নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২২, ০৫:৩৭ পিএম
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমাদের দাবি পদ্মা সেতু নিয়ে উৎসব বন্ধ করুন। বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোকে দুর্গত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হোক। কোনো বিলম্ব ছাড়া এই অঞ্চলগুলোর জনগণের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হোক।
আজ রবিবার (১৯ জুন) দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, সরকারের চরম ব্যর্থতা, লুটপাট, উদাসীনতা, অদূরদর্শিতা আর খামখেয়ালিপনার কারণে দেশের বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে।
তিনি বলেছেন, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম- এসব জেলার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সিলেট প্রায় পুরোটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। বানের পানিতে ভাসছে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ জেলার ৯০ ভাগের বেশি অঞ্চল।
বিএনপি নেতা দাবি করেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান গতকাল স্বীকার করেছেন- ‘দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে ১০ জেলার ৬৪টি উপজেলা বন্যাকবলিত। ১২২ বছরের ইতিহাসে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এমন ভয়ংকর বন্যা হয়নি’। মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনেক এলাকা পানিতে একাকার। উপায় না দেখে মা তার সন্তানদের পাতিলে ভাসিয়ে দিচ্ছেন এমন সংবাদও গণমাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি। সবকিছু হারিয়ে মানুষ এখন সর্বস্বান্ত। ত্রাণের জন্য গোটা বন্যাদুর্গত এলাকা হাহাকার করছে।
মেঘালয়-আসাম থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জনপদ আজ বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই সাথে টানা বৃষ্টিপাত। এই বন্যার আরো কারণ আছে। হাওর ও নদীগুলো বাঁধ এবং সেতু দেওয়া হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। সেখানে এত দুর্নীতি হয়েছে, সব বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। নতুন করে যেসব রাস্তা তৈরি করা হয়েছে- সেগুলোও ভেঙে যাচ্ছে।
রিজভী দাবি করেন, ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের নামে শত শত কোটি টাকা খরচ করে সারাদেশে উৎসবের আয়োজন নিয়ে শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রী-এমপিরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সব জেলা প্রশাসককে লিখিত নির্দেশ দিয়েছে, টানা পাঁচ দিন সারাদেশে আনন্দ উৎসব করতে হবে। পদ্মা সেতুর মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সারাদেশে একযোগে বড় পর্দায় দেখাতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ৩০০ লঞ্চ রিকুইজিশন করা হয়েছে। জনসভাস্থলে ৫০০ টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মাণ করা হচ্ছে। যারা উৎসবে অংশ নিতে অনীহা দেখাবে, তাদের চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। দুই প্রান্তে থানা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার নিরাপত্তার জন্য হাজার হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে।
পদ্মা সেতু উদ্বোধন উৎসবের নামে শত শত কোটি টাকা উড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, অথচ বন্যাকবলিত এলাকায় কোটি পানিবন্দি মানুষ সাহায্যের জন্য তাকিয়ে আছে। সেখানে সরকারি বরাদ্দ একেবারেই অপ্রতুল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সিলেটে ২০০ টন চাল, নগদ ৩০ লাখ টাকা, ৮ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪০ লাখ মানুষ। বরাদ্দ ৬০ লাখ টাকার কথা বলা হলেও মূলত, ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তার মানে জনপ্রতি দেড় টাকা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জনসভাস্থলে অস্থায়ী ৫০০ টয়লেট স্থাপন করতে যে খরচ হবে তার দশ ভাগের এক ভাগও বরাদ্দ পায়নি বন্যার্তরা।