দ্বিতীয় দিন শেষে লঙ্কানদের দাপট

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২২, ০৬:২১ পিএম | আপডেট: ২৪ মে ২০২২, ০৬:৩২ পিএম

উইকেট নেওয়ার পর উচ্ছ্বাসিত লঙ্কান ক্রিকেটাররা। ছবি: ক্রিকইনফো

উইকেট নেওয়ার পর উচ্ছ্বাসিত লঙ্কান ক্রিকেটাররা। ছবি: ক্রিকইনফো

আগের দিনের অপরাজিত দুই ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের ব্যাটে দ্বিতীয় দিনের শুরুটা দারুণ করেছিল বাংলাদেশ। তবে লিটন ফিরে যাওয়ার পর ব্যাটিংয়ে ছন্দ পতন ঘটে। একই ওভারে ফিরে যান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও। বাংলাদেশের ইনিংসের বাকিটা জুড়ে শুধুই মুশফিক। এই অভিজ্ঞ ব্যাটারের অপরাজিত ১৭৫ রানের সুবাদে প্রথম ইনিংসে ৩৬৫ রান তুলে বাংলাদেশ। জবাবে ২ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রান তুলে দিনের খেলা শেষ করে শ্রীলঙ্কা। আট উইকেট হাতে নিয়ে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের চেয়ে এখনও ২২২ রানে পিছিয়ে আছে লঙ্কানরা।

বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে ওপেন করেন খালেদ আহমেদ। লঙ্কানদের ইনিংসের প্রথম ওভারেই উইকেটের সম্ভাবনা জাগান এই পেসার। প্রথম ওভারের ষষ্ঠ বলে ওশাদা ফার্নান্দোর বিপক্ষে কট বিহাইন্ডের আবেদন করে বাংলাদেশ। আর তাতে সাড়া দেন আম্পায়ারও। কিন্তু এ যাত্রায় রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান এই ওপেনার। 

লাঞ্চ বিরতির পর প্রথম ঘন্টায় দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন দুই লঙ্কান ওপেনার। সাকিব আল হাসানের বিপক্ষে কিছুটা রক্ষণাত্মক কৌশলে খেললেও বাকি বোলারদের বিপক্ষে ব্যাট চালিয়েছেন ওয়ানডে মেজাজে। লঙ্কানদের ইনিংসের ১৫তম ওভারে বোলিংয়ে ছিলেন তাইজুল ইসলাম। এই ওভারের তৃতীয় বলটি অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরে পড়ে ওশাদার প্যাডে আঘাত হানে এবং লেগ বিফোরের অবেদন করেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা।

যদিও তাতে সাড়া দেননি আম্পায়ার। তবে রিভিউ নেন মুমিনুল হক। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। কারণ বলের হিটিং ছিল আম্পায়ার্স কল। দিনের দ্বিতীয় সেশনে উইকেট বঞ্চিত থেকেছেন বাংলাদেশের বোলাররা। চা বিরতি থেকে ফিরে আবারও পেস আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। ইনিংসের ২৬তম ওভারে এবাদতের ফুল লেংথের বল সরাসরি আঘাত হানে করুনারত্নের প্যাডে। ফিল্ডাররা আবেদন করলেও আম্পায়ার তাতে সাড়া দেননি।

এবার অবশ্য রিভিউ নেয়নি বাংলাদেশ। কিন্তু পরে দেখা যায় এটা আউট ছিল। এর দুই বল পরই অবশ্য উইকেট পেয়েছেন এবাদত। সেই ওভারের পঞ্চম বলে এজ হয়ে প্রথম স্লিপে থাকা শান্তর হাতে ধরা পড়েন ওশাদা। এই ওপেনারকে ৫৭ রানে ফিরিয়ে লঙ্কান শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন এবাদত।

এর পরের ওভারে ফিরতে পারতেন করুনারত্নেও। ২৭তম ওভারে তাইজুলের বলে শট লেগে ক্যাচ মিস করেছেন জয়। ইনিংসের ৪৩ তম ওভারের পঞ্চম বল করুনারত্নের পায়ে লাগলেও আউট দেননি আম্পায়ার। এরপর রিভিউ নেন মুমিনুল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি, উল্টো একটি রিভিউ নষ্ট করেছে বাংলাদেশ।

শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলছিলেন কুশল মেন্ডিস। উইকেটে এসে সময় নিয়েছেন, থিতু হয়েছেন কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি। সাকিবের বলে ডিফেন্স করতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন এই টপ অর্ডার ব্যাটার। সাজঘরে ফেরার আগে ৪৯ বলে ১১ রান করেছেন তিনি।

এর আগে ৫ উইকেটে ২৭৭ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। সকালে দেখে-শুনে খেলেন আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার লিটন এবং মুশফিক। তবে এদিন সকালেও দুর্দান্ত সুইং পেয়েছেন কাসুন রাজিথা। এই পেসারের করা ইনিংসের ৯৩তম ওভারের প্রথম বল খেলতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ধরা পড়েন লিটন দাস। এই ব্যাটারকে ফিরিয়ে ২৭২ রানের জুঁটি ভাঙেন রাজিথা। যা ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের রেকর্ড জুঁটি। লিটন সাজঘরে ফেরার আগে ২৪৬ বলে ১৪১ রান করেছেন। যা টেস্ট ক্রিকেটে তার সর্বোচ্চ ইনিংস।

লিটনের পর একই ওভারের চার নম্বর বলে মোসাদ্দেকেও ফিরিয়েছেন রাজিথা। দীর্ঘদিন পর দলে সুযোগ পাওয়া এই অলরাউন্ডার ফিরেছেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন। অফ স্ট্যাম্পের সামান্য বাইরে করা লেংথ বল ব্যাটের কানা ছুঁয়ে উইকেটকিপার নিরোশান ডিকওয়েলার গ্লাভসে জমা পড়লে ডাক মেরে সাজঘরে ফেরেন তিনি। আর তাতে ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন রাজিথা।

দ্রুত দুই উইকেট পড়ে গেলেও আগের দিন যেখানে শেষ করেছিলেন, আজ সেখান থেকেই শুরু করেন মুশফিক। দিনের শুরুতে পেসারদের বিপক্ষে দেখে শুনে খেললেও স্পিনারদের বিপক্ষে খেলেছেন ফুরফুরে মেজাজে। এদিন দুর্দান্ত কিছু কভার ড্রাইভ কিংবা স্কয়ার কাট খেলতে দেখা গেছে মুশফিকের ব্যাটে। তাছাড়া রিভার্স সুইপেও বেশ সাবলীলভাবে ছিলেন তিনি। রমেশ মেন্ডিসের করা ইনিংসের ১০১তম ওভারের দ্বিতীয় বল ফাইন লেগে ঠেলে দিয়ে দুই রান নেন মুশফিক। আর তাতে ২৯১ বল খেলে ১৫০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।

মোসাদ্দেক দ্রুত আউট হয়ে গেলেও ভালো শুরু করেছিলেন তাইজুল ইসলাম। বিশেষ করে স্পিনারদের বিপক্ষে দারুণ কিছু শট খেলেছেন। তবে উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। লাঞ্চ বিরতির মিনিট দশেক আগে আসিথা ফার্নান্দোর লেন্থ বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটকিপার ডিকওয়েলার হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন তিনি। এর আগে ৩৭ বলে ১৫ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে।

তাইজুলের পরপরই সাজঘরে ফিরেছেন খালেদ আহমেদও। আসিথার করা ১০৮তম ওভারের প্রথম বলে ডাক মেরে ফিরেছেন তিনি। পরের বলেই আবার এবাদত হোসেনের বিপক্ষে ক্যাচের আবেদন করেন আসিথা। আম্পায়ারও তাতে সাড়া দেন। বাংলাদেশের ইনিংস এখানেই থেমে যেতে পারতো। তবে সাথে সাথেই রিভিউ নেন এবাদত। আর তাতে দেখা যায় বল তার ব্যাট স্পর্শ করেনি।

লাঞ্চের নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশের ৯ উইকেটের পতন হওয়ায় প্রথম সেশনের সময় কিছুটা বাড়িয়ে দেন আম্পায়াররা। এরপর মিনিট ত্রিশেক বাড়তি সময় খেলা চললেও বাংলাদেশ আর কোনো উইকেট হারায়নি। ৯ উইকেটে ৩৬১ রান নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

লাঞ্চ বিরতি থেকে ফিরে রান তোলায় মনোযোগ বাড়ান মুশফিক। এক প্রান্তে নড়বড়ে এবাদতকে সাথে নিয়েই ডাবল সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যেতে থাকেন মুশফিক। ১১৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মিড অনে রেখে দুই রান নেয়ার চেষ্টা করেন দুই ব্যাটার। এক রান সম্পন্ন করতে পারলেও দুই রান নিতে গিয়ে রান আউটে কাটা পড়েন এবাদত। আর তাতে ৩৬৫ রানে থামে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। মুশফিক ১৭৫ রান করে অপরাজিত থাকেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে)-

বাংলাদেশ (১ম ইনিংস): ৩৬৫/১০ (১১৬.২ ওভার) (মুশফিক ১৭৫*, লিটন ১৪১; রাজিথা ৫/৬৪, আসিথা ৪/৯৩)

শ্রীলঙ্কা (১ম ইনিংস): ১৪৩/২ (৪৬ ওভার) (করুনারত্নে ৬৬*, ওশাদা ৫৭, সাকিব ১/১৯, এবাদত ১/৩১)

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh