আকিব হৃদয়
প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:০৩ পিএম
গাছে শোভা পাচ্ছে সুস্বাদু আনার
কিশোরগঞ্জ জেলায় প্রথমবারের মতো আনার চাষ করে সফল পাকুন্দিয়া উপজেলার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের ষাইটকাহন গ্রামের রায়হান উদ্দিনের ছেলে কলেজ পড়ুয়া যুবক আনোয়ার হোসেন ফয়সাল।
তীব্র ইচ্ছা শক্তি, ধৈর্য ও রাত-দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রথমবার আনারের চাষ করে সফল হয়েছেন তিনি। আনার চাষ করতে ও এর সফলতা খুঁজে পেতে তিনি সহায়তা নিয়েছেন ইউটিউবের।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের ষাইটকাহন গ্রাম। সেখানে এক সময়ের অনাবাদী জমিতে এখন চোখে পড়বে বিদেশি ফল আনারের বাগান। বাগানের গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে সুস্বাদু আনারের ফুল আর ফল।
ইউটিউব দেখে আনারের চাষ করে সফলতা পেয়েছেন পাকুন্দিয়া ডিগ্রি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ফয়সাল। এরই মধ্যে তার বাগানের গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে উন্নত জাতের আনাদের ফুল ও ফল।
লেখাপড়ার পাশাপাশি কৃষিকাজে বরাবরই আগ্রহ ছিলো ওই গ্রামের প্রবাসী রায়হান উদ্দিনের ছেলে আনোয়ার হোসেন ফয়সালের। ইউটিউব দেখে আনার চাষে আগ্রহী হয় ফয়সাল। বাড়ির পাশে পৈত্রিক অনাবাদী এক একর জমিতে ১৫০টি ভারতীয় সুপার বাগুয়া জাতের আনারের চারা দিয়ে শুরু করেন স্বপ্নের প্রকল্প। এরপর আর তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে প্রতিটি গাছে শোভা পাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন আনারের ফল আর ফল।
কঠোর পরিশ্রম আর একাগ্রতায় সফলতার দ্বারপ্রান্তে ফয়সাল। আর তিন মাস পর থেকেই শুরু হবে ফল সংগ্রহ। বাগান তৈরিতে তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। গাছ পরিপূর্ণ হলে প্রতি বছর বড় অংকের টাকা আয় করতে পারবেন বলে আশা করছেন ফয়সাল।
ফয়সাল জানান, কৃষি কাজের প্রতি আমার আগ্রহ ছিল। লেখাপড়ার পাশাপাশি কিছু একটা করার ইচ্ছে ছিল অনেক দিন ধরে। ইউটিউবে আনার চাষ দেখে আমার ভালো লাগে। তাই আমি নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেই আনার চাষ করার। তারপর শুরু করি। এখন প্রতিটি গাছে ফুল এবং ফল ধরেছে। তিনি জানান, আর ৬ মাস পরই আনার বিক্রি সম্ভব হবে। বছরে তিনবার আনার তোলা যাবে। এ পর্যন্ত তার সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। উৎপাদন শুরু হলে প্রতি বছর ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকার আনার বিক্রি করা যাবে বলে আশা করছেন ফয়সাল। গাছের বয়স এক বছর হলে ফয়সালের বাগান থেকে বছরে পাওয়া যাবে প্রায় দুই টন আনার। যার বাজার মূল্য ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকা।
আনোয়ার হোসেন ফয়সাল আরো জানান, স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় আমার বাবার পতিত ৩৫ একর জমিতে আনার চাষ শুরু করি। ১৫০টি গাছ রোপণ করি ৬ মাস আগে।
এদিকে ফয়সালের অভাবনীয় এ সফলতায় মুগ্ধ সবাই। প্রতিদিন পাকুন্দিয়াসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা ও অন্যান্য গ্রামের লোকজন আসছেন কলেজপড়ুয়া ছাত্র আনোয়ার হোসেন ফয়সালের আনার বাগান দেখতে। তার দেখাদেখি আনার চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেকে।
চন্ডিপাশা গ্রামের শাহ মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ ফয়সাল বলেন, আমরা আনার বিদেশি ফল হিসেবে জানতাম। এটা যে আমাদের দেশের ক্ষেতে আবাদ করা যায় সেটি জানা ছিল না। এখন ফয়সালের বাগান দেখে আমরাও আনার চাষ করার চেষ্টা করব।
জেলায় প্রথম শুরু হওয়া আনার চাষে নানাভাবে সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. ছাইফুল আলম বলেন, ফয়সাল অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। তার বাগানে আনার পুষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে ফলন ভালো হবে। তবে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। আমরা জেলার অন্যান্য উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে আনার চাষের বিষয়টি বিবেচনা করছি।
ফয়সালের সফলতার গল্প এখন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়াসহ আশেপাশের এলাকার মানুষের মুখে মুখে। তার দেখাদেখি আনার চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এদিকে পুরো জেলায় আনার চাষের বিভিন্ন উদ্যোগের রয়েছে জানিয়ে, আনার চাষে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা ও সহায়তার কথা বলছেন কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।