পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত রাঙ্গামাটি

প্রান্ত রনি, রাঙ্গামাটি

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২২, ০৬:৪৯ পিএম

ঝুলন্ত সেতুতে পর্যটকদের আনাগোনা। ছবি: রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি

ঝুলন্ত সেতুতে পর্যটকদের আনাগোনা। ছবি: রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি

সাপ্তাহিক ছুটি, মহান মে দিবস ও ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে টানা ছুটিতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। টানা ছুটির কারণে যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ ও এবারের ঈদ উল ফিতর পাহাড়ে কাটাতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে এসেছেন পর্যটকরা। এতে করে সরগরম হয়ে উঠেছে পাহাড়ের পর্যটনশিল্প। ঈদকে ঘিরে মন্দা মৌসুমেও চাঙা হয়ে উঠেছে পাহাড়ের পর্যটন।

ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে শহর এলাকার বেশিরভাগ দোকানপাট, শমিংমল, খাবারের রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকার কারণে কিছুটা বিপাকে পড়েছেন পর্যটকরা। অন্যদিকে ঈদের দিন হালকা বৃষ্টিপাত ও ঈদের পরদিন (আজ) বুধবার সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টিপাতের কারণে সকাল থেকেই জেলা শহর ও কাপ্তাইয়ের পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রসমূহ কিছুটা ফাঁকা ছিলো। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে বৃষ্টিপাত বন্ধ হওয়ায় আবারো মুখর পর্যটনকেন্দ্র।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মহান মে দিবস ও পবিত্র ঈদ উল ফিরত উপলক্ষে ১ মে থেকে ৪ মে পর্যন্ত সরকারি ছুটি রয়েছে। আবার ২৯ ও ৩০ এপ্রিল শুক্র ও শনিবার হওয়ার কারণে সাপ্তাহিক দুইদিন বেড়ে মোট ছুটি হয়েছে ছয়দিন। অন্যদিকে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) অফিস, আদালত খোলা থাকলেও যারা বৃহস্পতিবার এক দিনের বাড়তি ছুটি নিয়েছেন তাদের ছুটি বাড়বে আরো তিনদিন। মে দিবস, ঈদুল ফিরত, চারদিনের সাপ্তাহিক ছুটিসহ কার্যত ৮ দিনের ছুটিকে কেন্দ্র করে পাহাড়ের ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা।


আজ বুধবার (৪ মে) বিকেলে রাঙ্গামাটি পর্যটন ঝুলন্ত সেতুতে সরেজমিন দেখা গেছে, ঝুলন্ত সেতুসহ সেতুর দুপাশেই পর্যটকদের আনাগোনা। তবে অন্যান্য ঈদ ও পর্যটন মৌসুমের চেয়ে তুলনামূলকভাবে পর্যটকদের সংখ্যা ছিল কম। অবশ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের দিন (মঙ্গলবার) ও বুধবার সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টিপাতের কারণে সকালে চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকা থেকে পর্যটক কিছুটা কম এসেছেন। যে কারণে ঝুলন্ত সেতুতে তুলনামূলক মানুষ কম। তবে আগামী কয়েকদিন রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের চাপ থাকবে। এছাড়া স্থানীয় টেক্সটাইল কাপড়ের দোকানগুলো পর্যটকদের উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়।


ঢাকা থেকে আগত এক শিক্ষার্থী জানান, সাজেক-খাগড়াছড়ি ঘুরে রাঙ্গামাটিতে বেড়াতে এসেছি। সব মিলিয়ে বেশ ভালোই লেগেছে। তবে এই মৌসুমে এসে কাপ্তাই হ্রদে পানি কম থাকায় ভালো লাগছে না। আমার আরো একবার আসার ইচ্ছে রয়েছে, কাপ্তাই হ্রদে পানি পরিপূর্ণ থাকা সময়ে ঘুরে বেড়াব।

রাঙ্গামাটির আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন বার্গী লেক ভ্যালি রেস্তোরাঁর পরিচালক বাপ্পী তঞ্চঙ্গ্যা জানান, আমাদের এখানে সব সময়ই পর্যটকরা বেড়াতে আসেন। তবে এ কয়েকদিনের টানা ছুটিকে কেন্দ্র করে পর্যটকের সংখ্যা অনেকটা বেড়েছে। এটি আরো কয়েকদিন থাকবে।

সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জুমঘর ইকো-রিসোর্টের সত্ত্বাধিকারী জেরী লুসাই জানান, সাজেকে আমাদের সমিতির আওতাধীন ১০৯টি কটেজ-রিসোর্ট রয়েছে। টানা ছুটিকে কেন্দ্র করে প্রায় সবগুলো কটেজ-রিসোর্ট পর্যটকে পরিপূর্ণ রয়েছে। এবার ছুটির দিন বাড়ার কারণে পর্যটকের সংখ্যাও বাড়বে।


রাঙ্গামাটি জেলা শহরের রিজার্ভবাজারে অবস্থিত হোটেল নাদিশা ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক মো. শাহিন সুলতান জানান, আমাদের হোটেলে ৫০টি থাকার রুম রয়েছে, বেড অনুযায়ী ১২০ জনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ৪ মে পর্যন্ত সম্পূর্ণ বুকিং রয়েছে। তবে ৬-৭ মে এর জন্য ৮০-৯০ বুকিং কনফার্ম হয়েছে। আশাকরি বাকীগুলোও কাভারেজ হয়ে যাবে।

রাঙ্গামাটি পর্যটন মোটেলের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, আমাদের পর্যটন মোটেলে ৮৮টি আবাসিক কক্ষ রয়েছে। যেগুলোর ৭০ শতাংশ পর্যটকে পূর্ণ রয়েছে। এছাড়া মোটেলে অবস্থানরত পর্যটকগণ ছাড়াও পর্যন্ত ঝুলন্ত সেতুতে দেড় হাজার খানেক পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। সবমিলিয়ে পর্যটকদের আগমন মোটামুটি ভালো।

এই সময়টাতে পর্যটকরা ছাড়াও স্থানীয় ভ্রমণপিপাসু মানুষরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন রাঙ্গামাটির সবগুলো পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রে। রাঙ্গামাটি পর্যটন ঝুলন্ত সেতু, আরণ্যক, পলওয়েল পার্ক, ডিসি বাংলো পার্ক, আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়ক, বার্গী লেক ভ্যালি, সাঙ সাবারাংসহ কেরাণী পাহাড় ও হ্রদের ওপর জেগে উঠা চরগুলোতে স্নিগ্ধ বিকেলে ঘুরে অবসাদ কাটাচ্ছেন স্থানীয়রা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh