ঈদে রূপচর্চা

আয়েশা আফরোজা

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২২, ১২:৪১ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

উৎসবের দিনটিতে সবাই চায় নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে। উৎসব বলে কথা! এ দিন চাই ত্বকে বাড়তি উজ্জ্বলতা।  ত্বক যদি হয় নিষ্প্রাণ তখন যতই মেকাপ করা হোক না কেন সাজ সুন্দরভাবে কখনই ফুটে উঠবে না। এজন্যই ঈদে ত্বকে বাড়তি উজ্জ্বলতা আনার জন্য প্রয়োজন বাড়তি যত্ন। এক মাস সিয়াম সাধনার সাথে চলে সারাদিনের কর্মব্যস্ততা, সেই সঙ্গে শুরু হয়ে যায় ঈদের প্রস্তুতি। এত কিছুর ভিড়ে নিজেকে ভুলে গেলে তো চলবে না! ঈদের আগে থেকেই ত্বকের যত্নে রূপচর্চা শুরু করতে হবে।

বিশেষ করে যারা দিনের একটা বড় সময় চুলার পাশে কাটান এবং ঘরের বাইরে রোদ ও ধুলোবালিতে কাজ করেন- তাদের ত্বকের জন্য চাই বিশেষ রূপচর্চা। কারণ তাদের ত্বক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাছাড়া এবারের ঈদ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে। এ সময় গরমের কারণে অনেকের ত্বকেই র‌্যাশ বা সানবার্নের সমস্যা দেখা দেয়। তাই ঈদের কমপক্ষে ১৫/২০ দিন আগে থেকেই রূপচর্চা শুরু করতে হবে।

হাজারো কর্মব্যস্ততার মাঝে সৌন্দর্যসেবা কেন্দ্রে গিয়ে নিজের পরিচর্যা করিয়ে নেয়ার মত পর্যাপ্ত সময় খুব একটা পাওয়া যায় না। তাই বাড়িতে বসেই খুব সহজে কিছু ঘরোয়া প্যাক তৈরি করতে পারেন যা সময় বাঁচাবে, অর্থেও সাশ্রয় করবে, একই সঙ্গে ত্বক হবে দীপ্তিময়। তবে যে কোন ধরণের রূপচর্চা করার সময় অবশ্যই ত্বক ও চুলের ধরন বুঝে উপাদান ব্যবহার করতে হবে, নইলে হিতে বিপরীত হতে পারে। এখানে বিভিন্ন ত্বকের উপযোগী কয়েকটি ঘরোয়া প্যাক তৈরির নিয়ম দেয়া হল, যা ব্যবহার করে খুব সহজেই ত্বকে বাড়তি কোমলতা আনা সম্ভব।

স্বাভাবিক ত্বক

এ ধরনের ত্বকের অধিকারীরা খুব ভাগ্যবান, কারণ এদের সমস্যা খুব কম থাকে। তারপরও যত্নের প্রয়োজন হয়, নইলে আপনার সুন্দর স্বাভাবিক ত্বকও একসময় হয়ে পড়বে নিষ্প্রাণ। 

চন্দন বাটা ১ টেবিল চামচ, টমেটোর রস ১ চা চামচ এবং শসার রস ১ চা চামচ সবগুলো উপাদান একসাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। চালের গুঁড়া, দুধ, মধু, শসা ও গাজরের রস অল্প অল্প করে নিয়ে সবগুলো উপাদান একসাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগান। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের মরা কোষ দূর হয়ে ত্বক হবে উজ্জ্বল।

তৈলাক্ত ত্বক

এ ধরনের ত্বকের গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত তেল নিঃসরিত হয়, ফলে মুখ ধোঁয়ার অল্প কিছুক্ষণ পরেই ত্বক আবার তেলতেলে হয়ে যায়। মুলতানি মাটির সাথে গোলাপ জল ও এক চা চামচ মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এটি তৈলাক্ত ত্বকের জন্য খুব ভালো একটি মাস্ক। মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। তারপর হালকা একটা ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। 

তৈলাক্ত ত্বকের একটি প্রধান সমস্যা হলো ব্ল্যাক হেডস ও হোয়াইট হেডস। মধুর সাথে চিনি অথবা লেবুর রসের সাথে লবন মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে সার্কুলার মোশনে হালকাভাবে মালিশ করতে হবে। এভাবে সপ্তাহে দুই দিন স্ক্র্যাবিং করলেই  ব্ল্যাক হেডস ও হোয়াইট হেডস এর প্রকোপ কমে যাবে। মনে রাখবেন, আক্রান্ত স্থান ছাড়া অন্য কোথায় এই স্ক্র্যাব ব্যবহার করা যাবে না। তাছাড়া ব্রণ আক্রান্ত ত্বকেও এটি ব্যবহার করা যাবে না।

চুলের যত্ন

উৎসব আয়োজনে শুধু ত্বকের যত্ন নিয়ে ভাবলেই হবে না, চুলের সৌন্দর্যও গুরুত্বপূর্ণ। রুক্ষ, নিষ্প্রাণ, অগোছালো চুল এক নিমিষেই আপনার সমস্ত সৌন্দর্য ম্লান করে দিতে পারে। চুল যদি হয় স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, সুন্দর তাহলে উৎসবের দিনটিতে আপনি হয়ে উঠবেন অনন্যা।

সপ্তাহে একদিন চুলের যত্নে ডিম, টক দই, মধু, এলোভেরা, ভিটামিন-ই ক্যাপসুল দিয়ে প্যাক তৈরি করে চুলে লাগিয়ে রাখুন ১৫/২০ মিনিট তারপর ধুয়ে ফেলুন। যাদের চুল বেশি শুষ্ক তারা ডিমের সাদা অংশ বাদ দিয়ে শুধু কুসুমটা লাগাবেন।

বাজারের শ্যাম্পুতে সিলিকন থাকে যা চুলের ক্ষতি করে। তাই বাড়িতে নিজেই ঘরোয়া উপায়ে প্রাকৃতিক শ্যাম্পু তৈরি করে নিতেন পারেন। ১টি ডিম, লেবুর রস ২ টেবিল চামচ, ভিনেগার ১ চা চামচ, অলিভ অয়েল ৩০ মি.লি. ভালোভাবে মিশিয়ে গোসলের সময় শ্যাম্পুর বদলে ব্যবহার করুন। প্রাচীনকাল থেকেই চুলের প্রাকৃতিক পরিষ্কারক হিসেবে রিঠা ব্যবহার হয়ে আসছে। সারা রাত রিঠা ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সেই পানি দিয়ে চুল পরিষ্কার করে নিতে পারেন। 

বাজারের কন্ডিশনারও কৃত্রিম কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি যার অতিরিক্ত ব্যবহার চুলের সৌন্দর্য নষ্ট করে। ঘরেই খুব সহজে চটপট বানিয়ে নিতে পারেন প্রাকৃতিক কন্ডিশনার। চা পাতা ভালো করে জ্বাল দিয়ে এর লিকারটুকু ছেঁকে নিয়ে ঠান্ডা করে তাতে একটি লেবুর রস মিশিয়ে নিন। শ্যাম্পুর শেষে। এই লিকার দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। হাতে হাতে এর ফল পাবেন।

খুশকি চুলের সৌন্দর্য নষ্ট করে। অলিভ অয়েল খুশকির জন্য খুব উপকারি। অলিভ অয়েল হালকা গরম করে চুলের গোড়ায় মালিশ করে ৪৫ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। একইভাবে লেবুর রস বা আদার রসও ব্যবহার করতে পারেন। খুশকি অতিরিক্ত হলে ডাক্তারের পরামর্শ মতো মেডিকেটেড বা কিটোকোনাজোল শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।

চুলের যত্নে তেল অপরিহার্য তাই অবশ্যই নিয়মিত চুলে তেল দিতে হবে। কয়েক রকমের তেল হালকা গরম করে চুলের গোড়ায় মালিশ করুন। তারপর একটি তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে মাথায় পেঁচিয়ে রাখুন ৪৫ মিনিট এরপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। এটাকে বলা হয় হট অয়েল ট্রিটমেন্ট এতে চুলের গোড়া মজবুত হয়।

শুষ্ক ত্বক

এ ধরনের ত্বকের সমস্যা সবচেয়ে বেশি। ব্রণের প্রকোপ এবং দ্রুত বলি রেখা পড়ার সম্ভাবনা বেশি। তাছাড়া ত্বকে ময়েশ্চারাইজার অভাব থাকায় ত্বক প্রায়ই হয়ে পড়ে শুষ্ক ও প্রাণহীন। তাই শুষ্ক ত্বকে অন্য যে কোনো ত্বকের চেয়ে বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়।

দুধ ও মধুর সাথে কাঁচা হলুদ বেটে লাগলে উপকার পাওয়া যায়। তবে কারো হলুদে এলার্জি থাকলে হলুদ বাটা বাদ দিয়ে শুধু মধু লাগাতে পারেন। পেস্তা বাদামের পেস্ট ১ টেবিল চামচ, মধু ১ চা চামচ, ডিমের কুসুম ১ টি এই মিশ্রণটি লাগিয়ে ২০ মিনিট পর মুখ পরিষ্কার করে ফেলুন। দুধের সরের সঙ্গে এক চিমটি হলুদ ও কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ৫ মিনিট সার্কুলার মোশনে ম্যাসাজ করতে হবে। একই মিশ্রণটি একটানা সাতদিন ব্যবহার করলে শুষ্কভাব অনেকটাই কমে আসবে। মাল্টার রসের সাথে মধু মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি বলি রেখা দূর করতে সাহায্য করে।

মনে রাখবেন ত্বকের যে কোনো প্যাক ব্যবহারের আগে অবশ্যই মুখ পরিষ্কার করে নিবেন। কোনো প্যাকই ১৫/২০ মিনিটের বেশি মুখে লাগিয়ে রাখবেন না।

গলা ও ঘাড়ের যত্ন

শরীরের সবচেয়ে অবহেলিত অংশ বোধহয় ঘাড় ও গলা। যারা নিয়মিত মুখের ত্বকের যত্ন নেন তারাও ঘাড়ের যত্ন নিয়ে খুব একটা ভাবেন না। অথচ শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় গলা, ঘাড় বা পিঠে সবচেয়ে দ্রুত ময়লা জমে। নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণে ঘাড় কাল হয়ে যায়। উঁচু কওে চুল বাঁধলে বা ঘাড় খোলা পোশাক পরলে দেখতে তখন খুবই বিশ্রী লাগে। তাই মুখের ত্বকের মতো ঘাড়ের সৌন্দর্যের দিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

ত্বকের প্রায় সমস্যার সমাধানে যাদুর কাঠির মতো কাজ করে এলোভেরা। এই এলোভেরাতে আছে অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট যা ত্বকের গঠনে সহযোগিতা করে। একটি এলোভেরার সবটুকু জেল বের করে নিয়ে গলা ও ঘাড়ের চারপাশে লাগিয়ে রাখতে হবে। ১৫/২০ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে। একটি কচি শসা পেস্ট করে তাতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে ১০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহার করতে পারেন।

বলা হয়ে থাকে, লেবু নাকি প্রাকৃতিক ব্লিচিং এর কাজ করে। যে কোনো ধরনের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। ২ টেবিল চামচ লেবুর রসের সাথে ১ টেবিল চামচ গোলাপ জল মিশিয়ে মিশ্রণটি ঘাড়ের চারপাশে লাগিয়ে রাখতে হবে। ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে।

হাত-পায়ের যত্ন

সারা দিনের সকল কাজ-কর্মই করা হয় এই দুই জোড়া হাত-পায়ের সাহায্যে। তাই এদের যত্নের জন্য আলাদা সময় দেয়া প্রয়োজন। অযত্ন অবহেলায় হাত ও পায়ের অমসৃণ ফাটা ত্বক শুধু অস্বস্তিই নয় জনসম্মুখে বিব্রতকর পরিস্থিতিতেও ফেলতে পারে।

কাঁচা আলুর রস দিনে দুইবার হাতে পায়ে লাগালে খুব দ্রুত উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে। ২ মগ পানিতে অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে হাত পা ডুবিয়ে রাখুন। এইভাবে দিনে ৩ বার করুন। হাতের আঙ্গুল বা পায়ের গোঁড়ালি ফাটলে কুসুম গরম পানিতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও শ্যাম্পু মিশিয়ে তাতে হাত পা ভিজিয়ে নরম ব্রাশ দিয়ে ডলে ময়লা পরিষ্কার করে নিবেন। তারপর নরম তোয়ালে দিয়ে মুছে ময়েশ্চারাইজার ও পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে নিবেন। পেট্রোলিয়াম জেলি ফাটা সমস্যায় খুব উপকারি। মাছ মাংস কাটার পর গন্ধ দূর করার জন্য লবণ ও লেবু মেশানো পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh