২০২৪ সাল পর্যন্ত খাদ্য-জ্বালানির দাম উর্ধ্বমুখী থাকবে: বিশ্বব্যাংক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২২, ১১:১১ পিএম

যুদ্ধ পণ্যের বাজারে বড় ধাক্কা দিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

যুদ্ধ পণ্যের বাজারে বড় ধাক্কা দিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় খাদ্য ও জ্বালানির যে দর বেড়েছে, তা বছরের পর বছর উর্ধ্বমুখীই থাকবে। এরকমই পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

সংস্থাটি বলেছে, ‘যুদ্ধ পণ্যের বাজারের জন্য একটি বড় ধাক্কা দিয়েছে। বাণিজ্য, উৎপাদন এবং ব্যবহারের বৈশ্বিক নিদর্শনগুলোকে এমনভাবে ওলটপালট করে দিয়েছে যে, ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত মূল্য ঐতিহাসিকভাবে উচ্চ স্তরে থাকবে।’বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক’ প্রতিবেদনে এই আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে সংস্থাটির সদরদপ্তর থেকে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, গত দুই বছরে জ্বালানির দাম ১৯৭৩ সালের তেল সংকটের পর সর্বোচ্চ। খাদ্যপণ্যের দাম এমনিতেই চড়া ছিল; এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এই বড় দুই খাদ্য উৎপাদক দেশে উৎপাদন কর্মকাণ্ড মারাত্মক ব্যাহত হয়েছে। বিশেষ করে প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর নির্ভর করে যে সার উৎপাদন হয়, তার সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় খাদ্যপণ্য উৎপাদনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট তীব্র হয়েছে, যা ২০০৮ সালের চেয়েও বড় সংকট হিসাবে দেখা দিয়েছে।’

বিশ্বব্যাংকের ইকুইটেবল গ্রোথ, ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনস ভাইস প্রেসিডেন্ট ইন্ডারমিট গিল বলেছেন, ‘সামগ্রিকভাবে আমরা ১৯৭০ দশকের পর সবচেয়ে বড় সংকট অনুভব করছি। খাদ্য, জ্বালানি এবং সারের বাণিজ্যে বিধিনিষেধের কারণে এই ধাক্কা আরও তীব্র হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘দিন যতো যাচ্ছে, সংকট ততোই বাড়ছে। নীতিনির্ধারকদের উচিৎ বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা। প্রত্যেকটি দেশের উচিৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর প্রতিটি সুযোগ গ্রহণ করা এবং উচিৎ নয় এমন কাজগুলো করা যা বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি করে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে জ্বালানির দাম ৫০ শতাংশ বাড়বে। কৃষি পণ্য এবং অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়বে ২০ শতাংশের বেশি। ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত উর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকবে। যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে বা রাশিয়ার উপর অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে খাদ্যপণ্য, জ্বালানিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বর্তমানের অনুমানের চেয়েও বেশি বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্র সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যুদ্ধের কারণে বাণিজ্য ও উৎপাদন ব্যাঘাতের কারণে ২০২২ সালে ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দাম গড়ে প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলার থাকবে। যা সালের পর সর্বোচ্চ। আর ২০২১ সালের তুলনায় ৪০ শতাংশ বাড়বে। ২০২৩ সালে তেলের ব্যারেল ৯২ ডলারে নেমে আসতে পারে। তখন পাঁচ বছরের গড় হিসাবে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ৬০ ডলারের উপরে থাকবে। কয়লার দাম ৮০ শতাংশ বাড়বে। এই সকল দামই হবে সর্বকালের সর্বোচ্চ।

প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রসপেক্টস গ্রুপের পরিচালক আয়হান কোস। তিনি বলেছেন ‘ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে পণ্যের বাজার কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সরবরাহের ধাক্কার সম্মুখীন হচ্ছে। খাদ্য এবং শক্তির মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিশ্বে বড় ধরনের মানবিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে এবং এটি দারিদ্র্য হ্রাসের অগ্রগতি স্থগিত করবে। উচ্চ দ্রব্যমূল্য ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির চাপকে বাড়িয়ে তুলেছে।’

গমের দাম ৪০ শতাংশ বাড়ার পূর্বাভাস দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এখনই গমের দাম সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করছে। এর উপর আরও বাড়লে পরিস্থিতি আরও নাজুক হবে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করবে, যারা গম আমদানিতে পুরোপুরি রাশিয়া এবং ইউক্রেন নির্ভর করে। লৌহজাত পণ্যের (মেটাল) দাম বাড়বে ১৬ শতাংশের বেশি।’

বিশ্বব্যাংকের প্রসপেক্টস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ জন ব্যাফেস বলেন, ‘বিশ্ব পণ্য বাজার প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছে। কিছু পণ্যের দাম সর্বকালের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়বে। খাদ্য উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান জ্বালানি এবং সারের মূল্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস করতে পারে। যা খাদ্যের প্রাপ্যতা, গ্রামীণ আয় এবং দরিদ্রদের জীবিকাকে প্রভাবিত করবে।’

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh