ধানের ভরা মৌসুমেও কুষ্টিয়ায় চড়া চালের দাম

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২২ মে ২০২২, ০৫:২১ পিএম

কুষ্টিয়ায় চড়া চালের দাম। ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়ায় চড়া চালের দাম। ছবি: সংগৃহীত

ধানের ভরা মৌসুমেও কুষ্টিয়ায় চড়া চালের দাম। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। তারা দ্রুত চালের দাম কমানোর দাবি জানিয়েছেন। এদিকে চালের দাম নিয়ে বরাবরের মতোই খুচরা বিক্রেতা এবং মিলমালিকেরা একে অপরকে দুষছেন।

কুষ্টিয়ার বড়বাজার, পৌরবাজার, চৌড়হাস বাজারসহ কয়েকটি বাজারের খুচরা বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কয়েক দফায় চালের দাম বাড়ার পর আশা ছিল চলতি বোরো মৌসুমে নতুন ধান ওঠার পর চালের বাজার কমের দিকে যাবে। কিন্তু ধানের এই ভরা মৌসুমেও চালের দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই।

চালের দাম কয়েক দফায় বাড়ার কারণে গত ২০ মার্চ খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারসহ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি দল কুষ্টিয়ার চালকলগুলো পরিদর্শনে আসেন এবং কুষ্টিয়ার মিল মালিক এবং ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে মিল মালিকদের প্রতি মন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং সামনের দিকে চালের দাম কমানোর জন্য নির্দেশ দেন। সেই সময় মন্ত্রীর সামনে মিল মালিকেরা চালের দাম কেজিপ্রতি ২ টাকা কমানোর ঘোষণা দিলেও তা কার্যকর করেননি।

শুধু চালের দাম কমানোর ঘোষণাই না, বৈঠকে মিল মালিকেরা বলেছিলেন, কিছুদিন পর বোরো মৌসুম তখন নতুন ধান ওঠার পর চালের দাম আরো কমে যাবে। কিন্তু কুষ্টিয়ার খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, ধানের এ ভরা মৌসুমেও চালের দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। বেশি দামে কিনে এনে বেশি দামেই বিক্রি করছেন।

কুষ্টিয়ার মোল্লাতেঘরিয়া এলাকার টুটুল বলেন, ‘আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ, দফায় দফায় বেড়ে ৫০ টাকার চাল এখন ৬৪ টাকা। সরকার যখন চাপ দেয়, তখন চালের দাম কমালেও কমে কেজিতে ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা। এটা জনগণের সাথে একটা ফাজলামি। যা আয় করি, তা যদি চাল কিনতে চলে যায়, তাহলে অন্যান্য জিনিস কিনব কীভাবে? চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’

কুষ্টিয়া পৌরবাজারের শাপলা ট্রেডার্সের মালিক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা দাম বাড়াতে পারি না। লাভও করি সীমিত। প্রতিদিনই চালের দাম বাড়তির দিকে থাকে। আমরা মিনিকেট নতুন চাল ৬০ টাকা এবং পুরোনো চাল ৬২ টাকা কেজি দরে কিনে ৬২ টাকা এবং ৬৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। বেশি দামে বিক্রি করার কোনো সুযোগ আমাদের নেই। মাঝেমধ্যেই এখানে অফিসাররা আসেন এবং দরদাম চেক করে যান।’

এদিকে মিল মালিকদের দাবি নতুন করে চালের দাম বাড়েনি। তবে আবহাওয়া খারাপ থাকায় এখনো বাজারে নতুন ধান তেমনভাবে ওঠেনি। যে পরিমাণের ধান বাজারে উঠছে, তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। সেই কারণে ধানের দামও বেশি। আর বেশি দামে ধান কেনা লাগলে তো চালের দাম কমানো সম্ভব হয় না।

জানতে চাইলে কুষ্টিয়া চালকল মালিক সমিতির নেতা ওমর ফারুক বলেন, ‘মিল গেট থেকে যে দামে চাল বিক্রি করা হচ্ছে, খুচরা বাজারে দাম তার চেয়ে অনেক বেশি। তদারকির অভাবে খুচরা বাজারে বেশি দামে চাল বিক্রি হলে এর দায়ভার মিল মালিকদের না।’

হাবিবুর রহমান নামে আরেক মিল মালিক বলেন, ‘এক সময় এ ব্যবসায় ভালো লাভ থাকায় এখন অনেক বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালের ব্যবসায় আসছে। আগে শুধু মিলারদের কাছে ধান মজুত থাকত, কিন্তু এখন ওই সব ব্যবসায়ীদের কাছেও মজুত আছে। আবার গ্রামে এবং মাঠ পর্যায়েও অনেক সিজনাল ব্যবসায়ী হয়েছেন, যারা নিজ এলাকায় গুদাম করে ধানের মজুত করছেন। গত কয়েক বছর ধানের বাজার ভালো থাকায় অনেক চাষিও ধান আটকে রাখছেন। এসব কারণে এখন ধানের উৎপাদন ভালো হলেও সংকট দেখা দিচ্ছে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে এখন মাঠ পর্যায় থেকে তদারকি দরকার।’

কুষ্টিয়ার সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সভাপতি রফিকুল ইসলাম টুকু বলেন, ‘চালের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে মিল মালিকদের পাশাপাশি আরো অনেকেই দায়ী। তাই খাদ্য বিভাগ এবং কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। মনিটরিং আরো বেশি জোরদার করতে হবে এবং এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তবেই বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট আরো কয়েকটি দপ্তরের মাধ্যমে আমরা কঠোরভাবে বাজার পর্যবেক্ষণ করছি। কেউ অবৈধভাবে মজুত বা অধিক মুনাফার জন্য বাজারে চালের দাম বাড়ানো বা বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh