তাহমিস কাভেসি : বর্তমানে বহাল তবিয়তে চলা বিশ্বের প্রাচীনতম পরিচিত এ ক্যাফেটি তুরস্কের গাজিয়ানটেপে অবস্থিত। ক্যাফেটি সম্পর্কে তেমন কিছু জানা না গেলেও বলা যায়, ক্যাফেটি এখনও অনেক বেশি প্রাণবন্ত। যদিও এর অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ক্যাফেটি এখনও কফির সনাতন স্বাদ ধরে রেখেছে। লোনলি প্ল্যানেটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্যাফেটিতে ঐতিহ্যবাহী একধরনের কফি বিক্রি হয়, যা যথেষ্ট ঘন।
কুইন্স লেন কফি হাউজ : অক্সফোর্ডের কুইন্স লেনে অবস্থিত, এই কফি হাউসটি প্রথম ১৬৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এটি ইউরোপের প্রাচীনতম একটি ক্যাফে। তবে গত কয়েক দশক ধরে পরিবর্তনের দিকে ঝুঁকেছে এ কফি হাউজটি। যদিও এই দাবি কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ। অক্সফোর্ডের প্রথম কফিহাউসটি কুইন্স লেনে স্থাপিত হলেও বর্তমানে ক্যাফেটি স্থান পরিবর্তন করেছে। অক্সফোর্ড জিউয়িস হেরিটেজ কমিটির মতে, ক্যাফেটির ইতিহাস এবং এর অবস্থান এখনও ১৭ শতকের মাঝামাঝি ফিরিয়ে নিয়ে যায়। ক্যাফেটি সিরিয়া থেকে আসা সার্কেস জ্যাকবাস নামক এক ইহুদি প্রতিষ্ঠা করেছিল বলে জানা যায়।
ক্যাফে প্রোকোপ : ১৬৮৯ সালে প্রথম প্রতিষ্ঠিত এ ক্যাফেটি সিসিলিয়ানদের (ইতালি শাসিত ভূমধ্যসাগরের বৃহত্তম দ্বীপের অধিবাসী) উদ্যোগে তৈরি করা হয়। এটি লে প্রোকোপ নামেও পরিচিত। লিটারেয়ার বা সাহিত্য সাধনার জন্য ক্যাফেটি একটি ক্লাসিক উদাহরণ। দাবা খেলাসহ সাহিত্যের জন্য এ ক্যাফের জুড়ি মেলা ভার। ৮০-এর দশকের শেষের দিকে পর্যটকদের কথা ভেবে এটি সংস্কার করা হয়।
ক্যাফে ফ্লোরিয়ান : ১৭২০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইতালির ভেনিসের মূল ভিত্তি হয়ে আছে ক্যাফেটি। বৈচিত্রপূর্ণ সাজসজ্জা ছাড়াও ক্যাফেটির আলাদা কিছু বৈচিত্র্যপূর্ণ আকর্ষণ রয়েছে। ক্লদ মোনে ও অ্যান্ডি ওয়ারহলের মতো বিখ্যাত শিল্পীরাও এই ক্যাফেটিতে বসতেন।
অ্যান্তিকো ক্যাফে গ্রেসো : ইতালির স্মৃতিবিজড়িত কফি সংস্কৃতির বিষয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই। অ্যান্তিকো ক্যাফে গ্রেসো নামে ক্যাফেটিকে 'ক্যাফে গ্রেসো' ও বলা হয়। ১৭৬০ সালে নিকোলা ডেলা মাদালেনা নামে একজন গ্রিক প্রথম এ ক্যাফেটি চালু করেন। সেই সময়ে বিপ্লবী, শৈল্পিক এবং বুদ্ধিজীবীদের দ্বিতীয় বাড়িতে পরিণত হয়েছিল ক্যাফেটি। শেলি, কিটস এবং প্রিন্সেস ডি মতো ব্যক্তিরা এখানে কফি খেতে আসতেন!
এল-ফিশাওয়ে ক্যাফে : ১৭৯৭ সালে নেপোলিয়নের মিশর আক্রমণের এক বছর আগে এ ক্যাফেটি কায়রোতে চালু হয়। এল-ফিশাওয়ে মূলত একটি পারিবারিক নাম, বর্তমানে পরিবারটির সপ্তম প্রজন্ম ক্যাফেটি পরিচালনা করছে। বন্ধুরা যাতে কফির জন্য জড়ো হতে পারে সেজন্য এ ক্যাফেটি খোলা হয়। পুরোনো হয়ে গেলেও এল-ফিশাওয়ে এখনও প্রাণবন্ত। ক্যাফেটিতে বিশাল আকৃতির আয়না ও ঝুলন্ত ঝাড়বাতি রয়েছে। প্রচুর আয়নার কারণে ফরাসিরা একে মিরর ক্যাফে বলে উল্লেখ করে।
ক্যাফে টরটোনি : ১৮৫৮ সালে চালু হওয়া এ ক্যাফেটি মূলত প্যারিসিয়ান ধাঁচের। আর্জেন্টিনার বুয়েনস এয়ারে স্থাপিত এ ক্যাফেটি প্যারিসের জাঁ তোয়া নামক এক ব্যক্তি তৈরি করেন। তবে তার সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায় না। এই ক্যাফেটির মতো একই নামে ফ্রান্সের প্যারিসেও একটি ক্যাফে ছিল। দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে পুরোনো ক্যাফে এটি। যদিও ফরাসি ক্যাফেটির এখন কোনো অস্তিত্ব নেই, তবে আর্জেন্টিনার কফি হাউসটি এখনও টিকে রয়েছে বহাল তবিয়তে।
নিউইয়র্ক ক্যাভেহাজ : হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে অবস্থিত এ ক্যাফেটির বয়স ১২৫ বছর। ইতালীয় রেনেসাঁর কথা মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছিল এই কফি হাউসটি। এর দরজায় পা রাখার সাথে সাথে জাঁকজমকপূর্ণ সজ্জা দেখে মুগ্ধ হতে বাধ্য আপনি। সিএনএন জানিয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ক্যাফে তৈরির উদ্দেশে এটি তৈরি হয়।
কনফেইটেরিয়া কলম্বো : এটি আরেকটি জাঁকজমকপূর্ণ ক্যাফে, যেটি বইয়ের জন্য বিখ্যাত। ১৮৯৪ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে এ ক্যাফেটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ক্যাফেটি মূলত সমসাময়িক বেলে ইপোক-এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয়েছিল। এর উঁচু খিলানযুক্ত সিলিং, কাঠের সুসজ্জিত টেবিল ও মেঝেতে পড়া হলুদ আভা ক্যাফেটিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ইউরোপীয় প্রভাব থাকা সত্ত্বেও, পুরো ক্যাফেতে একটি স্বতন্ত্র ভাব রয়েছে। এর মেনুতেও তা প্রতিফলিত হয়।
ক্যাফে রেজিও : নিউইয়র্কে অবস্থিত এ ক্যাফেটি ১৯২৭ সালে তৈরি করা হয়। মূলত ইতালির ক্যাফে রেজিও থেকে থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এ নাম রাখা হয় ক্যাফেটির। প্রথমে সেলুন হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল এ ক্যাফেটি। পরবর্তীতে এটি আমেরিকার আধুনিক কবি, লেখক, রাজনীতিবিদ এবং শিল্পীদের অত্যন্ত প্রিয় জায়গা হয়ে দাঁড়ায়। অনেকের মতে, এই ক্যাফের কারণে আমেরিকানরা এসপ্রেসো কফিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।