চলতি মৌসুমে চা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা গত বছরের চেয়ে বেশি

নাজমুস সাকিব, পঞ্চগড়

প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২২, ০৩:৩৮ পিএম

চা বাগান। ছবি: পঞ্চগড় প্রতিনিধি

চা বাগান। ছবি: পঞ্চগড় প্রতিনিধি

দুই মাস বন্ধ থাকার পর কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে পঞ্চগড়সহ উত্তরবঙ্গের চা বাগানগুলোতে। সমতলের প্রায় সব বাগানে উঁকি দিতে শুরু করেছে দুটি পাতার একটি কুঁড়ি। নতুন করে শুরু হয়েছে চা পাতা সংগ্রহ। কারখানাগুলোতেও শুরু হয়েছে উৎপাদন কার্যক্রম। 

মার্চের প্রথম দিন থেকে চা মৌসুম শুরু হয়েছে এ অঞ্চলে। নতুন বছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা- এক কোটি ৮০ লাখ কেজি নির্ধারণ করেছে চা বোর্ড। গত মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল- এক কোটি কেজি আর উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি। বিগত বছরের তুলনায় ৪২ লাখ ৪০ হাজার কেজি বেশি উৎপাদন ছিল।

জানা গেছে, প্রতি বছর শীতের সময় চা বাগানে পাতার বৃদ্ধি কমে যায়। এ সময় চাষিরা চা পাতা সংগ্রহ না করে গাছের ডালপালা ছেঁটে ফেলেন। বৈজ্ঞানিক ভাষায় একে বলা হয় ‘পরুনিং পদ্ধতি’। এই পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে বাগানে পাতার ঘনত্ব এবং উৎপাদনও বাড়ে। তাই প্রতি বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে চা চাষিরা পাতা সংগ্রহ বন্ধ রেখে পরুনিং করেন। এ সময় কারখানাগুলোও বন্ধ থাকে। এ দিকে দুই মাস চা পাতার বৃদ্ধি কম হলেও, মার্চ থেকে পুরোদমে উৎপাদন শুরু হয়েছে। 

চা শ্রমিকরা জানান, দুই মাস কর্মহীন সময় শেষে ব্যস্ততা শুরু হয়েছে। তারা চুক্তিভিত্তিক বাগান থেকে চা সংগ্রহ করছেন। এতে প্রতি কেজি চায়ের কাঁচা পাতা সংগ্রহে তারা তিন থেকে পাঁচ টাকা পান। 

তেঁতুলিয়া উপজেলার দর্জিপাড়া গ্রামের চাষি আব্দুর রহমান বলেন, চায়ের অধিক উৎপাদনের লক্ষ্যে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে পরুনিং করা হয়। এ জন্য দুই মাস বাগান থেকে পাতা সংগ্রহ বন্ধ থাকে। তবে এ সময়টা বাগানে গাছের গোড়া পরিষ্কার করা, চা গাছের মাঝে বেড়ে ওঠে লতাগুলোকে উপড়ে ফেলা এবং সেচ দেওয়াসহ বাগানের পরিচর্যার কাজ চলে। এখন নতুন কুঁড়িতে বাগানগুলো ভরে গেছে। আবার নতুন করে চা পাতা সংগ্রহ শুরু হয়েছে।

সিলেট অঞ্চলের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম চা উৎপাদন অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে পঞ্চগড়। ১৯৯৬ সালে সর্বপ্রথম পঞ্চগড়ে চা চাষের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয় এবং ২০০০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষুদ্র পর্যায়ে চা চাষ শুরু হয়। পঞ্চগড়কে অনুসরণ করে চা চাষে এগিয়ে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলা। এক সময়ের পতিত গো-চারণ ভূমি এখন চায়ের সবুজ পাতায় ভরে উঠছে। আন্তর্জাতিক মানের চা উৎপাদন হওয়ায় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এ অঞ্চলের চা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে। চা-বাগানের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে উঠেছে। সৃষ্টি হয়েছে মানুষের কর্মসংস্থান। একেকজন শ্রমিক দৈনিক আয় করছেন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত।

চা বোর্ড জানিয়েছে, এই মৌসুমে উত্তরবঙ্গে এক কোটি ৮০ লাখ কেজি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কাঁচা চা পাতার ক্রয়মূল্য এখনো নির্ধারণ করেনি চা ক্রয় কমিটি। তাই মূল্য নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় রয়েছেন চা চাষিরা। চা নিলামের ওপর নির্ভর করেই কাচা চা পাতার দাম নির্ধারণ করা হবে। তবে দাম বিষয়ে চাষিদের কোনো সমস্যা হলে চা বোর্ডের পক্ষ থেকে সমস্যা সমাধানের কাজ করা হবে। 

বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন জানান, সমতল ভূমিতে চা চাষের জন্য পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলা অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। ১৯৯৬ সালে সর্বপ্রথম পঞ্চগড়ে চা চাষের পরিকল্পপনা হাতে নেওয়া হয় এবং ২০০০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষুদ্র পর্যায়ে চা চাষ শুরু হয়। দিন দিন এ অঞ্চলে চা চাষ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২১ সালে উত্তরবঙ্গে এবার চা উৎপাদন হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় দেড়গুণ। 

তিনি আরো বলেন, চা চাষ সম্প্রসারণে চাষিদের বিভিন্ন সহায়তার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করে স্বল্পমূল্যে উন্নত জাতের চারা সরবরাহ করা হচ্ছে। ‘ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুলে’র মাধ্যমে কর্মশালা হচ্ছে। চাষিদের সমস্যা সমাধানে ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপস চালু করা হয়েছে। এছাড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ে একটি পেস্ট ম্যানেজমেন্ট ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে চাষিদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান, রোগবালাই ও পোকা দমনে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সহায়তা দেওয়া হয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh