যেভাবে রাজমিস্ত্রি থেকে সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২২, ০৩:৪৪ পিএম

কিশোর গ্যাং

কিশোর গ্যাং

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বিভিন্ন সময় ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে ‘কবির বাহিনীর’ মূল হোতা কবিরসহ আটজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ৪ রাউন্ড তাজা গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন, ছোরা, চাকু, স্টিলের গিয়ার হোল্ডিং ছুরি, লোহার পাইপ, ৪টি চাপাতি, ৪১৭ পিস ইয়াবা ও ৭টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- কবির হোসেন ওরফে জলদস্যু কবির ওরফে গাংচিল কবির (৪৬), রুবেল (২৭), আমির হোসেন (২১), মামুন (২৫), রিয়াজ (২০), মেহেদী হাসান (২৫), মামুন ওরফে পেটকাটা মামুন (২৭) ও বিল্লাল (২৪)।  

র‌্যাব জানায়, চক্রটি ছিনতাই-ডাকাতি থেকে শুরু করে তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা নদীতে মালবাহী নৌকা ও ট্রলারে ডাকাতি করত। রাজমিস্ত্রির জোগালি হিসেবে কাজ শুরু করলেও পরবর্তীতে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে কবির। এর আগে গত ৩০ নভেম্বর রাতে মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিং এলাকায় রিকশা-অটোরিকশাযাত্রীদের কাছ থেকে ব্যাগসহ মালামাল ছিনিয়ে নেয় চক্রের কয়েক সদস্য। ঘটনার প্রায় এক মাস পর গত বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। 

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, চক্রের মূল হোতা কবির ১৯৯০ সালে পরিবারসহ বরগুনা থেকে ঢাকায় আসে। প্রথমে বাবার সাথে রাজমিস্ত্রির জোগালি হিসেবে কাজ শুরু করলেও পরবর্তীতে গাড়ি চালনা ও বিভিন্ন হাউজিং প্রজেক্টে চাকরি করে। ২০১০ সালে ‘গাংচিল’ নামে একটি সন্ত্রাসী বাহিনীতে যোগ দিয়ে অপরাধ জগতে হাতেখড়ি ঘটে। র‌্যাবের অভিযানে গাংচিল বাহিনীর অস্তিত্ব সংকটে পড়লে এরা ২০১৬ সাল থেকে ‘কবির বাহিনী’ নামে দুর্ধর্ষ বাহিনী গড়ে তোলে এবং বখে যাওয়া তরুণদের নিজের বাহিনীতে যুক্ত করে নানা ধরনের অপরাধ শুরু করে। মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, বসিলা, চাঁদ উদ্যান ও এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা করত। একসময় তার অপরাধের কীর্তি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে অপরাধ জগতে সে ‘জলদস্যু’ খেতাব পায়। 

খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৩ নভেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ‘ভাইব্বা ল কিং’ নামের একটি কিশোর গ্যাংকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ গ্যাংয়ের সদস্যদের সম্পর্কে জানা যায়। 

এছাড়া গত ৩০ নভেম্বর রাতে মোহাম্মদপুরে নবোদয় হাউজিং এলাকায় এক সিএনজি অটোরিকশাযাত্রীর কাছ থেকে ব্যাগসহ মালামাল ছিনিয়ে নেয় চক্রটি। অভিযোগ পাওয়ার পর র‌্যাব ওই এলাকার একটি সিসি ক্যামেরা ফুটেজ উদ্ধার করে চক্রের তিন সদস্যকে শনাক্ত করে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, এক যুবক চাপাতি হাতে নিয়ে একটি রিকশা থামায়। 

এ সময় আরো দুই যুবক চাপাতি হাতে নিয়ে রিকশার দুই পাশে দাঁড়ানোর পর আরেকটি রিকশা ও একটি সিএনজি অটোরিকশা ঘটনাস্থলে আসে। ওই সময় তারা রিকশা দুটি ও অটোরিকশার যাত্রীর কাছে থেকে ব্যাগ ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে চলে যায়। ওই তিন যুবক হলো- বিল্লাল, আমির ও পেটকাটা মামুন। 

তিনি বলেন, গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা কবির বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। এই দলের সদস্যরা সংঘবদ্ধ অপরাধী। দলের মূল হোতা গ্রেফতার জলদস্যু কবির ওরফে গাংচিল কবির। এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ২০/২২ জন। তারা দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে হত্যা সন্ত্রাসী, মাদক কেনাবেচা, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, কবির ২০১৮ সালে প্রথম গ্রেফতার হয়। হত্যা, গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, চাঁদাবাজি, মারপিটসহ সর্বমোট ২৪টি মামলার আসামি। গ্রেফতার অপর সদস্যরা ক্ষুদ্র ব্যবসা, গাড়ি চালনা, দিনমজুরসহ বিভিন্ন পেশার আড়ালে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। গ্রেফতার রুবেল ওরফে পানি রুবেলের নামে ৭টি, মামুন ওরফে ড্যান্ডি মামুনের নামে ৫টি, পেটকাটা মামুনের নামে ৪টি, আমির হোসেনের নামে ৩টিসহ অবশিষ্ট সদস্যদের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। কবিরের বিরুদ্ধে গ্যাং রেপের একটি মামলাও চলমান রয়েছে। ওই মামলায় সে জেলও খেটেছে। 

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, কবির বাহিনীর পেছনে সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। গ্রুপের হোতা কবির নিজেই একটি চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। চক্রে ২০-২৫ জনের মতো সদস্য রয়েছে। আর চক্রের সদস্যদের অনেকে গ্যাং কালচারে জড়িত। যখন যেখানে প্রয়োজন হয়েছে সেখানে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে কোনো গডফাদার বা রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া ছিলো কি না সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া চক্রের অন্যদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh