ধামরাই পৌরসভার বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, মরছে গাছ

শওকত হোসেন সৈকত, ধামরাই (ঢাকা)

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২২, ০৪:২৮ পিএম

সড়কের পাশে ময়লা আবর্জনা ফেলে মানুষের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে ধামরাই পৌর কর্তৃপক্ষ। ছবি: ধামরাই প্রতিনিধি

সড়কের পাশে ময়লা আবর্জনা ফেলে মানুষের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে ধামরাই পৌর কর্তৃপক্ষ। ছবি: ধামরাই প্রতিনিধি

ঢাকার ধামরাই উপজেলার একটি আঞ্চলিক সড়কের পাশে জোর করে বর্জ্য পদার্থ ফেলে ওই এলাকার পরিবেশ নষ্টসহ ২১টি বড় বড় গাছ মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে ধামরাই পৌর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ধামরাই কালামপুর আঞ্চলিক সড়কের কেলিয়া মৌজাস্থিত আইঙ্গন এলাকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ধামরাই পৌর শহরের সব বর্জ্য পদার্থ এনে ফেলা হচ্ছে। সেখানে রয়েছে ৫টি অটো রাইস মিল আর এখানে কাজ করছেন কয়েকশত শ্রমিক। অন্যদিকে ওই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছেন হাজার হাজার মানুষ। অথচ অতি গুরুত্বপূর্ণ এ আঞ্চলিক সড়কের পাশে ময়লা আবর্জনা ফেলে মানুষের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে ধামরাই পৌর কর্তৃপক্ষ।

গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের পাশে প্রতিদিন ৫/৭ ট্রাক বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এখন আর জায়গা না হওয়ায় বর্জ্যরে পাহাড় হয়ে গেছে। বর্তমানে এগুলো বিষাক্ত বর্জ্যে পরিণত হয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে সড়কের পাশে ২১টি বড় বড় গাছের ওপর। বর্জ্যরে বিষাক্ত গন্ধে পথচারীদের চরম ভোগান্তি ছাড়াও দূষিত হচ্ছে স্থানীয় পরিবেশ; কিন্তু গাছ মরে যাওয়ার পরও উপজেলা বন বিভাগ নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করছেন স্থানীয় জনগণ।

ধামরাই পৌরসভার বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট কোনো স্থান না থাকায় এসব রাস্তার পাশের গর্তে জোর করে কোনো আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে ময়লা ফেলছে ধামরাই পৌর কর্তৃপক্ষ। গর্ত ভরাট হয়ে এখন প্রায় মূল সড়কের কার্পেটিং ৫/৬ ফুট দখল হয়ে গেছে। আর এতে যে কোনো সময় মোটরসাইকেল পিছনে পড়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন পথচারীরা।

কেলিয়া উত্তর পাশের এলাকায় সুষমা ফিড তৈরির কারখানাসহ কয়েকটি ধানের চাতাল রয়েছে। সেখানকার শ্রমিক বাধ্য হয়ে কাজ করার সময় নাক মুখ কাপড় দিয়ে আটকিয়ে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

ধামরাই-কালামপুর সড়কটি সওজের অধীনের রাস্তা, পৌরসভার সড়ক নয়। সড়কের পাশে এভাবে বর্জ্য ফেলার অপরাধে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের মানিকগঞ্জ বিভাগের পক্ষ থেকে একাধিকবার জরিমানাও করা হয়েছে; কিন্তু তারপরও থামছে না এই কার্যক্রম।

মফিজুল ইসলাম নামে এক পথচারী জানান, আমি একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। মোটরসাইকেল নিয়ে প্রতিদিনই এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করি। বেশ কয়েক মাস ধরে দেখছি, এখানে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। মুখে মাস্ক ও মাথায় হেলমেট থাকার পরও বাজে দুর্গন্ধ আসে, যা খুবই বিরক্তিকর। এছাড়াও রাস্তার মধ্যে বর্জ্য পরে থাকে, যা আমাদের জন্য খুবই ঝুঁকির ও কষ্টকর। রাস্তার পাশে এ রকম বর্জ্য ফেলে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলা উচিত হচ্ছে না পৌর কর্তৃপক্ষের।

অটোরিকশা চালক মো. জামাল জানান, আমি কালামপুর-ধামরাই রিকশা চালাই। ধামরাই পৌরসভার গাড়ি এসে এখানে ময়লা ফেলে যায়। অনেক দুর্গন্ধ আসে। এই দুর্গন্ধে রিকশার অনেক যাত্রীর অবস্থা হয়ে যায়। এখানে আসলেই রিকশা আরো বেশি জোরে চালাতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে বর্জ্যরে আশপাশে একটি গাছও বাঁচবে না। পাশ দিয়ে চলাচল করাও সম্ভব নয়।

পৌরসভার উচ্চমান সহকারী (পরিচ্ছন্নতা) সুজন দেওয়ান জানান, আমাদের পৌরসভার তিনটি গাড়ি আছে। তবে দুটি গাড়ি দিয়ে ওখানে বর্জ্য ফেলা হয়। আর প্রতিদিন ১৫টি গাড়ির সমপরিমাণ বর্জ্য ফেলা হয়। এটা অবশ্যই ভুল। সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর থেকে আমাদের বলা হয়েছে ওখানে বর্জ্য ফেলার জন্য। তাই আমরা ওখানে বর্জ্য ফেলি।

রাস্তার পাশে পৌরসভার বর্জ্য ফেলানোর অনুমতি দিয়েছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের নয়ারহাট বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী অভি বলেন, প্রশ্নই ওঠে না এ ধরনের অনুমতি দেওয়ার। আমরা সবসময়ই বলে থাকি রাস্তার পাশে কোনো ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না। এমন কি জরিমানাও করা হয়েছে। আমরা পৌরসভার লোকজনের সাথে একাধিকবার কথা বলেছি; কিন্তু তারা মানছেন না। 

গাছ মরে যাওয়ার বিষয়ে উপজেলা বন কর্মকর্তা মোতালিব আল মুমিন বলেন, আমরা পৌর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। এখনো কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জাকি বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে মাসিক মিটিং এ আলোচনা করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh