ছাত্রলীগের সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২২, ০৯:৩৯ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২২, ০৯:৪৪ পিএম

প্রেসক্লাব যশোরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন। ছবি: যশোর প্রতিনিধি

প্রেসক্লাব যশোরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন। ছবি: যশোর প্রতিনিধি

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন নিজ উপজেলার ছাত্রলীগ নেতারা। দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে নতুন কমিটির অনুমোদন করায় স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে নেতারা এ ঘোষণা দিয়েছেন। 

আজ শনিবার (৩০ এপ্রিল) প্রেসক্লাব যশোরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপজেলা কমিটির সদস্য ও খোদপাড়া ইউনিয়ন কমিটির আহবায়ক হাদিউজ্জামান ফয়সাল। 

এদিকে ছাত্রলীগের কমিটিতে বিতর্কিত নেতাদের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে যশোর প্রেসক্লাবের সামনে ১০ জন নেতাকর্মী বেধড়ক মারপিটের শিকার হয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। তবে কারা এই ঘটনার আহত হয়েছেন তাদের নাম প্রকাশ না করলেও হামলাকারীরা সবাই লেখক ভট্টাচার্যর অনুসারী বলে জানানো হয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পকেট কমিটির বিরুদ্ধে এবং পদবঞ্চিত নেতাদের উপর হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন তারা। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- হাবিবুর রহমান, হুমায়ুন কবির, জিএম ফয়সাল, সেহাগ হোসেন, আবু সুফিয়ান, আল মুমুন, সোহাগ হোসেন, মনির হোসেন, শ্যামল হাজরা, রাকিব হোসেন, আব্দুস সামাদ ওলিয়ার রহমান, আবু সাইদ, নাজমুল আলম, অশোক মন্ডল, হুমায়ুন কবির লিটন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, আতিয়ার রহমান প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২৯ এপ্রিল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাউদ্দিন কবির পিয়াস ও সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশাদ পল্লবের সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মণিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। একই সাথে ৫ সদস্যের বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির সভাপতি করা হয় মাহমুদুল হাসান রকি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় রমেশ দেবনাথকে। ৫ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটিতে একজন সহসভাপতি একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও একজনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়।  ঘোষিত উপজেলা কমিটিতে অনভিজ্ঞ, বিতর্কিত, রাজনৈতিক ভারসাম্যহীন এবং সদ্য এসএসসি পাস করা ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 

সদ্য ঘোষিত উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিকে একটি শিশু কমিটি আখ্যা দিয়ে ছাত্রলীগ নেতা হাদিউজ্জামান বলেন, ঘোষিত কমিটির সভাপতি মণিরামপুর বাজারে একটি ফাস্টফুড ব্যবসায়ী এবং তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পর্যন্ত। এমনকি উপজেলায় ছাত্র সমাজের কাছে তিনি বিবাহিত ও ডিভোর্সি হিসাবে সমালোচিত। সাধারণ সম্পাদক রমেশ দেবনাথ যিনি মনোনীত হয়েছে তার কোন ছাত্রত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যুগ্ম সাধারণ পদে এসএম বাপ্পী হুসাইনের ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড শাখায়ও কোনো সাধারণ সদস্য পদ নেই। সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান অভি তিনি সদ্য এসএসসি পাস এবং ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি। এরা সকলেই মণিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের অপরিচিত মুখ। আমরা দীর্ঘদিন উপজেলা রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেও আমরা পদ পদবি না পেয়ে হতাশ। অর্থের বিনিময়ে বিতর্কিত ও অযোগ্যদের পদ দেওয়া হয়েছে। এসকল কর্মকাণ্ডের মূল হোতা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে অবাঞ্ছিত করেন। একই সাথে উপজেলার ১৭ ইউনিয়নের সক্রিয় সভাপতি-সম্পাদক এবং আহবায়করা গণপদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। 

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ নেতা হাদিউজ্জামান বলেন, ছাত্রলীগের কমিটিতে বিতর্কিত নেতাদের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে এসে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছি আমরা। এই ঘটনায় ১০ জন ছাত্রলীগ নেতা আহত হয়েছেন। আহতদের ভিতর মণিরামপুর সরকারি কলেজের আহবায়ক হাবিবুর রহমান ও ভোজগাতি ইউনিয়নের আহবায়ক হারুন অর রশিদ গুরুত্বর আহত হয়েছেন। তারা শহরের একটি বাড়িতে সন্ত্রাসীদের ভয়ে আত্মগোপনে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান তিনি। তবে কারা এই ঘটনার সাথে জড়িত সংবাদ সম্মেলনে তাদের নাম প্রকাশ করেননি তিনি। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন মণিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের নেতারা যখন প্রেসক্লাব যশোরের সামনে দাঁড়ায় তখন যশোর সরকারি এমএম কলেজ ছাত্রলীগ নেতা সৌরভ ভট্টাচার্য এবং ছাত্রলীগ নেতা রাব্বীর নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ যুবক আসে। এর পর মণিরামপুর থেকে আসা ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে তারা বাগবিতণ্ডা করতে থাকে। এক পর্যায়ে সৌরভ ভট্টাচার্যর সাথে থাকা ছাত্রলীগ নেতা রাব্বী, এনামুলসহ ৮ থেকে ১০ জন যুবক পদবঞ্চিতদের সবাইকে ডেকে নিয়ে সার্কিট হাউজের দিকে যায়। সেখানে হাতুড়ি, লাঠি, দিয়ে বেধড়ক মারপিট করতে থাকে। পরে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেলে তারা পালিয়ে যায়।  

এই বিষয়ে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশাদ পল্লব সাংবাদিকদের জানান, মণিরামপুরে একটি সুন্দর কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে আরো কয়েকজন ত্যাগী নেতার নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কেন্দ্রে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। পদ বঞ্চিতদের উপর যারা হামলা চালিয়েছে তারা কেউ ছাত্রলীগ নেতা না। তার পরেও এমন হামলার ঘটনার সাথে যদি কোনো ছাত্রলীগনেতা জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh