কলেজছাত্রকে হত্যার নেপথ্যে ‘ফ্রি ফায়ার গেম’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২২, ০৩:১৫ পিএম

নিহত কলেজছাত্র রাকিবুল ইসলাম। ছবি- সংগৃহীত

নিহত কলেজছাত্র রাকিবুল ইসলাম। ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর কদমতলীতে ফ্রি ফায়ার গেম খেলাকে কেন্দ্র করে কলেজছাত্র রাকিবুল ইসলামকে (১৯) হত্যা করা হয় বলে স্বীকার করেছেন দুই অভিযুক্ত রবীন (২৪) ও রাসেল (২০)।

গতকাল রবিবার (১৮ এপ্রিল) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ওই দুইজন।

এর আগে গত ১৪ এপ্রিল কদমতলীর মিনাবাগ এলাকার ময়লার ভাগাড় থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। পরে এ ঘটনায় রাকিবুলের বাবা আবদুল আলী বাদী হয়ে কদমতলী থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। তদন্তের পরে এই মামলায় রবীন ও রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার রবীন ও রাসেলের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর। তাঁরা ঢাকার কদমতলী এলাকায় থাকেন। রবীন ডিশ লাইনের কাজ করেন। নিহত রাকিবুল রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কদমতলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আজহারুল ইসলাম।

পুলিশ জানায়, বাবা-মায়ের সঙ্গে কদমতলীর পাটেরবাগ এলাকায় থাকতেন রাকিবুল। গত ১৪ এপ্রিল বেলা ৩ টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে যায় সে। সন্ধ্যা হয়ে গেলেও বাসায় না ফেরায় তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন স্বজনরা। এসময় তার মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বিষয়টি জানানো হয় থানা পুলিশকে। দিবাগত রাত ২টার দিকে কদমতলীর মিনাবাগের ময়লার ভাগাড় থেকে রাকিবুলের লাশ উদ্ধার হয়।

এ ঘটনায় জড়িতদের ধরতে রাকিবুলের মুঠোফোনের কল ডিটেইলস রেকর্ড (সিডিআর) সংগ্রহ করে পুলিশ। সিডিআরের তথ্যে কদমতলীর রবীনের সঙ্গে রাকিবুলের মুঠোফোনে কথা বলার তথ্য পাওয়া যায়।

তবে ততক্ষণে ঢাকা ছেড়ে শরীয়তপুরে চলে যান রবিন। পরে তার ছোট ভাই রাসেলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাঁর ভাই রবীন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে স্বীকার করে সে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কদমতলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজহারুল বলেন, রাসেলকে আটক করার পর জানতে পারি তাঁর ভাই রবীন শরীয়তপুরে রয়েছেন। পরে সেখানে অভিযান চালিয়ে রবীনকে গ্রেপ্তার করে কদমতলী থানায় আনা হয়। দুই ভাইকে সামনাসামনি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে কারণসহ হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দেন।

ঢাকার সিএমএম আদালত ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রবিনের সঙ্গে পূর্বের পরিচয় ছিল রাকিবুলের। বয়সের পার্থক্য থাকলেও মুঠোফোনে ফ্রি ফায়ার গেম খেলাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ছিল। এরই জেরে রাকিবুলের গেমের পাসওয়ার্ড কেনার প্রস্তাব দেন রবিন। তবে সেটি না দেওয়ায় তাঁদের মধ্যে বিরোধ হয়।

গত ১৪ এপ্রিল কৌশলে রাকিবুলকে নিজের ফাঁকা বাসায় ডেকে নেন রবিন। সেখানেই গেম নিয়ে দুইজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে সন্ধ্যার দিকে ইফতারের আগে ডিশ লাইনের তার দিয়ে রাকিবুলকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন রবীন।

হত্যার পর প্রথমে রাকিবুলের মরদেহ বাসার ওয়ার্ডরোবে ভরে রাখেন রবীন। পরে গভীর রাতে ছোট ভাই রাসেলের সহযোগিতায় মরদেহটি ওয়ার্ডরোব থেকে বের করে মিনাবাগের ময়লার ভাগাড়ে ফেলে আসেন তারা।

এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন রাকিবুলের বাবা আবদুল আলী।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh