নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:৪০ এএম
পদ্মা ব্যাংক
বিদেশি বিনিয়োগ পেতে পদ্মা ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনে লোকসানের তথ্য গোপন করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মতি দেওয়ার যে খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা নিয়ে উদ্বেগ দেখিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
এমন সুবিধাকে অনৈতিক ও প্রতারণামূলক আখ্যা দিয়েছে সংস্থাটি।
তারা বলছে, এটি সামনের দিনে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশ্বাসযোগ্যতার সমস্যাকে প্রকটতর করবে। পাশাপাশি বিদেশে সুনাম ক্ষুণ্ণ করার ঝুঁকি তৈরি করবে।
গতকাল শনিবার (৮ জানুয়ারি) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানায় টিআইবি।
লোকসানে ডুবে থাকা পদ্মা ব্যাংকের নাম ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারির আগে ছিল ফারমার্স ব্যাংক। ২০১৩ সালে ব্যাংকটি চালুর পর থেকে চেয়ারম্যান ছিলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীর। ঋণ কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়মে ধুঁকতে থাকা ব্যাংকটিতে ২০১৬ সালে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। চাপের মুখে পরের বছর ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন মহীউদ্দীন খান।
টিআইবি বলেছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী- পদ্মা ব্যাংকের জন্য ৭০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ আনতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডেলমর্গানের শর্তানুযায়ী ব্যাংকটির আর্থিক লোকসানের তথ্য বিবরণী থেকে গোপন রেখে পৃথক হিসাব তৈরির ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্মতি দিয়েছে। পরবর্তী ১০ বছরে যা ব্যাংকটির মুনাফা থেকে সমন্বয় করার কথা।
দেশের ব্যাংকিং খাতে এমন অনৈতিক উদ্যোগ নজিরবিহীন মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিবচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রতিষ্ঠার কিছু সময়ের মধ্যেই উদ্যোক্তা পরিচালকদের ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতিতে খেলাপি ঋণে ডুবতে থাকা বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংক বাঁচাতে নাম পরিবর্তন (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক), সরকারি চার ব্যাংক ও আইসিবির ৭০০ কোটি টাকার বেশি মূলধন যোগান, বিধিবদ্ধ জমা বা এসএলআর সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা থেকে ছাড়সহ বেশকিছু নীতি সহায়তা দিয়ে আসছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এসব ছাড়েও ব্যাংকটির ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে দিনকে দিন।
তিনি বলেন, এমন অবস্থায় লোকসানের তথ্য বাদ দিয়ে ব্যাংকটির আর্থিক বিবরণী পরিষ্কার দেখানোর চেষ্টা হিসাববিজ্ঞানের দিক থেকে শুধু অনৈতিকই নয় বরং প্রতারণামূলকও বটে। এটি ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের নামে লুণ্ঠনতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতার নামান্তর।
ফারমার্স ব্যাংককে অবসায়ন না করে পদ্মা ব্যাংক নামে বাঁচিয়ে রাখার ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ কার বা কাদের স্বার্থে সরকার বয়ে চলছে সেই প্রশ্ন তুলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।
তিনি বলেন, আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকও কেন ব্যাংকটি বাঁচাবার নামে নজিরবিহীন সব উদাহরণ তৈরির দায় নিচ্ছে তা পরিষ্কার নয়। তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হচ্ছে, আর্থিক বিবরণী কৃত্রিমভাবে ভালো দেখালেই প্রতিশ্রুত বিদেশি বিনিয়োগ যোগাড় করা সম্ভব হবে তার গ্যারান্টি কি?
টিআইবি আশা করে, আর্থিক খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক তার এমন সিদ্ধান্ত পুনর্মূল্যায়ন করবে এবং বাস্তবতা বিবেচনায় আইন ও নিয়মকানুন মেনে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন’ নীতির বাস্তবায়নে উদাহরণ তৈরি করবে।