মির্জা শহিদুল, সিরাজগঞ্জ
প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২২, ০৩:৫১ পিএম
মুখরোচক খাবার ঝুড়ি তৈরি করে ভাগ্য পরিবর্তন করছেন শতাধিক নারী
যমুনার ভাঙনে নিঃস্ব সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের দুর্গম হাটপাঁচিল গ্রামের শতাধিক উদ্বাস্ত ছিন্নমূল নারী আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নানা পালা-পার্বণে, উৎসবে, গ্রামীণ মেলায় বহুল প্রচলিত মুখরোচক খাবার ঝুড়ি তৈরি করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করছেন। ছিন্নমূল, আত্মপ্রত্যয়ী কর্মঠ এসব নারী পর নির্ভরশীলতার নাগপাশ ডিঙিয়ে স্ব-নির্ভর ও স্বাবলম্বী হয়েছেন।
হাটপাঁচিল গ্রামের বয়োবৃদ্ধা মইতন, সুফিয়া, মমতাসহ বেশ কয়েকজন ঝুড়ি প্রস্তুতকারক নারী জানান, তাদের বাড়ি-ঘর, জমি-জমা, সহায়-সম্বল তিন থেকে চারবার যমুনার কড়াল গ্রাসে বিলীন হওয়ায় কালের বিবর্তনে তারা উদ্বাস্ত ও দুস্থে পরিণত হয়েছিল। যমুনার তীরবর্তী এ গ্রামটি বালুর চরাঞ্চল হওয়ায় এখানে কোনো ফসলের আবাদও হয় না। পাশের গ্রামগুলোতেও জীবিকা নির্বাহের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো কাজও সচরাচার পাওয়া যায় না। যমুনার ভাঙনে তাদের মতো কর্মহীন নারীর দিন কাটছিল অতিকষ্টে, অর্ধাহারে, অনাহারে। দিনে দিনে যমুনায় সব হারিয়ে একে এক তারা পথের ভিখারীতে পরিণত হয়েছিল। এমতাবস্থায় নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের যোগান দেওয়াটাই তাদের জন্য হয়ে উঠেছিল অন্তরায় ও কষ্টসাধ্য।
জীবিকার তাগিদে তারা ঝুড়ি তৈরির ও বিক্রির কাজ বেছে নেয়। এরপরেই তাদের জীবনে দিনবদলের পালা শুরু হয়। ঝুঁড়ি বিক্রি করে তারা লাভের মুখ দেখতে শুরু করেন। এরপর থেকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি তাদের। এভাবেই হাটপাঁচিল গ্রামের শতাধিক নারী ঝুঁড়ি তৈরির কাজ করে বর্তমানে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছেন। আয় করে পরিবারের জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি অনেকেই তাদের সন্তান-সন্তনাদিকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন, শিক্ষিত করে তুলতে। আবার অনেকেই ঝুঁড়ি তৈরির পাশাপাশি বাড়িতে গরু-বাছুর, ভেড়া-ছাগল প্রতিপালন করে অধিক মুনাফা আয় করছেন।
এ গ্রামের ঝুঁড়ি প্রস্তুতকারক একজন জানান, শাহজাদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের তৈরি ঝুঁড়ির বেশ চাহিদা থাকায় বিক্রিতে কোনো বেগ পোহাতে হচ্ছে না। ঝুঁড়ি প্রস্তুতের প্রধান কাঁচামাল আলা চালের দাম বাজারে একটু বৃদ্ধি পাওয়ায় অতীতের তুলনায় বর্তমানে লাভ একটু কম হচ্ছে।
তাদের ভাষ্যমতে, ঝুঁড়ি বিক্রির নিট মুনাফা হিসেবে যা থাকছে তা দিয়ে গ্রামের শতাধিক দুস্থ নারী- তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে বর্তমানে বেশ ভালোভাবেই দিন অতিবাহিত করছেন এবং নিজেদের ভাগ্যকে সুপ্রসন্ন করছেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি অবসর সময়ে কোমলমতিরাও ঝুঁড়ি তৈরির কাজে বড়দের সহযোগিতা করছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো.শামসুজ্জোহা জানান, এক সময়ে এ এলাকার মানুষরা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল। আজ তারা পেশা পরিবর্তন করে এই ঝুঁড়ি তৈরিতে সংসার চালাচ্ছেন। এক্ষেত্রে সরকারি ভাবে যেসব-সুযোগ-সুবিধা আছে, তা থেকে সহজ শর্তে তাদের পুঁজির যোগান দিতে পারি।