শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্দেশ্য ব্যাহত

কর্মসংস্থান তৈরিতে ব্যর্থ লক্ষ্মীপুরের বিসিক

জুনায়েদ আহম্মেদ, লক্ষ্মীপুর

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২২, ০৩:৫৫ পিএম

বিসিক ভবন। ছবি: লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

বিসিক ভবন। ছবি: লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্বায়ত্তশাসিত একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। লক্ষ্মীপুরে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বিকাশ এবং স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এ প্রতিষ্ঠানটি।

বিসিকের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে, যা অন্য স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের পক্ষে পাওয়া সম্ভব নয়। বিনিময়ে এসব প্রতিষ্ঠান স্থানীয় বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করে থাকে। বিসিকের ভিশন ও কার্যাবলিতে এমন তথ্য উল্লেখ রয়েছে।

অথচ চালু হওয়ার ২৫ বছর পরেও বহু প্লটের জায়গা খালি পড়ে রয়েছে লক্ষ্মীপুর বিসিক শিল্পনগরীতে। এ সুযোগে বিসিকে থাকা ৩-৪টি বড় প্রতিষ্ঠানের অধীনে চলে যাচ্ছে শিল্পনগরীর বেশিরভাগ প্লট। একই সময়ে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলো জেলার বেকার সমস্যা সমাধানে কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারছে না। স্থানীয় এলাকাবাসী, উদ্যোক্তা ও কারখানা মালিকদের সাথে কথা বলে এমনটা জানা গেছে। তবে বিসিক লক্ষ্মীপুর জেলা কার্যালয়ের প্রধান দাবী করেছেন বর্তমানে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, লক্ষ্মীপুর বিসিক শিল্প নগরীরর উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত গিয়ার ওয়েল রিপ্যাকিংয়ের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাইরে কোনো নাম কিংবা সাইনবোর্ড নেই। ভেতরে গিয়ে বোতলে লাগানো একটি লেভেল থেকে জানা গেল প্রতিষ্ঠানটির নাম সিটি লুব ওয়েল ইন্ডাস্ট্রি লি.। ইংরেজি ও আরবিতে লেখা ওই লেভেলের কোথাও ঠিকানা হিসেবে লক্ষ্মীপুর বিসিকের নাম লেখা নেই। 

এদিকে প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা কৌশিক আহমেদ জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে ৩০-৪০ জন কর্মচারী রয়েছেন এবং বিসিকের ৩-৪টি প্লট মিলে তাদের প্রতিষ্ঠান। সিটি লুব ওয়েল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডেরর পাশের প্রতিষ্ঠানটি কনজ্যুমার। পরিষ্কার সামগ্রী তৈরির এ প্রতিষ্ঠানের আশপাশে ৩-৪টি প্লট খালি রয়েছে। 

জানতে চাইলে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রোডাকশন ম্যানেজার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানালেন, খালি সব প্লট পিটি কনজ্যুমার অন্যদের থেকে ভাড়া ও কিনে নিয়েছে। পিটি কনজ্যুমারে মোট কর্মকর্তা কর্মচারী ৩০ জন। পাশের চৌধুরী সয়াবিন অ্যান্ড রাইস তাদের অধীন রয়েছে ৪টি প্লট। বিসিকের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান নেক্সট ফুড। তাদের অধীনে রয়েছে অন্তত ৪-৫টি প্লট। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিকের একজন উদ্যোক্তা জানান, নেক্সট ফুড আশপাশের অনেক প্লট কিনে নিয়েছে। লক্ষ্মীপুর বিসিক এখন ৩-৪টি কোম্পানির অধীন চলে যাচ্ছে। 

মোবারক পলিমালের মালিক জাকির হোসেন জানান, সরকারি সহায়তায় বিসিকের জায়গার মূল্য কম। এটা ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য ছিল একটা সুযোগ; কিন্তু এখন লক্ষ্মীপুর বিসিকের জায়গা চলে যাচ্ছে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের দখলে। আবার অনেকে যে কোনো নামে একটা প্লট বরাদ্দ নিয়ে দীর্ঘদিন খালি রেখে দিয়েছে।

লক্ষ্মীপুর শিল্পনগরীর অফিস সূত্রে জানা যায়, কর্মসংস্থানের দিক থেকে বিসিকের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান নেক্সট ফুড অ্যান্ড বেভারেজ। এখানে প্রায় ৫শ’ জন শ্রমিক, অন্য আরো ৩-৪টি প্রতিষ্ঠানে ৩০-৪০ জন হারে কর্মচারী রয়েছে। বাকি চালু প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৪-৫ জন হারে শ্রমিক রয়েছে। 

আবদুল মতিন নামের স্থানীয় এক শ্রমিক জানায়, প্রকৃত শিল্প উদ্যোক্তাদের কাছে প্লট বরাদ্দ হলে এবং সে অনুসারে শিল্প গড়ে উঠলে লক্ষ্মীপুর বিসিকে প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হতো। 

বিসিক শিল্পনগরীর প্রধান কর্মকর্তা রাকিব উদ্দিন জানান, লক্ষ্মীপুর বিসিকে বরাদ্দপ্রাপ্ত সব প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে গেলে প্রায় ১০ হাজার মানুষ কাজ পেতো। প্রথমে কিছু অব্যবস্থপনা হলেও, বর্তমানে কোন অনিয়ম নেই এবং সব প্লটে শিল্প ইউনিট স্থাপনের জন্য তারা কারখানা মালিকদের তাগাদা দিচ্ছেন। 

অন্যদিকে জেলা কার্যালয়ের প্রধান মো.মাকছুদুর রহমান জানান, বিসিক শিল্প নগরীর রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর অবস্থা নাজুক। এসব কারণে প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে না এবং বেশি লোককে কাজ দেওয়া যাচ্ছে না।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh