নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ মে ২০২২, ১০:৩০ এএম | আপডেট: ২৭ মে ২০২২, ০৫:৫৯ পিএম
নিউ ইয়র্কে সর্ববৃহৎ বাংলা নববর্ষ উৎসব
নিউ ইয়র্কের লেভিটটাউন হলের বিশাল পরিসরের মিলনায়তন চত্বরে দিনব্যাপী বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ উদযাপিত হয়েছে। মহামারি উত্তরকালে এটিই ছিল নিউ ইয়র্কে সর্ববৃহৎ বাংলা নববর্ষ উৎসব।
শিল্পাঙ্গনের উদ্যোগে গত রবিবার (২২ মে) বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। ঢোল ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে শিল্পী ও দর্শক অংশ নেন ঢাকার আদলে সাজানো এ মঙ্গল শোভাযাত্রায়। এরপর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পাঙ্গনের শিল্পীবৃন্দ। পরিচালনায় ছিলেন বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী অনুপ বড়ুয়া। মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলনের সাথে সাথে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ সঙ্গীতের মাধ্যমে মঞ্চে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার উদ্বোধন করা হয়।
শিল্পাঙ্গনের নববর্ষ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মুক্তিযোদ্ধা, গীতিকার, সুরকার, কণ্ঠ ও চিত্রশিল্পী তাজুল ইমাম। তিনি শিল্পাঙ্গনের বাংলা সংস্কৃতিকে সমুন্নত রাখার প্রয়াসকে অভিনন্দন জানান। নববর্ষ উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক আহমেদ করিম নাসিম ও শিল্পাঙ্গনের সভাপতি আমর আশরাফ শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
নববর্ষ অনুষ্ঠানে শিশুকিশোরদের বাংলাদেশের প্রকৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সোনিয়া হক, মাহবুব রশীদ, মৃধা জসীম, আহমেদ করিম নাসিম, ও সাবরিনা মাহবুবের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করেন শিল্পী তাজুল ইমাম।
নববর্ষ অনুষ্ঠানে শিল্পাঙ্গনের পরামর্শে নাসাউ কাউন্টি নির্বাহীর পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয় তিন প্রজন্মের তিনজন প্রথিতযশা বাঙ্গালীকে। তারা হলেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শিল্পী তাজুল ইমাম, প্রকৌশলী ও সমাজকর্মী মাহমুদুল হাসান, এবং মেধাবী তরুণ পান্থ সাইয়েদ। আকতার কামালের সঞ্চালনায় নাসাউ কাউন্টির কর্মকর্তা গুণীজনদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন।
নববর্ষ অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয় আমাদের সংস্কৃতি ও জনজীবনের বিভিন্ন উপকরণের কিছু নমুনা দিয়ে সাজানো বিশেষ পর্ব, ‘বাংলার ঐতিহ্য’। সোনিয়া হকের পরিচালনায় এতে অংশ নেন সানিল আশরাফ, ফালাক জামান, সানজিদা রহমান, নাভিন আব্দুল্লাহ, রাকিন আব্দুল্লাহ, জারিফ ইসলাম, আয়ানা মাহিবা, আয়ানা জামান, এজেলিয়া জামান, আলানা হোসাইন, আর্শিয়া আহমেদ সাঈদা, আশফিয়া আহমেদ সাঈদা, মাহমুদা চৌধুরী, বিপাশা আহমেদ, রোমানা আশিক, খুরশিদা আলম লোপা, আনিকা লিয়াকৎ, আরহাম সিনহা, অনিক রহমান, মহিউদ্দিন আহমেদ সাঈদ, আনিকা তালিব, আদনিন তালিব ও আরিফ আহমেদ অর্ণব। সঙ্গীত সম্পাদনা করেন মাহাবুব রশীদ।
গুণী নৃত্যশিল্পী প্রিয়া ডায়েসের পরিচালনায় এক ঝাঁক শিক্ষার্থী বৈশাখের বিভিন্ন রূপ উপস্থাপন করে নৃত্যালেখ্য দিয়ে। গ্রন্থনায় ছিলেন আহমেদ করিম নাসিম।
তারকা শিল্পী আল-আমিন বাবুর সঙ্গীতায়োজনে আমন্ত্রিত আবৃত্তি শিল্পীবৃন্দ বৈশাখের কবিতা পরিবেশন করেন। বাশিরুল হকের পরিচালনায় এতে অংশ নেন লিয়ানা মানহা, হীরা চৌধুরী, ক্লারা রোজারিও, আনোয়ারুল হক, শুক্লা রায় ও তাহরিনা পারভীন।
শিল্পাঙ্গনের শিল্পীবৃন্দ পরিবেশন করেন কবিতা ও সমবেত সঙ্গীতের সমন্বয় আলেখ্যানুষ্ঠান। সঙ্গীতগুরু অনুপ বড়ুয়ার পরিচালনায় আবৃত্তি ও সঙ্গীতে অংশ নিয়েছেন সামিনা আশরাফ, মাহনাজ হাসান, ইশরাত আহামেদ, শাহপার ইসলাম, ফারজানা সুলতানা, মৌসুমী বড়ুয়া, সোনিয়া হক, সোনিয়া পান্না, শিরীন আক্তার, আফরিন খান, তাসনিম খান, সাকারা মহিউদ্দিন, সাবরিনা হোসেন, সামায়রা মাহিবা, নুসায়বাহ কবীর, পিঙ্কি চৌধুরী, তরুণ চন্দ, দীপ্তি বড়ুয়া, মাহমুদ চৌধুরী, আরিফ আহমেদ ও মোহাম্মদ শানু। কী-বোর্ডে ছিলেন রিপন, তবলায় শফিক, অক্টাপ্যাডে রীড ও গীটারে সাইদুজ্জামান।
আহমেদ করিম নাসিমের রচনা, পোশাক পরিকল্পনা, মঞ্চ সজ্জা ও নির্দেশনায় উপস্থাপিত হয় যাত্রাপালা ‘রানীর বনবাস’। অভিনয়ে অংশ নেন আকতার কামাল, স্বপন কবীর, শফিউল আলম, মৃধা জসীম, মুস্তফা মোর্শেদ, রবীন্দ্র দাস, গুপন দাস, নুসায়বাহ কবীর, শাহরুখ তাসনিম, সোনিয়া পান্না ও আহমেদ করিম নাসিম। নেপথ্যে ছিলেন জান্নাত সুলতানা।
অনুষ্ঠানের সর্বশেষ আকর্ষণ ছিল আমন্ত্রিত শিল্পী তাজুল ইমামের একক পরিবেশনা। আধুনিক ও লোকসঙ্গীতের এক অসাধারণ উপস্থাপনা দিয়ে তিনি দর্শকদের মাতিয়ে রাখেন।
অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্বের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন বেবী আজিজ আহমেদ, মাহনাজ হাসান, শাহপার ইসলাম, রাফিয়া খান ও সোনিয়া হক। বাংলা নববর্ষ অনুষ্ঠানের শব্দ ও আলোক নিয়ন্ত্রণে নিবিড় খান ও বিডি সাউন্ড।
নববর্ষ উৎসবে মঞ্চে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পাশাপাশি চলেছে পোশাক, অলংকার ও খাবারের প্রদর্শনী। আমন্ত্রিত দর্শকদের খাবার পরিবেশনের মাধ্যমে শিল্পাঙ্গনের নববর্ষ অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে।