হোসেনী দালান বা ইমামবাড়া পুরান ঢাকা এলাকায় অবস্থিত শিয়া মুসলিমদের প্রার্থনালয় এবং কবরস্থান।
এলাকাবাসীর কাছে এই জায়গাটিকে হুস্নী দালান অথবা হোসায়নি দালান হিসেবেও বেশ পরিচিত।
মহররম এর মাসে পুরান ঢাকার বকসী বাজারে অবস্থিত এই হোসাইনি দালান পরিণত হয় উৎসবমুখর এক পরিবেশে।
হোসেনী দালানে শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি মসজিদ এবং কবরস্থান রয়েছে। তবে হোসেনী দালান যেকোন মুসলমানের জন্য পবিত্র একটি স্থান।
পুরান ঢাকার এই হোসেনী দালান শিয়া সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব মহররম পালনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রভূমি।
হায় হোসেইন, হায় হোসেইন মাতমের মধ্য দিয়ে পবিত্র আশুরায় ঐহিত্যবাহী তাজিয়া মিছিল এখান থেকেই বের হয়। মহররম ছাড়াও শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এই হোসেনী দালানে পালন করে থাকেন।
এই ইমারতটি মহানবী (সা.) হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর দৌহিত্র ইমাম হোসেন (রা:) এর কারবালার প্রান্তরে শাহাদাৎ হওয়ার ঘটনার স্মরণে ১৬’শ শতকে মোঘল শাসনামলের সময়ে নির্মাণ করা হয়।
মোঘল সম্রাট শাহজাহানের আমলে নির্মিত প্রায় সাড়ে তিনশ বছরের পুরনো হোসেনী দালান ঢাকায় অবস্থিত মোঘল আমলের অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি নিদর্শন।
হোসেনী দালানের/ইমামবাড়ার দেয়ালে থাকা শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, সম্রাট শাহজাহানের পূত্র শাহ সুজার সুবেদারির সময় তার এক নৌ-সেনাপতি সৈয়দ মীর মুরাদ হিজরী ১০৫২ সনে অর্থাৎ ১৬৪২ সালে নির্মাণ করেন। যদিও ঐতিহাসিকদের মধ্যে হোসেনী দালানের সঠিক নির্মাণকাল নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
সৈয়দ মীর মুরাদ প্রথমে হোসেনী দালানের ভেতরে একটি তাজিয়া কোণা নির্মাণ করেছিলেন, কালক্রমে যার বর্তমান বর্ধিত রুপ হচ্ছে একটি ইমামবাড়া। তাজিয়া নির্মাণ করার শত বছর পরে তাজিয়া কোণা ভেঙ্গে গেলে তৎকালীন নায়েব-নাজিমরা নতুন করে তাজিয়া কোনাকে ১৮৩২ সালের দিকে ইমামবাড়ার রুপ দিয়ে পূনঃনির্মাণ করেন।
১৮৯৭ সালে সংগঠিত ভূমিকম্পে হোসেনী দালান ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ঢাকার জমিদার খাজা আহসানউল্লাহ সেই সময়ে প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ করে হোসেনী দালানের পুন:নির্মাণ ও সংস্কার করেন।