে পাই মাত্র।

আফ্রিকার সাহিত্য এখন অনেক বেশি বৈচিত্র্যময়। ১৯৫০ ও ১৯৬০ এর দশকে আফ্রিকার সাহিত্যের প্রতি আকর্ষণ ছিল অনেকের। যদিও তখনকার সাহিত্য আবদ্ধ ছিল রাজনীতি আর উপনিবেশীকরণের সঙ্গে। সেনেগালের কবি ও রাষ্ট্রপতি লিওপোল্ড সেডর সেঙ্ঘরের মতো ব্যক্তিত্বের দ্বারা মূর্ত হয়েছে। আজ আর সেই বাস্তবতা নেই। এখন থিম বা বিষয়গুলো অনেক বিস্তৃত। বাইরের লোকেরা তাদের কীভাবে দেখে-তা নিয়ে কম উদ্বিগ্ন তারা। এখন আর তাদের সাহিত্য পশ্চিমা দর্শক-পাঠকরা কীভাবে দেখবে সেরকম কোনো চিন্তার কাছে আবদ্ধ নেই।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh