ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২২, ০৩:৩৪ পিএম
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান
জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। আজ শুক্রবার (৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।
ইমরান খানের বিরুদ্ধে তোলা অনাস্থা প্রস্তাব নাকচ এবং প্রেসিডেন্টের পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর জাতির উদ্দেশে তিনি বক্তব্য রাখবেন।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৪৯ মিনিটে টুইটারে ইমরান খান বলেন, ‘আমি শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক ডেকেছি। আমাদের সংসদীয় কমিটির বৈঠকও ডাকা হয়েছে। সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেব।’
তিনি বলেন, ‘জাতির কাছে আমার বার্তা- আমি সব সময়েই পাকিস্তানের জন্য শেষ বল পর্যন্ত খেলেছি, এবং ভবিষ্যতেও খেলবো।’
বৃহস্পতিবার সরকারের আইনবিষয়ক টিমের বৈঠকে ইমরান বলেছিলেন, ‘আমরা সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত মেনে নেব। পিটিআই যেকোনো নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। আমরা বিদেশি ষড়যন্ত্র সফল হতে দেব না।’
সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে বিরোধীদলগুলো স্বাগত জানালেও ক্ষমতাসীন দল একে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেছে।
পার্লামেন্ট পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়ে শনিবার এ প্রস্তাবে ভোটাভুটির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশটির প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ সর্বসম্মিতক্রমে এ রায় দেন। এতদিন ধরে শেষ মুহূর্তে যে ‘ট্রাম্পকার্ড’ খেলার হুমকি দিয়ে আসছিলেন প্রধানমন্ত্রী, এ রায়ের মধ্য দিয়ে তা ব্যর্থ হয়েছে।
পাঁচ বিচারপতি সর্বসম্মত আদেশে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি ড. আরিফ আলভিকে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করার কোনো অধিকার নেই প্রধানমন্ত্রী। আজ (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত দেওয়া সব সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।’
সুপ্রিম কোর্ট জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সারকে শনিবার সকাল ১০টায় পার্লামেন্ট অধিবেশন চালু এবং প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটাভুটির অনুমতি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব সফল হলে পার্লামেন্টই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবে। এদিন কোনো এমপিকে ভোটদানে বাধা দেওয়া হবে না। আর এ প্রস্তাব ব্যর্থ হলে মেয়াদ অনুযায়ী বর্তমান সরকার তাদের দায়িত্ব পালন করে যাবে।’
এর আগে অনাস্থা প্রস্তাব খারিজের বিষয় নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমটো) রুলের শুনানিতে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল বলেছেন, অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরির দেওয়া আদেশ ভুল ছিল- এটি পরিষ্কার। এর মাধ্যমে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৫ লঙ্ঘিত হয়েছে।
শুনানিতে প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপক্ষকে প্রশ্ন করেন, সবকিছু সংবিধান অনুযায়ী হলে দেশে সাংবিধানিক সংকট কোথায়? ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল ও পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতে শুরু হওয়া পঞ্চম দিনের শুনানি চলাকালে গতকাল প্রধান বিচারপতি প্রেসিডেন্টের আইনজীবীর উদ্দেশে এ কথা বলেছেন। প্রধান বিচারপতির প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্টের আইনজীবী সিনেটর ব্যারিস্টার আলী জাফর বলেন, ‘আমিও বলছি, দেশে কোনো সাংবিধানিক সংকট নেই।’
এ সময় প্রধান বিচারপতি জানতে চান, এ ঘটনায় জাতীয় পরিষদের কার্যবিবরণী পার্লামেন্টের বাইরে কোনো প্রভাব ফেলেছে কিনা?
তিনি বলেন, ‘কোনো সিদ্ধান্ত যদি পার্লামেন্টের বাইরে প্রভাব ফেলে, তাহলে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারেন।’
এ সময় বেঞ্চের বিচারপতি মোহাম্মদ আলী মাজহার জানতে চান, পার্লামেন্টে যদি কোনো অসাংবিধানিক ঘটনা সংঘটিত হয়, তার সাংবিধানিক দায়মুক্তি আছে কিনা। বিচারপতি জামাল খান মান্দোখেল জানতে চান, পার্লামেন্টে কোনো অসাংবিধানিক ঘটনা ঘটলে তার কি কোনো সমাধান নেই। জবাবে আইনজীবী জাফর বলেন, পার্লামেন্টকেই বিষয়টির সমাধান করতে হবে। আর সমাধান হলো জনগণের কাছে যাওয়া (নির্বাচন)।
পুরোনো মামলার রায়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সে এক সদস্যকে শপথ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ঘোষণা করেছিলেন, তারা এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন না। তখন প্রধান বিচারপতি জানতে চান, যদি পার্লামেন্টে কোনো অন্যায় হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে কী করণীয়।
তিনি প্রশ্ন করেন, ‘ফেডারেল সরকার গঠন কি পার্লামেন্টের অভ্যন্তরীণ বিষয়?’
জবাবে আইনজীবী জাফর বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা অথবা অনাস্থা প্রস্তাব পার্লামেন্টের অভ্যন্তরীণ বিষয়। স্পিকার ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করার জন্য জাতীয় পরিষদ গঠন করা হয়েছে। তবে ফেডারেল সরকার গঠন ও জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি আদালত পুনর্বিবেচনা করতে পারেন।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বান্দিয়াল বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট হলেই প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা নির্ধারণ করা যেত।
এদিন স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে বিচারপতিদের পাঁচ সদস্যের একটি বেঞ্চে মামলাটির শুনানি শুরু হয়। প্রধান বিচারপতির পাশাপাশি বাকি বিচারপতিরা হলেন ইজাজুল আহসান, মোহাম্মদ আলী মাজহার, মুনিব আখতার ও জামাল খান মান্দোখেল।