ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২২, ১১:৩১ এএম
প্রতীকী ছবি
মেয়েদের মধ্যে বয়স ৪০ পার হতেই ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। খাদ্যাভ্যাসে অনিয়ম, ব্যায়ামের প্রতি অনীহা ও নিজের প্রতি যত্নের অভাব— নানা কারণেই শরীরের চারপাশে জমতে থাকে মেদের আস্তরণ।
আবার একদম ছিপছিপে চেহারা অনেকেই পসন্দ করেন না। কিন্তু সামান্য মেদসঞ্চয় ও শরীর ফুলেফেঁপে ওঠার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এতে যেমন কাজকর্মে সমস্যা হয়, শরীরে নানা রকম রোগ বাসা বাঁধে— তেমনই নিজের আত্মবিশ্বাসও চিড় খায়।
হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস ও অস্থিসন্ধির সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় মোটা হলে। এমনকি, একাধিক গবেষণায় হদিস মিলেছে, ক্যানসারের সাথেও সম্পর্ক রয়েছে স্থুলতার।
জিনঘটিত কারণে ও গঠনগত কারণে অনেকে মোটা হয়। সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বাকি সব কারণ কিন্তু আমাদের সৃষ্টি করা। যেমন, খাদ্যাভ্যাস, কায়িকশ্রম না করা, থাইরয়েড, মানসিক চাপ, হরমোন ও জীবনধারণ। এমন কিছু খাবার আমরা নিয়মিত খাচ্ছি যা দেহের মধ্যে প্রচুর ফ্যাটের জন্ম দিচ্ছে।
তাছাড়া জীবনের নানা ক্ষেত্রে আমরা এখন অতিরিক্ত যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়ছি। জামাকাপড় কাচা, ঘর পরিষ্কার কর, উবু হয়ে বসে তরকারি কাটা, মশলা বাটা মতো কাজ— অধিকাংশ বাড়িতেই এখন যন্ত্রের মাধ্যমেই করা হয়। দীর্ঘক্ষণ অফিসের ডেস্কে বসে কাজ, শরীরচর্চার অভাব— এই সবেরই ফল হলো স্থুলতা।
মানসিক চাপ বাড়লে অনেকের মধ্যেই বেশি খাওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায়। যা থেকে ওজন বাড়ে। থাইরয়েড থেকেও মোটা হয় অনেকে। আবার চল্লিশের পর মেনোপজের সময় এগিয়ে আসতে থাকে, শরীরে হরমোনজনিত নানা পরিবর্তন ঘটে। তাতেও অনেকের ওজন বাড়ে।
রোজ কায়িক পরিশ্রম কতটা করছি আর কতটা ক্যালরি খাচ্ছি সেটা বুঝতে হবে। মনে রাখবেন, চিত্রতারকারা আমাদের থেকে অনেক গুণ রোজগার করেন। তবুও শরীরের কথা ভেবে খাবারের ব্যাপারে অসম্ভব নিয়ন্ত্রণে থাকেন। লোভ সম্বরণ করতেই হবে। পরিমিত খাওয়া, বার-বার খাওয়া ভাল। মিষ্টি, ঘি, মাখন কম খেতে হবে।
সারাদিনে বারে বারে অল্প করে খাওয়াই বিধেয়। একবার ভারী খাওয়ার চার ঘণ্টা পর পরের খাবার খাওয়া উচিত। আমাদের সাধারণভাবে দৈনিক ১৬০০-১৮০০ ক্যালোরির দরকার হয়। সেই হিসাব করে সকালের ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, সন্ধ্যায় হালকা টিফিন ও ডিনারের সময়ের মধ্যে ঘণ্টাচারেক করে গ্যাপ থাকলে ভাল।
অনেকে বলেন সকালে খালি পেটে উষ্ণজলে মধু বা পাতিলেবুর রস খেলে ফ্যাট কমে। কিন্তু এই ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। আর ভুলেও রোগা হওয়ার ওষুধ খাবেন না। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মনে রাখবেন মধ্য কুড়ি বা তিরিশের কোঠায় আপনি যতটা খেতে পারতেন সেই পরিমাণটা চল্লিশে পৌঁছে কমাতেই হবে। শাকসবজি, ফল, প্রোটিনজাত দ্রব্য ডিম-দুধ বেশি করে খান। চায়ে চিনি বর্জন করতে পারলে ভাল। ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম ও মেডিটেশন জরুরি। সন্ধ্যা ৮টার পর যতটা সম্ভব কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বর্জন করুন।
অল্প হলেও ব্যায়াম করুন, কাছাকাছি দূরত্বে যেতে হাঁটুন। নিয়মিত হাঁটা খুব ভালো ব্যায়াম। প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়া সাইকেল চালানো ও সাঁতার কেটেও বাড়তি ওজন ঝেড়ে ফেলতে পারেন।
মানসিকভাবে হতাশা যেহেতু ওজন বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ সেক্ষেত্রে এটি কাটিয়ে উঠতে কিছুদিনের জন্য বেড়িয়ে আসতে পারেন। খুব দূরে কোথাও না হলেও কাছের কোনো বন্ধুর বাসায় না হয় গেলেন, যেখানে আপনি স্বস্তিবোধ করবেন।
তাই খাদ্যাভ্যাস আর জীবন যাপনে সামান্য পরিবর্তন এনে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন, সুস্থ থাকুন।