পাবনায় ভুল চিকিৎসায় প্রসুতির মৃত্যুর অভিযোগ

পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২২, ০১:০৯ পিএম

রুবিয়া-ফয়েজ ক্লিনিক। ছবি: পাবনা প্রতিনিধি

রুবিয়া-ফয়েজ ক্লিনিক। ছবি: পাবনা প্রতিনিধি

ভুল চিকিৎসায় এক প্রসুতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বেসরকারি রুবিয়া-ফয়েজ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে। গাইনি চিকিৎসক না হয়েও ক্লিনিকটির পরিচালক ডা. মো. আব্দুর রহিম খান নিজে ওই প্রসুতির অস্ত্রপ্রচার করেন। ভুল অপারেশনের কারণে মৃত্যু হয় প্রসুতির ও শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক। 

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।

গত শুক্রবার (১৩ মে) সাঁথিয়া উপজেলার রুবিয়া-ফয়েজ নামে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে শ্যামলী খাতুন নামে এক মায়ের। 

শ্যামলী উপজেলার তেতুলতলা স্বরুপ গ্রামের দিন মজুর খাইরুল ইসলামের স্ত্রী। 

প্রসব বেদনা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে উপজেলার একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি হন শ্যামলী। সেই রাতেই স্থানীয় দালাল চক্র শ্যামলীর পরিবারকে ফুসলিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে এই ক্লিনিকে ভর্তি করান। শুক্রবার সকালে ক্লিনিকের মালিক নিজেই রোগীকে (অ্যানেস্থেশিয়া) অজ্ঞান করে অস্ত্রপ্রচার করেন। এতে অধিক রক্তক্ষরণে অপারেশনের টেবিলেই শ্যামলীর মৃত্যু ঘটে। এসময় নবজাতক শিশুর জন্ম হলেও তার দেহের বিভিন্ন স্থানে ছুরির আঘাত রয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগী পরিবার। 

এদিকে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ধামাচাপা দিতে রোগীর স্বজনদের ডেকে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে পোস্টমর্টেম না করেই অ্যাম্বুলেন্স ডেকে রোগীর মৃতদেহ বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

রোগীর স্বজন ও স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ক্লিনিকটির বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ এবারই প্রথম নয়। এর আগেও ভুল চিকিৎসায় বেশ কিছু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এই সব বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে কঠিন প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ওই চিকিৎসকের লাইসেন্স বাতিলের দাবি করেন তারা। একই সাথে ভুক্তভোগী পরিবারকে আইনী সহযোগিতাসহ ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্য আর্থিক ব্যবস্থার দাবি জানান তারা। 

অভিযুক্ত ক্লিনিকের পরিচালক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সব নিয়ম অনুসরণ করেই তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। অপারেশনের সময় সেখানে গাইনি চিকিৎসক ডা. মাহফুজা আহম্মেদ উপস্থিত ছিলেন। এখানে আমাদের কিছুই করার ছিল না। রোগীর অন্য সমস্যা ছিল। 

এদিকে পরিচালকের এই দাবি মিথ্যা বলেছেন ডা. মাহফুজা আহম্মেদ।

তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি আমি সেখানে ছিলাম না। আমি প্রতি শুক্রবার সেখানে চেম্বার করি। আমার জন্য অনেক রোগী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ওষুধ কোম্পানির অনেকই আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ঘটনারদিন আমি একটু দেরিতে সেখানে গিয়েছিলাম। কী কারণে তিনি আমার নাম ব্যবহার করছেন সেটা তিনিই বলতে পারবেন। 

এ বিষয়ে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জামাল আহম্মেদ বলেন, অতীতে এই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিয়োগ রয়েছে আমাদের কাছে। এই ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ওই ডাক্তারের অনিয়মের প্রমান পাওয়া গেছে। ওই সময় কোনো গাইনি ডাক্তার ছিলেন না। সে তার নিজের দোষ গোপন করার জন্য অন্যের উপরে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন। 

সাঁথিয়া থানার ওসি আসিফ মো. সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি আমরা শুনেছি। তবে এখনো থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। 

এই ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা এখন আতঙ্ক ও ভয়ের মধ্যে রয়েছেন। এই সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার ভয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। 

প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন প্রশাসন। আর লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh