সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১২ মে ২০২২, ০১:২৭ পিএম | আপডেট: ১২ মে ২০২২, ০১:৩০ পিএম
প্রতীকী ছবি
বাংলাদেশে প্রতি বছরই বিভিন্ন সময়ে চিনি, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, রসুন ও ডালের মতো জরুরি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে এবার রোজার ঈদের আগে হঠাৎ করে ভোজ্যতেলের বাজার চরম অস্থির হয়ে ওঠে। বাজার থেকে সয়াবিন তেল উধাও হয়ে যায়।
ঈদের ছুটি শেষে সরকার প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৩৮ টাকা বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা নির্ধারণ করে। আর খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৮০ টাকা করা হয়। গত দুই মাসে এভাবে সয়াবিন তেলের দাম বাড়তে বাড়তে দ্বিগুণ হয়ে গেছে, যা গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে; কিন্তু তারপরও সয়াবিন তেলের বাজার স্বাভাবিক হয়নি।
বরাবরের মতোই আমদানিকারক, মিল মালিক, পাইকারি ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতার সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাড়তি মুনাফা হাতিয়ে নিতে তৎপর। এ জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা গোপনে ভোজ্যতেলের মজুদ গড়ে তুলেছে। এর প্রমাণ পাওয়া যায় মাত্র দুইদিনের অভিযানে ৭ জেলায় প্রায় ২ লাখ লিটার তেল জব্দ করার খবরে।
অস্বীকার করার উপায় নেই, বিশ্ববাজারে সরবরাহ কম থাকায় আমদানি ব্যয় বাড়ছে বলেই তার প্রভাব পড়ছে দেশের বাজারে; কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক তথ্যে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম প্রতি টন প্রায় ১ হাজার ৯০০ ডলার। সে হিসাবে ১ লিটার বা কেজি তেলের দাম পড়ে ১ দশমিক ৯০ ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় এর ক্রয়মূল্য পড়ে ১৬৫ টাকার কিছু কম বা বেশি, যা দেশের বর্তমান মূল্যের চেয়ে কম। তাই তেলের দাম সমন্বয় করার পরও দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের এই সংকট অনেকটাই কৃত্রিম বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ক্ষেত্রে সরকারের সংস্থাগুলোর অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা অনেকটাই স্পষ্ট। তারা ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছে, দাম না বাড়াতে; কিন্তু মজুদদারদের নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের কোনো নজরদারি ছিল না।
তাই এখনই সময় এ বিষয়ে টেকসই পরিকল্পনা নেওয়ার। এ ধরনের সংকট এড়াতে আমদানি হয় এমন কিছু পণ্য বাংলাদেশ নিজেই উৎপাদন করে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে কিনা সেসব বিষয়ে বিবেচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। আমদানি করা তেল যেন বাজারে থাকে নজরদারির মাধ্যমে সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। টিসিবির মাধ্যমে স্বল্প দামে তেল বিক্রি বাড়াতে হবে। সেই সাথে মজুদদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।