বান্দরবান প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ মে ২০২২, ০৩:২৩ পিএম | আপডেট: ০৯ মে ২০২২, ০৯:৪৯ পিএম
প্রশাসনের দেয়া ত্রাণসামগ্রী ফিরিয়ে দিয়েছেন লামার পাড়াবাসী। ছবি- সংগৃহীত
বান্দরবানের লামায় খাদ্য সংকটে থাকা তিনটি ম্রো ও ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দাদেরকে প্রশাসনের দেয়া ত্রাণসামগ্রী ফিরিয়ে দিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।
গতকাল রবিবার (৮ মে) লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তফা জাবেদ কায়সার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে ত্রাণসমাগ্রী বিতরণ করছিলেন। এসময় ত্রাণ বিতরণের সময় ঘটনাস্থলে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এক কর্মীকে পাড়াবাসী দেখতে পেয়ে তাকে ধাওয়া করেন ও পরে ত্রাণ ফিরিয়ে দেন।
পরে ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশের দুই সদস্য, সরই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাড়াবাসীদের বুঝিয়ে শান্ত করেন।
লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন, আমরা ওই এলাকার ৩৬ পরিবারের জন্য চাল, মসুরের ডাল, মুড়ি, চিড়া, লবণ ও পানি নিয়ে গিয়েছিলাম। প্রথমে জয়চন্দ্র ত্রিপুরা পাড়ার ১৬টি পরিবারকে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়। তারা সেটা প্রথমে গ্রহণ করলেও তারা সেটা ফেরত দেয়। এরপরে লাংকম ম্রো পাড়ায় ত্রাণ দিতে গেলে তারাও ফেরত দেয়। রেংয়ান ম্রো পাড়ার বাসিন্দারাও ত্রাণ নেয়নি।
রেং ইয়ান পাড়ার কারবারি রেংয়ান ম্রো বলেন, পাড়াবাসীর ত্রাণের খুব দরকার। কিন্তু আমরা ত্রাণ নিতে গিয়ে দেখি যারা আমাদের জুমের বাগান পুড়িয়ে দিয়েছেন, সেই লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কর্মীরা প্রশাসনের সদস্যদের সঙ্গে সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন, আর আমরা তাদের টাকায় কোনো ত্রাণ নেব না। একারণে কয়েকটি ত্রিপুরা পরিবার প্রথমে ত্রাণ নিলেও সেই ত্রাণ পরে তারা ফেরত দেয়।
রাবার কোম্পানির কর্মী কিভাবে চিহ্নিত করলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে রেংয়াং ম্রো বলেন, আগুন লাগিয়ে দেওয়ার সময় তিনিও উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বিভিন্ন সময় এলাকায় লামা রাবার কোম্পানির লোকজনের সঙ্গে তাকে দেখা গেছে।
সরই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিছ জানান, আমরা ত্রাণ দেওয়ার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত পাড়ায় ছুটে গিয়েছিলাম। প্রথমে তারা লাইন ধরে সবাই ত্রাণ নিয়ে বাড়ি গিয়েছিল, পরে হঠাৎ করে সবাই ত্রাণ নেবে না বলেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। শেষে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রায় ২ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তাদের ত্রাণ হাতে তুলে দিতে না পেরে ফিরে আসেন। পরে এসব ত্রাণসামগ্রী সরই ইউনিয়ন পরিষদে রেখে দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্তরা চাইলে যে কোনো সময় সেখান থেকে তা নিয়ে যেতে পারবে বলেও জানান তিনি।
জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার এবং লামা উপজেলা সদর থেকে থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে সরই ইউনিয়ন। ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ওই তিনটি পাড়া।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বাসিন্দাদের অভিযোগ, ২৬ এপ্রিল লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি এলাকায় ৩০০ একরের বেশি জমিতে আগুন দিয়ে দেয়। এতে বিশাল এলাকা বিরানভূমিতে পরিণত হয়।
যদিও ক্ষয়ক্ষতির কথা অস্বীকার করেছেন লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, এই জমি লিজ নেওয়া হয়েছে। সেখানে রাবার চারা ও কাজু বাদাম লাগানোর জন্য জঙ্গল কেটে আগুন লাগানো হয়েছিল। এতে পাড়াবাসীর কারও কোনও ঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। সবার ঘর অক্ষতই আছে।