ধান কাটার লোক নেই, কৃষকদের পাশে স্কুল শিক্ষার্থীরা

নড়াইল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২২, ০৬:১৪ পিএম | আপডেট: ১৫ মে ২০২২, ০৬:১৬ পিএম

গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ধান কাটছেন। ছবি: নড়াইল প্রতিনিধি

গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ধান কাটছেন। ছবি: নড়াইল প্রতিনিধি

সম্প্রতি দেশে বোরো ধান কাটার মৌসুম চলছে। কিন্তু শ্রমিক সংকটে অনেক কৃষক জমির ধান কাটতে পারছেন না। অসচ্ছল কৃষকরা এ অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এ পরিস্থিতিতে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন নড়াইলের গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

গত শুক্রবার (১৩ মে) সকাল ৮টায় তারা নিজেদের উদ্যোগে তিনদিনব্যাপী ধান কাটার কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আজ রবিবার (১৫ মে) দুপুরে তাদের এ ধান কাটার কর্মসূচি শেষ হয়। এ কর্মসূচিতে ৩১৫ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।

তিনদিনে প্রায় ১৫ বিঘা জমির ধান কেটেছেন তারা। শুধু ধান কাটাই নয় তারা সেসব ধান কৃষকদের বাড়িতেও পৌঁছে দিয়েছেন। এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগে এলাকার কৃষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ দারুণ খুশি হয়েছেন।

গুয়াখোলা গ্রামের প্রতাপ কুমার পাল বলেন, বর্তমানে ধান কাটার জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তিনবেলা খাবারসহ জনপ্রতি শ্রমিকের মূল্য গুণতে হচ্ছে এক হাজার টাকা। তাও ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। গুয়া-খোলা স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা মিলে আমার ৬০ শতক জমি ধান প্রায় ১০ মিনিটে কেটে দিয়েছেন। এই দুর্যোগের সময় তাদের পাশে পেয়ে আমি ভীষণ খুশি। অপূর্ব সরকার, হাসিদা রানী, মহাদেব সরকারসহ এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষ বলেন, স্কুলের ছেলে-মেয়েরা যে উদ্যোগ নিয়ে আমাদের ধান কেটে দিয়েছে, তাতে আমরা মহাখুশি। এতে অনেক উপকার হয়েছে। 

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৌমিত্র গোস্বামী বলে, শ্রমিক সংকটকালে আমাদের বিদ্যালয়ের ৩১৫ জন ছাত্রছাত্রী মাঠে নেমে ধান কেটে দিয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা দেশের অন্যান্য এলাকাতেও সবাই কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে ধান কাটতে তাদের পাশে দাঁড়াবেন। 

সোমা ও স্বর্ণালি বিশ্বাসসহ বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানায়, ঘূর্ণিঝড় আসানির কারণে কৃষকদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। ফসল দ্রুত ঘরে তুলতে আমরা কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছি।

শিক্ষক তাপস পাঠক ও স্বপন কুমার সেন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ জমিতে পানি জমে গেছে। ধানে অঙ্কুরোদগম হয়ে যাচ্ছে। এ সংকটময় মুহূর্তে আমরা এলাকার কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে। জেলা শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে বিদ্যালয়টির অবস্থান হলেও আমরা সবসময় সৃজনশীল কাজে থাকতে চাই।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, বোরো ধানের ভরা মৌসুমে বর্তমানে শ্রমিক সংকট চলছে। পাশাপাশি ‘আসানি’ ঝড়ের প্রভাবে গত তিন থেকে চারদিন ধরে মাঝে-মধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে পানি জমে অনেক ধানক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, এলাকার গরিব কৃষকদের ধান কেটে দিবো। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ তিনদিন ধান কাটার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে শনিবার সংরক্ষিত ছুটি ও রবিবার বৌদ্ধপূর্ণিমার ছুটি মিলে তিনদিন ধান কাটার জন্য কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। 

তিনি আরো বলেন, এই তিন দিনে অন্তত ২০ জন কৃষকের প্রায় ১৫ বিঘা জমির ধান বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ রেখে ১১টি সেক্টরে ভাগ হয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ধান কেটে দিয়েছেন। পড়ালেখার পাশাপাশি আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সবসময় ভালো ও মানবিক কাজের সাথে থাকতে চান। এই ধারাবাহিকতায় আমরা ধান কেটেছি। ভবিষ্যতেও ভালো কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে চাই। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নড়াইলের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, নড়াইল জেলায় এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ৪৮ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ৪৯ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে। সময় মতো বীজ, সারসহ অন্যান্য উপকরণ ঠিক মতো পাওয়ায় ধান চাষে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়নি। এছাড়া প্রণোদনার আওতায় নয় হাজার কৃষককে হাইব্রিড এবং ছয় হাজার কৃষককে উফশী জাতের বীজ ও সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। মানভেদে বর্তমানে মনপ্রতি বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১২০০ টাকায়। ধানের দাম সন্তোষজনক হওয়ায় খুশি কৃষকেরা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh