যুক্তরাষ্ট্রে সিনহার তিন তলা বাড়ির খোঁজ পেয়েছে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২২, ০৭:৩৭ পিএম | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২২, ০৮:২৮ পিএম

সাবেক প্রধান বিচারপ‌তি এস‌ কে সিনহা

সাবেক প্রধান বিচারপ‌তি এস‌ কে সিনহা

সাবেক প্রধান বিচারপ‌তি এস‌ কে সিনহার যুক্তরাষ্ট্রে একটি বাড়ির সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বা‌ড়িটির দাম ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার, যা বাংলা‌দেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা হি‌সাবে) ২ কো‌টি ৪০ লাখ টাকা। নিউজার্সির প্যাটারসনের জাপার স্ট্রিটে ১৭৯ হোল্ডিংয়ের বাড়িটি তিনি ২০১৮ সালের ১২ জুন সম্পূর্ণ ক্যাশ ডেলিভারিতে কিনে নেন।

সম্প্রতি দুদকের হাতে আসা রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছে। দুদক বলছে, ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহাকে ব্যবহার করে এস কে সিনহা বাড়ি কেনার এই অর্থ বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় পাচার করেছেন এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এর আগে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে এস কে সিনহার সম্পদের তথ্য চেয়ে চিঠি দেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান। চিঠির জবাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এস কে সিনহার তিন তলা বাড়ি কেনার রেকর্ডপত্র পায় দুদক। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

এস কে সিনহার ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহা যুক্তরাষ্ট্রে একজন ডেন্টিস্ট হিসেবে কর্মরত। আমেরিকার একটি ব্যাংক থেকে ৩০ বছরের জন্য ১ লাখ ৮ হাজার ৭৫০ ডলার ঋণ নিয়ে ১ লাখ ৪৫ হাজার ডলার দিয়ে একটি বাড়ি কেনেন তিনি। ২০১৮ সালের ১২ জুন ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার ক্যাশ দিয়ে তিনি আরেকটি বাড়ি কেনেন।

অনুসন্ধান প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল থেকে ২০ জুন পর্যন্ত নিউজার্সির প্যাটারসনে অবস্থিত ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংকে অনন্ত কুমার সিনহার অ্যাকাউন্টে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৪৫৮ ডলার জমা হয়। এ ছাড়া ২০১৮ সালের ৫ মার্চ থেকে ২৮ মে পর্যন্ত ৬০ হাজার ১০ ডলার জমা হয়। এসব ডলার ইন্দোনেশিয়া ও কানাডার রয় গ্রুপের কাছ থেকে পাওয়া, যা প্রকৃতপক্ষে একটি সেল কোম্পানি।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, অনন্ত কুমার সিনহা বড় ভাই সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে নিয়ে ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংকে যান। তখন তিনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানান, আমেরিকার প্যাটারসন এলাকায় বাড়ি কেনার জন্য বন্ধুর কাছ থেকে তিনি ফান্ড পেয়েছেন। প্রকৃতপক্ষেই সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বাংলাদেশে প্রধান বিচারপতি থাকাকালে বিভিন্নভাবে অবৈধ অর্থ অর্জন করে তা হুন্ডিসহ বিভিন্ন কায়দায় যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করে তার ছোট ভাইয়ের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেন। এ দিয়ে ১৭৯ জ্যাপার স্ট্রিট, প্যাটারসন নিউ জার্সি ০৭৫২২-তে ২০১৮ সালের ১২ জুন ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার খরচ করে একটি বাড়ি কেনেন। সুতরাং বাড়িটি পরোক্ষভাবে সুরেন্দ্র কুমার সিনহারই।

দুদকের অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, সুরেন্দ্র কুমার সিনহা প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায় অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে ভোগদখলে রেখে এবং অবৈধ প্রকৃতি, উৎস ও অবস্থান গোপন করে ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার পাচার করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪ (২), (৩) ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় দুদক তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছে বলে জানা গেছে।

ইতোমধ্যে ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের মামলায় এস কে সিনহাকে চার বছর ও সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। এর মধ্যে ঋণ জালিয়াতির মামলায় চার বছর এবং অর্থ পাচারের মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

২০১৯ সালের ১০ জুলাই ও ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত।

তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংক থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ ১১ আসামির আটজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। বাকি দুজন খালাস পান।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজউকের প্লট বরাদ্দ এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করে দুদক। তার বিরুদ্ধে ৭ কোটি ১৪ লাখ টাকার সম্পদ বেনামে অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

তবে মামলায় রাজউকের কোনো কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়নি। ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ সংস্থাটির উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh