সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যার স্বপ্নের বাগান

প্রান্ত রনি, রাঙামাটি

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২২, ০৩:২০ পিএম

পাহাড়ি ঢালু জমিতে মিশ্র ফলের বাগান

পাহাড়ি ঢালু জমিতে মিশ্র ফলের বাগান

কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ২০১৬ সালে বাড়ির আঙিনায় ১০ একর পাহাড়ি ঢালু জমিতে মিশ্র ফলের বাগান তৈরির কাজ শুরু করেন কৃষক সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা। ক্রমান্বয়ে সৃজিত বাগানে প্রায় ২০ প্রজাতির ফলদ বৃক্ষ রোপণ করেছেন তিনি। পাশাপাশি বিলানী ধনিয়া পাতাসহ অন্যান্য সবুজ সবজি বাগানও গড়ে তুলেছেন। চার বছরের মাথায় বছরের ২০২০ সাল থেকেই সৃজিত বাগান থেকে ফল উৎপাদন শুরু করেন সুশান্ত। বর্তমানে তিনি এলাকায় একজন সফল চাষি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। কৃষক সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যার এমন উদ্যোগকে অনুকরণীয় হিসেবে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন স্থানীয়রা।

রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড সোনারাম কার্বারি পাড়ায় চারদিকে হ্রদবেষ্টিত একটি পাহাড়ে বসতঘর তুলে পরিবারসহ বসবাস করে আসছেন সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা। 

সরেজমিনে তার মিশ্র ফল বাগান পরিদর্শন করে দেখা গেছে, উঁচু পাহাড়ে বসতঘর তৈরি গড়ে তুলেছেন সুশান্ত। পুরো বাড়ির আঙিনার চারপাশে বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ রয়েছে। বর্তমানে তার মিশ্র ফল বাগানে বরইয়ের (কুল) ফল এসেছে। আগামী ২০-২৫ দিনের মধ্যে কুলগুলো বিক্রির উপযোগী হবে। এ ছাড়া ‘রেড লেডি’ জাতের পেঁপেও বর্তমানে বিক্রয় উপযোগী হয়েছে। 

কৃষক সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা জানান, ২০১৬ সালে আমি বাড়ির আঙিনায় মিশ্র ফলের বাগান শুরু করি। চার বছরের মাথায় বিভিন্ন জাতের ফলন পেতে শুরু করি। আমার বাগানে ২০ প্রজাতির মিশ্র ফল গাছ রয়েছে। বর্তমানে বরই এর ফলন এসেছে। আমার বাগানে বল সুন্দরী, কাশমেরী, দেশি আপেলকুল ও দেশি মিষ্টি কুল- এই চার জাতের বরই রয়েছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যে এগুলো বিক্রয় উপযোগী হবে। এ ছাড়া মৌসুমি ফল- আম, কাঁঠাল, লটকন, লিচু, আমলকী, পেঁপে, তেঁতুল, মাল্টা, লেবু, বেল, নারিকেল, সুপারি, রাম্বুটানসহ অন্যান্য বারোমাসি ফল রয়েছে। এ ছাড়া বিলাতি ধনিয়াসহ বাগানে উৎপাদিত ফল, সবজিসমূহ বাৎসরিক ১০ লাখ টাকার মতো বিক্রয় করে থাকি। ওষুধ, আনুষঙ্গিক খরচ ও শ্রমিকের মজুরি মেটানোর পরও প্রায় ৩-৪ লাখ টাকার মতো আয় থাকে। তা দিয়েই আমার সংসার খরচ চলে যায়।

সুশান্ত আরও জানায়, মৌসুমি ফল এলে বাগানে ১০-১২ জন শ্রমিক কাজ করে থাকেন। তখন তাদের (শ্রমিক) দিন হিসেবে মজুরি দিতে হয়। আমি বাগান গড়ে তোলার পর স্থানীয় অনেক বেকার যুবক কাজের সন্ধান পেয়েছেন। পাশাপাশি একদিকে আমার নিজের আয় হচ্ছে, অন্যদিকে পাহাড়ের মানুষও ভেজালমুক্ত (ফরমালিন) ফল, শাক-সবজি পাচ্ছেন। 

আমি মনে করি, এতে মানুষের সেবা করাও যাচ্ছে। তাই চাকরি পেছনে না ছুটে বেকার জীবন কাটানোর চেয়ে কৃষি উদ্যোক্তা কিংবা যে কোনো উদ্যোক্তা হলে সমাজে বেকার মানুষের সংখ্যা কমে আসবে। 

সোনারাম কার্বারি পাড়ার বাসিন্দা বাবুল চাকমা বলেন, কৃষক সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা আমার ভাগ্নে হন। সে কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ায় গ্রামে তার সুখ্যাতি হয়েছে। অনেকেই এখন তার মতো বাগান গড়ে তোলার কথা ভাবছেন। 

একই এলাকার শ্যামল চাকমা জানান, সুশান্তের বাগানে বিভিন্ন মৌসুম এলে এবং বাগান পরিচর্যার কাজে নারী-পুরুষ অনেকেই কাজের সুযোগ পেয়েছেন। গ্রামের দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানেও তার ভূমিকা রয়েছে। সবমিলিয়ে সুশান্ত আমাদের গ্রামের একজন সফল মানুষ।

রাঙামাটি সরকারি কলেজে স্নাতকে অধ্যয়নরত আছেন হ্রদবেষ্টিত সোনারাম কার্বারিপাড়ার বাসিন্দা জয় মঙ্গল চাকমা। পড়াশোনার পাশাপাশি গ্রামে ছাত্র পড়িয়ে নিজের হাতখরচ বহন করছেন। জয় মঙ্গল চাকমা বলেন, গ্রামে ছাত্র পড়িয়ে ভালো আয় হচ্ছে না। তাছাড়া এখানকার বেশিরভাগই মানুষই দরিদ্র। তাই অবসর সময় ব্যয়ের জন্য সুশান্ত দাদার মতো আমিও মিশ্র ফল বাগান গড়ে তোলার কথা ভাবছি।

রাঙামাটি সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শান্তনু খীসা জানান, কৃষক সুশান্ততঞ্চঙ্গ্যা একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি একজন আধুনিক কৃষি উদ্যোক্তাও; কৃষিবিষয়ক তার জ্ঞান অনেক ভালো। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে শুরু থেকে তাকে পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে আসছি। এ ছাড়া নতুন কোনো প্রণোদনা ও সুযোগ এলে তাকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। বলতে গেলে পাহাড়ে কৃষি উদ্যোক্তা গড়ে তোলার জন্য তিনি একজন প্রকৃত উদাহরণ। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙামাটি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক জানান, ‘কেবল মিশ্র ফল বাগানই নয়; তিনি সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন। এর স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পুরস্কৃত হয়েছেন। তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আরও অনেকেই কৃষি কাজে মনোযোগ দিয়েছেন। কৃষি উদ্যোক্তা হতে কেউ যদি আগ্রহ প্রকাশ করে এগিয়ে আসে আমরা কৃষি বিভাগ থেকে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh