ইভটিজিং প্রতিরোধ দিবস : জরুরি তবুও উপেক্ষিত

প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২২, ০৯:০১ পিএম | আপডেট: ১৩ জুন ২০২২, ০৯:০৪ পিএম

(বাঁ থেকে) শারমিন আক্তার শান্তা, খাদিজা আক্তার ইরা, হুমায়রা রহমান সেতু, নিপা আক্তার

(বাঁ থেকে) শারমিন আক্তার শান্তা, খাদিজা আক্তার ইরা, হুমায়রা রহমান সেতু, নিপা আক্তার

সভ্য সমাজের অসভ্য রূপ হচ্ছে ‘ইভটিজিং। এই নোংরা বিষয়টি দ্বারা সমাজের নারীরা প্রতিনিয়ত শারীরিক কিংবা মানসিকভাবে অপদস্ত হচ্ছেন। অনেক নারীকে যৌন নিপীড়ন বা ধর্ষণেরও শিকার হতে হয়। তারপরেও এ বিষয়ে তেমন কোনো জনসচেতনতা নেই। ১৩ জুনকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘ইভটিজিং প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দিলেও ২০১০ সালের পর তা যেন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। দিবসটি ঘিরে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীর ভাবনা ও মতামত তুলে ধরেছেন সানজিদা জান্নাত পিংকি।

সচেতনতাবোধই হতে পারে হাতিয়ার

ইভটিজিং নারীর জন্য অত্যন্ত অপমানের, লজ্জার, ঘৃণার প্রতিরূপ। ঘরের বাইরে গেলেই মানুষের কু-দৃষ্টি যেন একটি স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একা চলাফেরার সময় অধিকাংশ নারীই যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকে। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে সর্বত্রই এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অনেক সময় প্রতিবাদ করলেও কিছু কিছু জায়গায় চুপচাপ সহ্য করতে হয়। গণপরিবহনে এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি। অধিকাংশ নারীই চালকের সহকারী কিংবা পুরুষ যাত্রীদের আপত্তিকর স্পর্শের শিকার হন প্রতিনিয়ত। বিব্রত হয়ে প্রতিবাদ করার সাহসও করতে পারেন না, কোনোভাবে এড়িয়ে যেতে হয়। বিকল্প পরিবহনে যাতাযাতের সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়েই মেনে নিতে হচ্ছে এসব। এটি মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ব্যপকভাবে প্রভাব ফেলে। ইভটিজিং যেন আর কোনো মহামারী রূপ ধারণ করতে না পারে সেজন্য সমাজের সকলের সচেতনতা বোধের উদয় হোক।

শারমিন আক্তার শান্তা, শিক্ষার্থী, ২য় বর্ষ, আইন বিভাগ

ইভটিজিং প্রতিরোধে পারিবারিক সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ

ইভটিজিং বর্তমানে মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। নোংরা সমাজ ব্যবস্থাই এর জন্য দায়ী। শিশু কি বয়স্ক, ছাত্রী কি শিক্ষিকা সব বয়সের সকল পেশার মানুষ এমন হেনস্তার সম্মুখীন হচ্ছেন। এমতাবস্থায় পারিবারিক সচেতনতাই পারে এই সমস্যার সমাধান করতে। আমাদের জন্মের পর প্রথম শেখার জায়গা পরিবার। যেখান থেকে সুশিক্ষা না পেলে পরবর্তীতে মানুষ এসব অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে। বাবা-মা কে অবশ্যই তার ছেলেমেয়েদের দৈনন্দিন কাজের দিকে নজর দিতে হবে। সন্তানদের দিকে বাবা-মায়ের সঠিক নজর থাকলে তাদের বিপথগামী হওয়ার প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হবে, ইভটিজিং এর মতো অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার প্রবণতা কমবে। এছাড়া নারীদের প্রতি সম্মানবোধ তৈরির ক্ষেত্রেও পরিবারই মূল ভূমিকা রাখে। ইভটিজিং প্রতিরোধে তাই পরিবারকেই সর্বপ্রথম এগিয়ে আসতে হবে।

মোসাঃ খাদিজা আক্তার ইরা,শিক্ষার্থী, ১ম বর্ষ, ইংরেজি বিভাগ

আইনের বাস্তবায়ন জরুরী

যৌন হয়রানি সমাজে দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর অন্যতম কারণ পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় শিক্ষার অভাব, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, অপসংস্কৃতি ও কুসংস্কার। এছাড়াও বইবিমুখ মানসিকতা, প্রযুক্তির অপব্যবহার, অশ্লীল বিনোদন ইত্যাদি যৌন হয়রানির মুখ্য উপাদান হিসেবে কাজ করছে। অপরদিকে, ভুক্তভোগীদের প্রতিবাদে অনীহা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না পাওয়া, অসচেতনা, নারীর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সহ নানা কারণে এই সমস্যাকে প্রতিহত করা সম্ভব হচ্ছে না। এর থেকে পরিত্রাণে সামাজিক সংগঠনগুলোকে আরও সোচ্চার হতে হবে। আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। শিশুর বেড়ে ওঠার নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। অপ্রয়োজনে প্রযুক্তি ব্যবহার না করা, নারীকেও মানুষ ভাবার মনোভাব ও সুষ্ঠু বিনোদনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। নারীর প্রতি সম্মানবোধ করা ও নারীর অধিকার আদায়ে সচেতন হতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ইভটিজিং প্রতিরোধ করা সম্ভব।

নিপা আক্তার, শিক্ষার্থী, ১ম বর্ষ, ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদ

সংবাদ মাধ্যমগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে

বর্তমান সমাজে ভয়ংকর এক ব্যাধির নাম ইভটিজিং। পুরুষ কর্তৃক নারীর প্রতি এমন অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ আচরণ একজন নারী কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারে না। অথচ, লাফিয়ে লাফিয়ে এর পরিমাণ বেড়েই চলেছে। নারীদের চুপ থাকার মানসিকতা কিংবা দুর্বলতা যদিও ইভটিজারদের উৎসাহ দিচ্ছে তবুও বলা যায় সঠিক আইনি পদক্ষেপ, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও প্রশাসনের উদাসীনতাই এর জন্য দায়ী। সমাজকে নৈতিক অবক্ষয় থেকে টেনে বের করে আনতে হবে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা ভাঙতে হবে। পারিবারিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জোরদার করতে হবে। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড, সুষ্ঠ সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার পাশাপাশি আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠান করতে হবে। তবেই সুস্থ, সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা হবে। এ ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলো আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তারা নানারকম প্রচার-প্রচারণা মাধ্যমে জণগণকে সচেতন করতে পারে। এভাবেই ইভটিজিং নামক ব্যাধির বিলুপ্তি ঘটবে।

হুমায়রা রহমান সেতু, শিক্ষার্থী, ১ম বর্ষ, বাংলা বিভাগ

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh