অন্যরকম হয়ে উঠুক বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা

এম এ মাসুদ

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২২, ০৫:০৯ পিএম | আপডেট: ১৯ জুন ২০২২, ০৫:১০ পিএম

এম এ মাসুদ

এম এ মাসুদ

দুই অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দ বাবা। শব্দটি তুর্কী শব্দ। যার অর্থ জনক বা পিতা। বাবার কথা বলতে গেলে প্রাসঙ্গিকভাবে মার কথাও চলে আসে। কারণ সন্তানের জীবনে কারো অবদানকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তাই পৃথিবীর সকল ধর্ম গ্রন্থে বাবা-মাকে দেওয়া হয়েছে বিশেষ মর্যাদা।

আজ রবিবার (১৯ জুন) বিশ্ব বাবা দিবস। ধর্ম, বর্ণ যাই হোক না কেন পৃথিবীর সকল বাবার ধর্মই এক। একটাই পরিচয়, আর তা হলো বাবা। ভৌগোলিক সীমারেখার পার্থক্য থাকলেও স্নেহ, মমতা, ভালোবাসায় পার্থক্য নেই কোনো বাবার। বাবার ভালোবাসা শ্বাশত। সন্তান জন্মের পর থেকেই নিজের সকল সাধকে বিসর্জন দেন একজন বাবা। কি করলে সন্তান সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে, সুশিক্ষা পাবে, সুখে থাকবে তার ব্যবস্থা করে থাকেন বাবা। শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে সন্তান যাতে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে সেজন্য চেষ্টার কোনো কমতি থাকে না বাবার। সন্তানের জন্য বাবার ভালোবাসা অসীম। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবর সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। হুমায়ুনের জীবনের বিনিময়ে নিজের জীবন ত্যাগ করতে একটুও দ্বিধা করেননি বাবা বাবর।

একথা ঠিক যে, সন্তানের প্রতি বাবার আদর, স্নেহ ও ভালোবাসা পরিমাপ যোগ্য নয়। পরিমাপ যোগ্য নয় সন্তানকে নিয়ে বাবার স্বপ্নও। বাবা হলেন শক্তি, সাহস ও পরম নির্ভরতার প্রতীক। চিন্তাভাবনা আর সারাজীবন হার ভাঙা খাটুনির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ সবই সন্তানের জন্য তিল তিল করে জমা করেন তিনি। নিজে কষ্ট করলেও সন্তানকে বুঝতে দেন না সেই কষ্ট বা অভাব। চাওয়া মাত্রই যতটুকু সম্ভব সন্তানের চাহিদা পুরণে সচেষ্ট থাকেন বাবা। এজন্যই তো বাবার অপর নাম ছায়াদানকারী বটবৃক্ষ।

কিন্তু যার বাবা নেই, সেই বোঝে বাবা বেঁচে না থাকার কষ্টটা ঠিক কোথায়।

যাই হোক, সন্তানের প্রতি যাদের এতো নিঃস্বার্থ ভালোবাসা সেই বাবার প্রতি সম্মান জানাতেই ১৯১০ সাল থেকে বাবা দিবসের সূত্রপাত হলেও ১৯২৪ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ বাবা দিবস বিলটিতে পূর্ণ সমর্থন দেন। আর ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন বাবা দিবসকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্বের ৫২টি দেশে পালিত হয় বিশ্ব বাবা দিবস। বাবার এতো অবদান থাকা সত্বেও এমন অনেক সন্তান আছে যারা তাদের বাবা-মার সেবাযত্নের প্রতি অনেকটা হেয়ালিপণা করে থাকে। বাবা দিবস আসে তাদের চোখের পর্দা খুলে দিতে। স্মরণ করিয়ে দেয় বাবার প্রতি সন্তানদের দায়িত্ববোধের কথা। তাছাড়া, বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা থাকে সর্বদাই। যা কোনো নির্দিষ্ট দিন বা ক্ষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। তারপরও বিশ্ব বাবা দিবসে বাবাদের অবদানকে সমাজ ও সন্তানরা যে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করছে, তা বাবাদের নিশ্চয়ই আনন্দ দেয়।

সন্তানের জন্য বাবা যে স্নেহ, ভালোবাসা ও ত্যাগ স্বীকার করেন তার ঋণ কখনো শোধ করা যাবে না। সন্তানদের মনে রাখতে যে, তাদের সামান্যতম অবাধ্যতাও কিন্তু বাবা-মার মনকষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং কোনো কথাবার্তা, আচরণ যেন তাদের মনোকষ্টের কারণ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে সন্তানদের। বৃদ্ধ বয়সে তাদের সেবাযত্নের যেন কোনো ত্রুটি না হয় সেদিকে রাখতে হবে সজাগ দৃষ্টি। বাবা-মার সন্তুষ্টি বিধান করার মধ্যেই সন্তানের প্রকৃত কর্তব্য নিহিত। বাবা-মাকে খুশি করতে পারলে আল্লাহও আমাদের প্রতি প্রসন্ন থাকবেন।

হাদীসে আছে- হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টিতে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টিতে নিহিত।’ (তিরমিযি-১৮৯৯)।

সনাতন ধর্মমতে, ‘পিতাকে খুশি করলে সকল দেবতা খুশি হন।

জনসংখ্যা বিজ্ঞান ও জনসংখ্যা বিশ্লেষণ বইয়ের প্রচ্ছদে দেখেছিলাম মানুষের জীবনচক্র এমনঃ শিশু-কৈশোর-যৌবন-প্রৌঢ়-বার্ধক্য-মৃত্যু। এ জীবনচক্র থেকে সহজেই অনুমেয় সবার পরিণতি ঠিক একই।

তাই বাবা-মায়ের প্রতি আমাদের যে দায়িত্ব রয়েছে তা যেন আমরা যথাযথভাবে পালন করতে পারি। যাদের বাবা-মা বেঁচে আছে তাদের সৌভাগ্য। তাদের সেবাযত্নের সুযোগকে যেন কোনোভাবে হাতছাড়া না করি। নইলে আফসোস করতে হবে অনন্তকাল।

যাই হোক, ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক এবং সন্তানের মাথার ওপর ছায়া হয়ে থাকুক পৃথিবীর সকল বাবা। আর নির্দিষ্ট কোনো দিন নয়, প্রতিটি ক্ষণ বা প্রতিটি দিন হোক বাবা দিবস। অন্যরকম হয়ে উঠুক বাবার প্রতি সন্তানদের ভালোবাসা- এতটুকুই প্রত্যাশা।

লেখক : এম এ মাসুদ, কান্দি গার্লস আলিম মাদ্রাসা, পীরগাছা,  রংপুর


সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh