তালাকের পর তরুণীকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ

ফরিদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২২, ০৯:০১ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার এক তরুণীকে (২২) প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করার পর তালাক দিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) ওই তরুণী বাদী হয়ে ফরিদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন।

আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ নিয়েছেন।

মামলায় সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের সিংহ প্রতাব গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য শাহজান শেখের ছেলে ফুয়াদ শেখ (২৪),  তার চার সহযোগী সিংহপ্রতাব গ্রামের সাইদুর রহমান সাহিদ শেখ (৪৫), জাকির মাতুব্বর (৪০), মুরাদ খালাসী (৩৫) ও জাফর শেখকে (৩৫) আসামি করা হয়েছে। 

ওই তরুণীর মা বলেন, বছর পাঁচেক আগে পার্শ্ববর্তী নগরকান্দা উপজেলার কাজলী গ্রামের বাসিন্দা এক এনজিওকর্মীর সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর তাদের সংসার সুখেই চলছিল। আমার মেয়ের একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে। কিন্তু আমার মেয়ে যখন স্বামীর বাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসতো তখন তাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতো ফুয়াদ শেখ। একপর্যায়ে আমার মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে সে।

আনুমানিক দেড় মাস আগে ফুয়াদ আমার মেয়েকে দিয়ে স্বামীকে তালাক দেওয়ায়। পরে ফুয়াদ আমার মেয়েকে পালিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের মাসখানেক যেতে না যেতেই গত ১০ মার্চ তাকে তালাক দেয় ফুয়াদ। তালাকের পর গত ১২ মার্চ সন্ধ্যায় আমার মেয়েকে বাড়ির পাশের রাস্তা থেকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় ফুয়াদ শেখ ও তার সহযোগী সিংহপ্রতাব গ্রামের সাইদুর রহমান সাহিদ শেখ (৪৫), জাকির মাতুব্বর (৪০), মুরাদ খালাসী (৩৫) ও জাফর শেখ (৩৫)। 

পরে ফরিদপুর শহরের মহাবিদ্যালয়ের পাশে থাকা জাকিরের বাসায় আটকে রেখে টানা আটদিন একাধিকবার ধর্ষণ করে ফুয়াদ। এতে আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঘটনাটি নিয়ে আমার মেয়ে মামলা করতে চাইলে ফুয়াদ তার সহযোগীদের বাসায় ডেকে নিয়ে ১৯ মার্চ রাতে তাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।

তিনি আরও বলেন, আমার মেয়েকে শুধু ধর্ষণ নয়, তাকে নির্যাতন ও পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়ে পরদিন ২০ মার্চ বিকেল ৫টার দিকে বাড়ির পাশে ফেলে রেখে যায় ফুয়াদ ও তার সহযোগীরা। তখন বাড়ির লোকজন তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর আমরা মামলা করলে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসামিরা আমার স্বামী ও সন্তানদের এলাকা ছাড়া করে রেখেছেন। এমন কী আমাদের জমির পেঁয়াজও উঠাতে দিচ্ছে না তারা।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত ফুয়াদ শেখের বাবা ইউপি সদস্য শাহজাহান শেখ বলেন, ঘটনাটি সাজানো নাটক। আমাদের হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। ওই মেয়েকে আমার ছেলে বিয়ে করেছিল। বিয়ের পর আবার তালাক দিয়েছে। তালাকের পর নতুন করে কোনো ঘটনা ঘটেনি।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী আব্দুর রশিদ বলেন, ফরিদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক প্রদীপ কুমার রায় অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী ১২ মে।

ফরিদপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশনা আমরা এখনো হাতে পাইনি। আদালতের নির্দেশনা পাওয়ার পর তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh