দিল্লিতে মাছ-মাংসের দোকান বন্ধ নিয়ে বিতর্ক

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২২, ০৩:২৩ পিএম

চিত্তরঞ্জন পার্কে মাছ-মাংসের দোকান খোলা। ছবি : ডয়চে ভেলে

চিত্তরঞ্জন পার্কে মাছ-মাংসের দোকান খোলা। ছবি : ডয়চে ভেলে

চৈত্র নবরাত্রি উপলক্ষে ভারতের উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানার পরে রাজধানী দিল্লির বিজেপি শাসিত দক্ষিণ ও পূর্ব পৌরসভা এলাকায় মাংসের দোকান বন্ধ রাখার ফরমান জারি করা হয়েছে। 

পৌরসভার বক্তব্য, মন্দিরে যাওয়ার পথে খোলা মাংসের দোকান, মাংসের দোকানের গন্ধ ভক্তদের কাছে অস্বস্তির। তাই ২-১১ এপ্রিল ওই দোকানগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পৌরসভা। তবে মেয়ররা মুখে এই কথা বললেও দুই পৌরসভার তরফ থেকে কোনো লিখিত নির্দেশ জারি করা হয়নি। 

নবরাত্রি ৯দিন ধরে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় পালিত হয়। নবরাত্রি যারা পালন করেন, তারা ৯ দিন ধরে মাছ, মাংস, ডিমের মতো কোনো আমিষ খান না। পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লির খুব বেশি বাঙালি অবশ্য নবরাত্রি পালন করেন না।

উত্তর দিল্লি পৌরসভার মেয়র এখনো পর্যন্ত এরকম কোনো কথা বলেননি। এছাড়া মধ্যদিল্লির ভিভিআইপি এলাকা যার মধ্যে পড়ে সেই নিউ দিল্লি মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন বা এনডিএমসিও এমন কোনো নির্দেশ জারি করেনি।

পূর্ব দিল্লির মেয়র শ্যামসুন্দর আগরওয়াল বলেছেন, নবরাত্রির সময় ৯৯ শতাংশ মানুষ আমিষ খান না। আর দক্ষিণ দিল্লির মেয়র মুকেশ সুরইয়ানের বক্তব্য, নবরাত্রির সময় মাংসের দোকান খোলা রাখার কোনো দরকার নেই।

মুকেশ সুরইয়ান পৌর কমিশনারকে চিঠি দিয়ে বলেছেন, ধর্মীয় বিশ্বাস ও আস্থার মর্যাদা রাখা উচিত। ভক্তদের মনোভাবে যেন আঘাত না লাগে। তারা যখন মাংসের দোকানের সামনে আসেন, তখন মাংসের কটু গন্ধ তাদের নাকে আসে। তারা পূজা করতে যাওয়ার সময় এই গন্ধ পান। এটা ঠিক নয়। 

তাদের সমর্থন করে বিজেপি এমপি প্রবেশ সাহেব সিং বর্মা বলেছেন, দুই মেয়র একদম ঠিক কথা বলেছেন। শুধু দিল্লি নয়, সারা দেশে নবরাত্রির সময় এই কড়াকড়ি চালু করা উচিত।

উত্তর দিল্লি পৌরসভার এক মুখপাত্র বলেছেন, এমন কোনো প্রস্তাব তাদের বিচারাধীন আছে বলে তিনি অন্তত জানেন না। 

লিখিত নির্দেশ না থাকলে কী হবে, আইএনএ, জোরবাগসহ বেশ কিছু বাজারে মাংসের দোকান গতকাল মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) বন্ধ ছিল। পূর্ব দিল্লিতেও কিছু বাজারে মাংসের দোকান বন্ধ ছিল। তবে নতুন দিল্লির বাঙালিটোলা বলে খ্যাত চিত্তরঞ্জন পার্কের মাছ বা মাংসের দোকান আজ বুধবারও (৬ এপ্রিল) খোলা আছে। 

দুই নম্বর মার্কেটের মাছ বিক্রেতা টাবু জানিয়েছেন, পুরসভা থেকে কোনো কর্মী এসে দোকান বন্ধ রাখার কথা বলেননি। তবে নানা ধরণের গুজব শোনা যাচ্ছে। আর মঙ্গলবার থেকে প্রচুর সাংবাদিক ও টিভি ক্যামেরাম্যান এসে মার্কেট থেকে লাইভ করেছেন।

এক নম্বর মার্কেটের পাঁঠা ও মুরগির মাংসের বিক্রেতা মাজহার বলেছেন, কেউ এসে কিছু বলেনি। কিন্তু বিভ্রান্তি চরমে। এটা রুটি-রুজির বিষয়ও। 

উত্তরপ্রদেশে অনেক মাংসের দোকান বন্ধ। হিন্দুস্তান টাইমস জানাচ্ছে, গাজিয়াবাদের মেয়র চিঠি লিখে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেন, ৯দিন মাংসের দোকান বন্ধ থাকবে। তারপরই অনেক দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়। 

তবে রাজ্য সরকার জানিয়েছে, তারা মাংসের দোকান বন্ধ করার কোনো নির্দেশ দেয়নি।

এর প্রতিবাদে জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা টুইট করে বলেছেন, রমজানের সময় আমরাও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাই না। তার মানে কি, পর্যটক বা যারা মুসলিম নন, তারাও ওই সময় খেতে পারবেন না? বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায়? যদি দক্ষিণ দিল্লিতে সংখ্যাগরিষ্ঠবাদ ঠিক থাকে, তাহলে কাশ্মীরেই বা তা ঠিক হবে না কেন?

প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য বলেছেন, দিল্লিতে পৌরসভা ভোট আসছে। সরকার এখন তিনটি পৌরসভাকে এক করে একটি পৌরসভা গঠন করছে। তারপর ভোট হবে। একটি বিধানসভা উপনির্বাচনও হবে। তার আগে তাই বিভাজনের একটা চেষ্টা হচ্ছে। -ডয়চে ভেলে

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh