আইয়ুব গেটের নামফলক গুড়িয়ে রক্ত দিয়ে লেখা হয় আসাদ গেট

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২২, ১০:২১ এএম | আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২২, ১০:২৩ এএম

মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান

মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান

শহীদ আসাদ দিবস আজ ২০ জানুয়ারি। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এ দিনটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন।

১৯৬৯ সালের এদিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ছাত্রনেতা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। শহীদ আসাদের এই আত্মত্যাগ চলমান আন্দোলনকে বেগবান করে। 

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। 

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ আসাদের আত্মত্যাগ আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতার ইতিহাসে একটি অনন্য মাইলফলক। গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে শহীদ আসাদের এ অসামান্য অবদান দেশের গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে শহীদ আসাদসহ বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে আত্মোৎসর্গকারী সব শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। 

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে আত্মত্যাগকারী শহীদ আসাদ এদেশের গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার আত্মত্যাগ সব সময় আমাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে প্রেরণা যোগাবে। 

১৯৬৯ সালে ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটির সমাবেশ থেকে ১১ দফা দাবিতে এবং ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশ-ইপিআর বাহিনীর বর্বর নির্যাতনের প্রতিবাদে ২০ জানুয়ারি পূর্ণ দিবস হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এদিন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট ডাকা হয়। 

গভর্নর মোনায়েম খাঁন ওই দিন ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেন। ১১ দফা দাবিতে প্রায় ১০ হাজার ছাত্রের বিশাল মিছিল ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। আসাদসহ কিছু ছাত্র ছত্রভঙ্গ মিছিলটি আবার সংগঠিত করে ঢাকা হলের (বর্তমান শহীদুল্লাহ হল) পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময়ই পুলিশের গুলিতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনের সড়কে আসাদ শহীদ হন।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন) গ্রুপ এর নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল শাখার সভাপতি আসাদের মৃত্যুতে আন্দোলনের অগ্নিশিখা জ্বলে উঠে। শহীদ আসাদের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে পরদিন রাজধানী ঢাকায় বের হয় স্মরণকালের বৃহত্তম শোক মিছিল। বিক্ষোভের নগরীতে পরিণত হয় প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা। 

আসাদের রক্ত আর বিক্ষুদ্ধ জনতা সেই সময়ই ছুটে যান মোহাম্মদপুর তৎকালীন আইয়ুব গেটের সামনে এবং প্রতিবাদের ক্ষুদ্ধ প্রতীক হিসাবে আইয়ুব গেটের নামফলক গুড়িয়ে দিয়ে রক্ত দিয়েই লেখেন আসাদ গেট। সেই থেকে মোহাম্মদপুর আসাদ গেটের জন্ম।

আসাদ শহীদ হওয়ার পর ২৪ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের ছয় দফা ও ছাত্রদের ১১ দফার ভিত্তিতে সর্বস্তরের মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ার নামে ঢাকাসহ সারা বাংলার রাজপথে। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে পতন ঘটে আইয়ুব খানের। এরপরই স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় বসে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন।

ওই সময় আসাদের শার্ট হাতে নিয়ে জনতার দীর্ঘ মিছিল দেখে কবি শামসুর রাহমানও লেখেন তার বিখ্যাত কবিতা ‘আসাদের শার্ট’। ‘গুচ্ছ গুচ্ছ রক্ত কবরীর মতো কিংবা সূর্যোস্তের জ্বলন্ত মেঘের মতো আসাদের শার্ট-উড়ছে হাওয়ায়-নীলিমায়।

দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh