আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২২, ০৭:৫১ পিএম
রাশিয়ার বহুল আলোচিত নর্ডস্ট্রিম-১ গ্যাস পাইপলাইন। ছবি: রয়টার্স
ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর প্রথম থেকেই রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব দেশটির উপর নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে। কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে কোণঠাসা হওয়ার পরিবর্তে অর্থনৈতিকভাবে রাশিয়া আরো ফুলে ফেঁপে উঠছে। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম ১০০ দিনে জ্বালানি রপ্তানি থেকে ৯৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে দেশটি।
নতুন এক সমীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে রুশ জ্বালানি রপ্তানির বেশিরভাগ অংশই গেছে ইউরোপে। কিয়েভ পশ্চিমের কাছে মস্কোর সাথে সব ধরনের বাণিজ্য সম্পর্ক বিচ্ছিন্নের দাবি জানিয়ে আসলেও এক্ষেত্রে বাস্তবতা পুরোপুরি ভিন্ন।
আজ সোমবার (১৩ জুন) ফিনল্যান্ড ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) সমীক্ষার বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ১০০তম দিন পর্যন্ত রাশিয়া জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি রপ্তানি থেকে ৯৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে।
আজ সোমবার ইউক্রেন যুদ্ধের ১০৯তম দিন চলছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রুশ হামলা থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার জন্য ইউক্রেনকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছে। এছাড়াও, মস্কোর বিরুদ্ধে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়েছে।
তা সত্ত্বেও মস্কোর সাথে সব ধরনের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য কিয়েভ পশ্চিমের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে এসেছে। যুদ্ধের আগে রাশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪০ শতাংশ গ্যাস ও ২৭ শতাংশ তেলের জোগান দিতো।
এ মাসের শুরুর দিকে ইউরোপের দেশগুলোর এই জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা এ বছরের মধ্যেই রাশিয়া আমদানি করা গ্যাসের দুই তৃতীয়াংশ কমাবে। তেল আমদানিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আপাতত বিবেচনাধীন নয়।
সিআরইএয়ের প্রতিবেদন মতে, যুদ্ধের প্রথম ১০০ দিনে রাশিয়ার জীবাশ্ম ভিত্তিক জ্বালানি রপ্তানির ৬০ শতাংশের ক্রেতা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যার মূল্যমান প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলার।
সার্বিকভাবে, আমদানিকারকদের মধ্যে শীর্ষ স্থানগুলোতে আছে চীন (১৩ দশমিক ২ বিলিয়ন), জার্মানি (১২ দশমিক সাত বিলিয়ন), ইতালি (আট দশমিক দুই বিলিয়ন), নেদারল্যান্ডস (আট দশমিক চার বিলিয়ন), তুরস্ক (সাত বিলিয়ন), পোল্যান্ড (চার দশমিক ছয় বিলিয়ন) এবং ভারত (তিন দশমিক ছয় বিলিয়ন)।
রাশিয়ার জীবাশ্ম ভিত্তিক জ্বালানি থেকে পাওয়া রাজস্ব আসে মূলত ক্রুড (অপরিশোধিত) তেল বিক্রি করে। এই খাত থেকে ৪৮ দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার এসেছে। এরপরেই আছে পাইপলাইনের মাধ্যমে পাঠানো গ্যাস (২৫ দশমিক এক বিলিয়ন), তেলজাত পণ্য (১৩ দশমিক ছয় বিলিয়ন), এলএনজি (পাঁচ দশমিক তিন বিলিয়ন) এবং কয়লা (চার দশমিক আট বিলিয়ন)।
যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী রুশ পণ্য বর্জনের কারণে মে মাসে রপ্তানি কমে গেলেও, জীবাশ্ম ভিত্তিক জ্বালানির দাম বেড়ে যাওতে ক্রেমলিনের আয় কমেনি। বরং রপ্তানি থেকে আসা রাজস্ব নতুন নতুন রেকর্ড গড়েছে।
সিআরইএয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় রাশিয়ার রপ্তানি মূল্য এবছর ৬০ শতাংশ বেশি ছিল।
সিআরইএয়ের বিশ্লেষক লরি মিলিভির্তা বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু ফ্রান্স দেশটি থেকে এলএনজি আমদানি বাড়িয়েছে। রাশিয়ার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা মূলক কথায়, কাজে নয়।