বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২২, ০৪:৪৩ পিএম | আপডেট: ১৬ জুন ২০২২, ০৪:৪৬ পিএম
হত্যার ঘটনায় আটককৃত মো. নান্টু সিকদার। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি
বরিশালের বাবুগঞ্জে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে স্বামী। এসময় বাধা দিতে গেলে নিজের বাবা মো. চানমদ্দিন সিকদার ও বড় ভাই মিন্টু সিকদারকেও কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। নিহত গৃহবধূ মাহমুদা বেগম (২২) বরিশালের গৌরনদী উপজেলার শরিকল ইউনিয়নের কুরিরচর গ্রামের বাসিন্দা মো. খলিলুর রহমানের মেয়ে।
গতকাল বুধবার (১৫ জুন) রাতে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণদিয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। রাতেই অভিযুক্ত স্বামী মো. নান্টু সিকদারকে (৩০) আটক করেছে পুলিশ। আটক নান্টু ব্রাহ্মণদিয়া গ্রামের চানমদ্দিন সিকদারের ছেলে।
এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মো. নূর আলম বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার বাবুগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর-৬। এছাড়া বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে মৃতদেহের ময়না তদন্ত করা হয়েছে।
জানা গেছে, বুধবার রাত আনুমানিক ১১টার দিকে নান্টু সিকদার ও স্ত্রী মাহমুদা বেগমের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ নিয়ে ঝগড়া হয়। এক পর্যায় মাহমুদা বেগমকে দা দিয়ে কোপাতে শুরু করে স্বামী নান্টু।
এসময় গৃহবধূ চিৎকার দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। তার চিৎকার শুনে শ্বশুর চানমদ্দিন ও ভাসুর মিন্টু সিকদার এগিয়ে এসে বাধা দিলে তাদেরকেও কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।
এদিকে, স্বামীর হাত থেকে বাঁচতে মাহমুদা রক্তাক্ত অবস্থায় বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি বাগানে গিয়ে আত্মগোপনের চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর রক্ষা পাননি তিনি। সেখানে গিয়েও মাহমুদাকে কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করেন নান্টু সিকদার।
খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় বাবুগঞ্জ থানা পুলিশ। তারা ঘটনাস্থল থেকে আটক করে অভিযুক্ত নান্টু সিকদারকে। উদ্ধার করা হয় হত্যার কাজে ব্যবহৃত দা। আটক করে নান্টুকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাছাড়া মৃতদেহের সুরতহাল শেষে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। নিহতের শরীরে জুড়ে ৩০-৪০টি বড় ধরনের জখম রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহতের বড় ভাই নূর আলম জানিয়েছেন, ‘প্রায় ছয় বছর পূর্বে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় নান্টু ও মাহমুদার। বিয়ের পরে তাদের সংখ্যার বেশ ভালোভাবেই কাটছিল। কিন্তু স্বামী নান্টু সিকদার ঠিকভাবে কাজ না করায় বছর কয়েক পরে তাদের সংসারে অভাব-অনটন দেখা দেয়। এ নিয়ে পরিবারে ঝগড়া-বিবাধ লেগেই থাকে।
এর ধারাবাহিকতায় এক সপ্তাহ পূর্বে মাহমুদা বেগম স্বামীর সাথে অভিমান করে বাবার বাড়িতে চলে যায়। এর দুইদিন পরে নান্টু শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে যান। সেখানে দুইদিন থেকে স্ত্রীকে নিয়ে বাবুগঞ্জে নিজের বাড়িতে ফিরে আসতে চান। কিন্তু স্বামী ঠিকভাবে কাজকর্ম না করায় গৃহবধূ তার সাথে যেতে অপারগতা প্রকাশ করে।
পরবর্তীতে গৃহবধূর সাথে শাশুড়ি মোবাইল ফোনে কথা বলে তাকে বাড়িতে ফিরে আসার অনুরোধ করেন। এজন্য বুধবার বিকালে মাহমুদা স্বামীর বাড়িতে ফিরে আসে। এরপর রাতে স্বামীর হাতে খুন হন গৃহবধূ।
বাবুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাবুবর রহমান জানান, ‘বিয়ের পরে সন্তান না হওয়া, কাজকর্ম না করা নিয়ে পারিবারিক কলহের জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে নান্টু। তিনি আদালতে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছেন। আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন।