কমে এসেছে আমদানির চাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২২, ০৮:৫৬ এএম

চট্টগ্রাম বন্দর। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বন্দর। ছবি: সংগৃহীত

পণ্য আমদানির ব্যয় মেটাতে গিয়ে গত কয়েকমাসে কিছুটা চাপে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কয়েক দফা কমাতে হয়েছে।

এই চাপ থেকে উত্তরণে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সব ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ডলার সরবরাহ করার পাশাপাশি বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে নির্দেশনা দিয়েছে। এ কারণেই দেশে আমদানির চাপ কমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে আমদানি ব্যয়ের যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ছিল তা অনেকাংশে কমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, গত ফেব্রুয়ারিতে আমদানি ব্যয় হয়েছিল ৮৩২ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। পরের মাস মার্চে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৭৭২ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ আগের মাসের তুলনায় গত মাসে ৬০ কোটি ডলার কম ব্যয় হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই তিন মাস ধরে আট বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় হয়েছে আমদানিতে। মার্চ মাসে এটি সাত বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে।

গত জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে সার্বিকভাবে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৪৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ। সেখানে জুলাই থেকে মার্চ এই ৯ মাসে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসের আমদানি ব্যয় কমার প্রভাবে সার্বিক আমদানি ব্যয় তিন শতাংশ কমেছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে উদ্যোগ নিয়েছে, এটিই তার ফল। তিনি মনে করেন, দেশের অর্থনীতি সঠিক পথে পরিচালিত হচ্ছে। যদিও জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষের জন্য কষ্ট হচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে করোনা পরবর্তী অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোয় মূলধনি যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বাড়ছে। এছাড়া জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিও আমদানি খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বছরখানেক আগে যেখানে সামগ্রিক আমদানি দায় পরিশোধ করতে হতো সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার থেকে চার বিলিয়ন ডলার। এখন তা দ্বিগুণ হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে যেখানে আমদানি দায় পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার, গত ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় সাড়ে আট বিলিয়ন ডলার।

এদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে প্রায় ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যাংকগুলোকে জোগান দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার (১১ মে) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে; যা দুই বছরের আগের অবস্থানে চলে গেছে। বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে সর্বোচ্চ পাঁচ মাসের আমদানি দায় মেটানো যাবে। এর আগে ২০২০ সালের নভেম্বরে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক যে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে, তাতে অচিরেই আমদানির চাপ আরো কমে আসবে বলে মনে করছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, ডলার সংকট কাটিয়ে উঠতে অপেক্ষাকৃত কম প্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণে আরো কড়াকড়ি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থাৎ এখন থেকে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে নগদ মার্জিন হার বাড়িয়ে ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার (১০ মে) নেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ এই পদক্ষেপে বিদেশ থেকে গাড়ি, টিভি, ফ্রিজ, এসির মত বিলাস পণ্য আমদানিতে এলসির মার্জিন হার তিন গুণ বাড়ানো হয়েছে। তবে জরুরি ও নিত্যপণ্য আমদানিতে মার্জিন ঋণ সংক্রান্ত আগের নির্দেশনা বহাল থাকবে।

ব্যাংকগুলোকে দেওয়া নতুন নির্দেশনায় বিলাসবহুল গাড়ি ও গৃহস্থালি পণ্য সামগ্রী আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বেশি কড়াকড়ি করা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে সেডান কার বা এসইউভির মত মোটর গাড়ি এবং ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স হোম অ্যাপ্লায়েন্স আমদানিতে ঋণপত্র খুলতে ন্যুনতম ৭৫ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে।

ওই নির্দেশনায় জরুরি ও সুনির্দিষ্ট খাতের কিছু পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্যের আমদানির বিপরীতে ঋণপত্র খুলতে ন্যুনতম ৫০ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh