তারিফ হোসেন
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২২, ০২:৩৩ পিএম
প্রতীকী ছবি
জীব-জড় নির্বিশেষে প্রতিটি সত্তার আচরণ তার চরণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। চরণ আবার চর-যোগে নির্মিত। মূলত এই চর অর্থের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে যে কোনো সত্তার আচরণ বোধগম্য হতে পারে। চর বস্তুত গতি নির্দেশক; মহাজগতের প্রতিটি সত্তা গতিময় এবং একই সঙ্গে স্থিতিময়। গতি-স্থিতির এই দ্বন্দ্ব অর্থাৎ মিলন সংঘর্ষ না বুঝলে আমাদের আচরণ একপেশে হতে বাধ্য।
প্রতিটি বস্তুর চরা বা চলার মাধ্যমে তার চরিত্র সৃষ্টি হয়। তা হলে বোঝা যাচ্ছে প্রত্যেকেই চরিত্রময়। আমরা বলি অমুকের চরিত্র খারাপ তার মানে সে যে বৃত্তে চরে তার ফলাফল অশুভ বার্তা বয়ে আনে। একজন মানুষের সঙ্গ-প্রসঙ্গ-অনুষঙ্গ যদি অসৎ-সঙ্গের সঙ্ঘে চলে, তবে তার চরিত্রে দূষণ ঘটে। সে দুশ্চরিত্রের অধিকারী হয়। ওই খারাপ বৃত্তে আবর্তিত হওয়ার জন্য তাকে দুর্বৃত্তও বলা হয়ে থাকে। একইভাবে যার চরিত্র ভালো, বুঝতে হবে তার চলা ও ফেরা অর্থাৎ চলাফেরা সৎসঙ্গের বৃত্তে। তার প্রতিক্ষণের সঙ্গ হয় প্রসঙ্গ; অপ্রসঙ্গ সেখানে আসতে পারে না।
জীবের সদাচারে উন্নীত হতে গেলে ‘সেই-চরণ’-কে ধরতে, ভজতে ও সাধন করতে হয়। পূর্বেই বলেছি চরণ গতিসূচক, গতি আবার জ্ঞানবাচক। প্রতিটি একক মন থেকে সৃষ্টি হয় মত। মতের গতিই হলো মতিগতি। লালন সাঁইজি বলেন- ‘ভজ মানুষের চরণ দুটি, নিত্যবস্তু পাবে খাঁটি’। এখানে পরমমানুষের গতিতে নিজেকে অংশী করা অর্থাৎ তার গতিতে মিশে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ফলে জীবে সৎ-চেতনার যে বসতি নির্মিত হয় তা-ই হলো নিত্যবস্তু। দেহের দুটি চরণ দিয়ে স্রেফ সীমিত ভূগোলে খানিক পদচারণা করা যেতে পারে; তাতে সন্দেহ, সংশয়, দ্বিধার বৃত্ত থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। অন্যদিকে মনের চরণে যদি পরমমনের চরণ যোগ করা যায় তাহলে যে আচরণ তৈরি হয়, তাতে সর্বভূতে বিচরণ করা সম্ভব হয়; আর তখনই সৃষ্টি হয় দয়া অর্থাৎ মায়া বর্জিত আচরণ।