শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা কেন জেলায় নিতে চান এমপিরা?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২২, ০৪:১৮ পিএম

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর

সরকার দেশের প্রাথমিক বিদ্যালগুলোতে ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেবে। নিয়োগ পরীক্ষা কবে হবে সেটা এখনো চূড়ান্ত করেনি শিক্ষা বিভাগ। একবার তারিখ ঘোষণা দিলেও পরে সেটা পেছানো হয়। কিন্তু কেন এই গড়িমসি?

এদিকে নিয়োগ প্রত্যাশীদের ‘ভোগান্তি কমানোর’ কথা বলে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে জেলায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন সংসদ সদস্যরা। তারা এ বিষয়ক একটি সুপারিশ করলে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন, যদিও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি বৈঠক থেকে। কিন্তু এ সংসদ সদস্যদের এই ‘আশায় গুড়ে বালি’ দিতে মাঠে নেমেছেন চাকরি প্রত্যাশীরা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কদিন ধরে চলছে আন্দোলন। তাদের অভিযোগ, নিয়োগ পরীক্ষা জেলা পর্যায়ে হলে প্রশ্ন ফাঁসসহ ব্যাপক দুর্নীতি হবে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদ রয়েছে ৩২ হাজার ৫৭৭টি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) ২০২০ সালের অক্টোবরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কিন্তু করোনার কারণে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। এই সময়ে অবসরে গেছেন আরও প্রায় ১০ হাজার শিক্ষক।

এবার শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন ১৩ লাখ নয় হাজার প্রার্থী। বিশাল এই নিয়োগে ১ এপ্রিলে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা বলা হয় প্রথমে। পরে সেটা বাতিল করে বলা হয়, ৮ এপ্রিল শুরু হবে নিয়োগ পরীক্ষা। কিন্তু সেটাও পিছিয়ে যায়। আসছে রমজানে পরীক্ষা গ্রহণ নিয়ে জটিলতা থাকায় ঈদের আগে আর পরীক্ষা না নেওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে।

নিয়োগ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সম্প্রতি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রথম চিঠিতে বলা হয়, লিখিত পরীক্ষা ১, ৮, ১৫, ২২ ও ২৮ এপ্রিল কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা হবে সকাল ১০টা ও বেলা ৩টায়। পরের চিঠিতে বলা হয়, পরীক্ষা হবে ৮, ১৫ ও ২২ এপ্রিল ও ১৩ মে। পরীক্ষা বেলা ৩টায়। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) সূত্রে জানা যায়, রমজানের জন্য এই পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলে ঈদের পরে হতে পারে। পরীক্ষা মে মাসে হতে পারে বলে ডিপিই সূত্র জানিয়েছে।

ডিপিই সূত্রে জানা যায়, এখন কেন্দ্র নির্বাচন প্রক্রিয়া চলছে। নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর নির্ধারণ করা হবে পরীক্ষার তারিখ। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষা কোথায় হবে এ নিয়ে দোটানায় আছেন তারা।

এদিকে নিয়োগপ্রত্যাশীদের ‘ভোগান্তির’ অজুহাত তুলে সংসদ সদস্যরা জেলা পর্যায়ে পরীক্ষা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনকে।

সুপারিশের প্রেক্ষিতে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ২১ মার্চ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করেন, যদিও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি বৈঠক থেকে। কিন্তু চাকরিপ্রত্যাশীরা কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা হলে ভোগান্তিকেও তুচ্ছজ্ঞান করে অংশ নেবেন। তাদের মতে, জেলা পর্যায়ে পরীক্ষা হলে ব্যাপক দুর্নীতি হবে। জেলা পর্যায়ে না নেওয়ার দাবিতে ক’দিন ধরে আন্দোলনও করছেন তারা। ঢাকায় ডিপিই’র সামনে, জাতীয় প্রেস ক্লাব এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করেন তারা। সর্বশেষ গত বুধবার রাজশাহীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ওই মানবন্ধনে অংশ নেওয়া একজন শিবলী ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গতবার যখন আমরা জেলা পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েছিলাম, তখন দেখেছি পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গেছে। পরীক্ষা শুরুর পর অনেক প্রার্থী পরীক্ষা কক্ষে ঢুকে পরীক্ষা দিয়েছে। অনেক সময় পরীক্ষাকেন্দ্র দখল করার ঘটনাও ঘটেছে। আমরা এরকম আর চাই না। স্বচ্ছ নিয়োগ চাই।’

উল্লেখ্য, সহকারী শিক্ষকের পদটিতে বেতন দেওয়া হবে ১৩তম গ্রেডের স্কেলে। ফলে এবার মেধাবী শিক্ষার্থীরাসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও আসতে চাইছেন স্কুলশিক্ষকের পেশায়।

শম্পা রায় নামে একজন চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, ‘জেলা পর্যায়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হবে। সেখানে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে দুর্নীতিবাজরা অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেবে। এ জন্য জেলা পর্যায়ে পরীক্ষা না নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় দুর্নীতিমুক্তভাবে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

খায়রুল ইসলাম নামে এক চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাটি দুর্নীতিমুক্তভাবে নেওয়ার জন্য অধিদপ্তর কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় নেয়ার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। কিন্তু কুচক্রী মহলের চাপে অধিদপ্তর জেলায় পরীক্ষা নেয়ার জন্য নতুন করে ভাবছে। যারা জেলা পর্যায়ে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য অধিদপ্তরকে চাপ দিচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্য সৎ নয়।’

রাজশাহীর ওই মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জেলা পর্যায়ে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার খবর আমাদের চরমভাবে হতাশ করেছে। কারণ জেলা পর্যায়ে পরীক্ষা নেয়ার অতীত রেকর্ড ভালো নয়। বিগত সময়ে জেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস, প্রক্সিসহ নানা অনিয়ম ঘটেছে। আমরা আশঙ্কা করছি, জেলা পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে সেখানে ভয়াবহ দুর্নীতি হতে পারে।’

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী শিক্ষা অফিসার (অতিরিক্ত মহাপরিচালক দপ্তর) মো. মোস্তফা ফারুক খান বলেন, ‘লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার জন্য যেসব প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে সেগুলোর ধারণক্ষমতার তথ্য চাওয়া হয়েছে। এই তথ্য মেলার পর পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্র এবং পরীক্ষার তারিখ জানতে পারবেন।’

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, ‘নিয়োগ পরীক্ষার কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। মন্ত্রণালয় থেকে যেভাবে আয়োজন করতে বলবে আমরা সেভাবেই করবো।’

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh