নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২২, ১১:৫২ পিএম
রাজধানীতে গরমের শুরুতেই ডায়রিয়ার প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, গত এক সপ্তাহে ঢাকার আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছে সাড়ে আট হাজার রোগী।
আজ সোমবার (২৮ মার্চ) এ হাসপাতালে দেখা গেছে রোগীদের ভিড়। এদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৯৯২ জন নতুন রোগী।
আইসিডিডিআর,বি বলছে, প্রতি বছরই দুই মওসুমে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বাড়ে, তবে প্রতিদিন এত রোগী কখনোই এ হাসপাতালে ভর্তি হয়নি।
মহামারীর বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর মানুষের অসাবধানতা, বাইরের খাবার ও পানীয় গ্রহণে অসর্কতার কারণে এবার ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে বলে চিকিৎসকদের ধারণা।
এই সংক্রামক রোগ থেকে বাঁচতে বাইরের খাবার না খাওয়া এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
গত সাত দিনে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট আট হাজার ৫১০ জন ডায়রিয়া রোগী, অর্থাৎ দৈনিক গড়ে ১২১৫ জন।
চিকিৎসা নিতে আসা জিন্নাতের মা রাশিদা খাতুন বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গত রবিবার (২৭ মার্চ) রাতে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় জিনাতকে। কিন্তু আবার পাতলা পায়খানা বেড়ে গেলে আজ সোমবার (২৮ মার্চ) ফের তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।
তিনি জানান, জিনাত ওই দিন সন্ধ্যাবেলা বাইরে থেকে পুরি, সিঙাড়া খাইছিল, রাইতে আর ভাত খায় নাই, বলে শরীর ভালো না। পায়খানা শুরু হইলে শনিবার রাইত ১১টায়, পরে এইখানে নিয়া আহি। রবিবার সন্ধ্যায় ছুটি দিয়া দিছিল। বাসায় নিয়া যাওয়ার পরে রাতে আবার পাতলা পায়খানা। পরে আবার নিয়া আসছি।
আইসিডিডিআর,বির সহযোগী গবেষক ডা. লুবাবা শাহরিন জানান, প্রতি বছর অন্তত দুইবার ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। সে সময় চারশ থেকে পাঁচশ রোগী আইসিডিডিআর,বিতে আসেন। তবে এবার রোগী অনেক বেশি।
ঢাকার যাত্রাবাড়ী, মুগদা, শনিরআখড়া, মানিকনগর, উত্তরখান, দক্ষিণখান, কড়াইল, মোহাম্মদপুর, মিরপুর এবং ঢাকার বাইরের নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর থেকেও রোগী আসছে বলে জানালেন এই চিকিৎসক।
তিনি বলেন, ‘মানুষ অসাবধান হয়ে গেছে, বাইরের খাবার বেশি খাচ্ছে বলে ডায়রিয়া ছড়িয়েছে বেশি। আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, বাইরের খাবার, পানি না খাওয়া। বাইরে কোথাও গেলে খাবার এবং পানি বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া। ডায়রিয়া থেকে বাঁচার এটাই সবচেয়ে ভালো উপায়।’
লুবাবা শাহরিন জানান, এখন বেশিরভাগ রোগী আসছেন মারাত্মক পানিশূন্যতা নিয়ে। এ কারণে হাসপাতালে আনার আগে অবশ্যই রোগীর পানিশুন্যতা দূর করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, মারাত্মক পানিশূন্যতা একটা ক্রিটিক্যাল কন্ডিশন। যদি সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে স্যালাইন দেওয়া না হয়, তাহলে হাসপাতালে আনার পথেও মারা যেতে পারে। এজন্য ডায়রিয়া হলে বাসায় স্যালাইন খাওয়ানো শুরু করতে হবে।
যদি স্যালাইন খেতে না পারে, তাহলে কাছাকাছি কোনো হাসপাতালে নিয়ে শিরায় স্যালাইন চালু করতে হবে। এসব ব্যবস্থা না নিয়ে যদি রোগীকে শুধু কলেরা হাসপাতালে নিয়ে আসি, তাহলে পানিশূন্যতা পূরণ করা যাবে না।