কূটনীতিক চ্যানেল ব্যবহার করে বিদেশে উইঘুর ধরছে চীন

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২২, ০৮:২৮ পিএম

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মধ্য, পশ্চিম ও দক্ষিণ এশিয়ায় নিজস্ব কূটনৈতিক সুবিধা ব্যবহার করে চীনা উইঘুর ও অন্যান্য মুসলিম সংখ্যালঘুদের নানাভাবে নির্যাতন চালাচ্ছে বেইজিং। এর মাধ্যমে নিজেদের নাগরিকদের ভয় দেখানো, হয়রানি করা, নজরদারি চালানো, আটক ও প্রত্যর্পণের ঘটনা ঘটাচ্ছে দেশটি।

সম্প্রতি চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিষয়ক ইন্সটিটিউট উইলসন সেন্টারের কিসিঞ্জারের 'গ্রেট ওয়াল অফ স্টিল' শিরোনামের একটি গবেষণা প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে রেডিও ফ্রি ইউরোপ এই তথ্য জানিয়েছে।

এতে বলা হয়, মাল্টিবিলিয়ন ডলারের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এর মতো প্রকল্পের মাধ্যমে চীনের বৈশ্বিক উত্থান ঘটেছে। এর মাধ্যমে সুবিধাভোগী দেশগুলোতে চীন নিজেদের কূটনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২২ এর জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ৫৫৩২টি উইঘুরদের ভয় দেখানোর ঘটনা, বিদেশে আটক উইঘুরদের বিরুদ্ধে ১১৫০টি মামলা ও ৪২৪ জন উইঘুরকে নির্বাসিত বা প্রত্যর্পণ করানো হয়েছে।

সমীক্ষায় বলা হয়, পাকিস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমারে অবস্থানরত উইঘুর, জাতিগত কাজাখ, কিরগিজ ও অন্যান্য গোষ্ঠীগুলি আটক বা প্রত্যর্পণের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

উইলসন সেন্টারের ফেলো ও গবেষণার লেখক ব্র্যাডলি জার্ডিন বলেন, ২০০১ সালে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মার্কিন যুদ্ধের সূচনার সময় উইঘুর ভিন্নমতাবলম্বী ও প্রবাসী সম্প্রদায়কে জোট গঠন করে দিয়েছিলো চীন। ২০১৭ সালে সেই জোট ব্যবহার করে জিনজিয়াং-এ গণ বন্দীকরণ কর্মসূচির সময় প্রদেশ জুড়ে নজরদারি বাড়ায় দেশটির কর্তৃপক্ষ।

তিনি বলেন, চীন মধ্য এশিয়ায় সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) মতো বেশ কয়েকটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। সেসব ব্যবহার করে তারা নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করছে। এর আওতায় সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা না করেই পারস্পরিক প্রত্যর্পণের অনুমতি দেয়া হবে।

জার্ডিনের মতে এই ধরনের সহযোগিতা উইঘুরদের জন্য অঞ্চলটিকে খুবই বিপজ্জনক ও প্রতিকূল করে তুলেছে।

বেল্ট অ্যান্ড রোড শীর্ষ সম্মেলনের সময় তুরস্কের সাথেও একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষর করে চীন। 

তুরস্ক বর্তমানে উইঘুরসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর জন্যে কিছুটা হলেও নিরাপদ। তবে চুক্তি স্বাক্ষরের পরে চীনে নিপীড়িত সংখ্যালঘুরা তুরস্কেও কতটা নিরাপদ থাকবেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ইসলামপন্থী উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অজুহাতে পশ্চিম জিনজিয়াং প্রদেশে একটি নৃশংস ক্র্যাকডাউন শুরু করেছে বেইজিং। এর মাধ্যমে প্রায় ১০ লাখের বেশি উইঘুর, কাজাখ ও অন্যান্য মুসলিম সংখ্যালঘুদের আটক করেছে তারা।

তাদেরকে আটক করার পর জোরপূর্বক শ্রম দেয়ানো, গণ বন্দীকরণ, জোরপূর্বক জন্মনিয়ন্ত্রণ, উইঘুর সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিচয় মুছে ফেলার চেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে গণহত্যারও ঘটনা ঘটছে।

চীন সরকার প্রকাশ্যে জিনজিয়াং-এ মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে কোনো প্রতিবেদন অস্বীকার করেছে।

তবে উইঘুর মুসলমানদের গণ বন্দীশিবিরে পাঠানো, তাদের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করা ও সম্প্রদায়ের সদস্যদের নির্বাসনে পাঠানোর মাধ্যমে চীন বিশ্বব্যাপী তিরস্কৃত হচ্ছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh