দক্ষিণ এশিয়ায় স্বাস্থ্যখাতে সর্বনিম্ন বরাদ্দ, অবস্থার উন্নয়ন জরুরি

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২২, ০২:১৯ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের সমসাময়িক স্বাস্থ্যসেবায় খরচ হওয়া জিডিপি রেশিও দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম। বাংলাদেশের নিচে একমাত্র আফগানিস্তান।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ১০ কোটি মানুষ চরম দরিদ্র হয়ে যায়। আমাদের দেশেও দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়া জনগোষ্ঠীর সংখ্যা না কমে ক্রমেই বাড়ছে। দেশের মোট স্বাস্থ্যব্যয় জিডিপির ২.৩৪ শতাংশ এবং মাথাপিছু স্বাস্থ্যব্যয় মাত্র ১০ ডলার। এক দশক ধরেই স্বাস্থ্যে সরকারি ব্যয় সর্বমোট সরকারি ব্যয়ের ৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। এ ব্যয় স্বল্প আয়ের দেশের তুলনায়ও কম। 

চলমান স্বাস্থ্যব্যবস্থায় চিকিৎসা খরচ বহন করতে গিয়ে অসংখ্য মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। অন্যান্য দেশে যেখানে বিনামূল্যে ও অতি সহজ উপায়ে জনগণকে চিকিৎসা ও ওষুধ দেওয়া হয়, সেখানে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। ২৪ শতাংশ মানুষের পারিবারিক আয়ের ১০ শতাংশ চলে যায় চিকিৎসা খরচ মেটাতে। ৮ শতাংশের বেশি মানুষ পারিবারিক আয়ের ২৫ শতাংশের বেশি খরচ করে এ খাতে। চিকিৎসার জন্য বাড়ি-জমি বিক্রি করে দিয়েছেন এ রকম মানুষও কম নয়। দেশে এক বছরের নিচে ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবায় কোনো বরাদ্দ নেই। সব মেডিক্যাল কলেজে হৃদরোগ, ক্যান্সার ও কিডনি রোগ চিকিৎসায় কোনো বরাদ্দ নেই। কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনসহ সুবিধাদি আধুনিকীকরণেও কোনো বরাদ্দ নেই। চরাঞ্চলের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। আর নগরে বস্তিবাসী চিকিৎসাসেবা নেওয়ায় পিছিয়ে আছে।

স্বাস্থ্যনীতি থাকলেও সেটি কার্যকর নয়। এছাড়া অন্যান্য দেশে জিডিপির বড় একটা অংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করলেও বাংলাদেশে বিনিয়োগ না বাড়ায় অনেককিছু অগ্রগতি হলেও পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উন্নীত করা উচিত। পাশাপাশি সেই অর্থ ব্যবহারেও যথাযথ নজরদারি থাকতে হবে। সবাই যেন স্বাস্থ্যসেবা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই হবে না, জনবল বাড়াতে হবে। সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা চালু করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা সামগ্রীর ওপর কর কমাতে হবে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো খুব খারাপ অবস্থায় আছে। এর পরিবর্তন দরকার। কমিউনিটি ক্লিনিকে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। জেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালগুলোতে মাথাপিছু বরাদ্দে সুষম বণ্টন হচ্ছে না। উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বরাদ্দ বিশ্লেষণেও অসমতা রয়েছে। আমাদের মাতৃ ও শিশু মৃত্যু কমেছে; কিন্তু স্বাস্থ্যে যে বৈষম্য বাড়ছে, সেটি খুবই দুঃখজনক। এ জন্য এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। গড় আয়ু বাড়লেও স্বাস্থ্যসেবা ভালো না থাকায় বাংলাদেশের মানুষ তাদের জীবনের শেষ ১০ বছর অসুস্থ থাকেন। এ জন্য একটি স্বাস্থ্য কমিশন জরুরি। 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh