খামারিরা না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না: ডা. জাফরুল্লাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২২, ০৬:৩৭ পিএম

 আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর উদ্যেশে করে বলেছেন, আপনারা যদি না বোঝেন তাহলে দেশের প্রান্তিক চাষী ও খামারিরা বাঁচবেনা। খামারিরা না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না।

আজ রবিবার (১৯ জুন) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারী ঐক্য পরিষদ আয়োজিত ‌প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারীদের দুর্দশা এবং মুক্তির উপায় শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীকে প্রান্তিক জনগণের দিকে নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এরাই আপনাকে বাঁচাতে পারবে। তা না হলে আপনাকে খালেদা জিয়ার মতো কোর্টে ঘুরতে হবে। সেটা খুব ভুল কাজ হবে।

ঈদকে কেন্দ্র করে গরিব দুঃখীদের মাঝে বিতরণের জন্য ২০ হাজার পোল্ট্রি মুরগি কেনার কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, এই ২০ হাজার মুরগি কেনার ফলে প্রান্তিক চাষীদের আর্থিক দুরবস্থা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আজকে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু করেছেন। এটাকে জাকজমকের সাথে উদ্বোধন করবেন এটি স্বাভাবিক কথা। এই ছয় কিলোমিটার রাস্তা উৎপাদনের জন্য আপনি ১০ লাখ লোকের জনসমাবেশ করবেন। এই ১০ লাখ লোকের জনসমাবেশ এমন সময় করছেন যখন দুই কোটি পরিবার ঈদ করতে পারবেনা। তার সাথে যোগ হয়েছে বন্যার আরও ৫০ লাখ। আপনার এই পদ্মা সেতুতে বড় বড় শিল্পপতির লাভ হবে। এই পদ্মা সেতুতে পারাপার কে হবে। প্রান্তিক মানুষ। তাদের জন্য আপনি কি করতে পারলেন? এই ১০ লাখ লোকের জনসমাবেশ না করে এই টাকা দিয়ে ৮ লাখ মুরগি কেনা যাবে এবং সেটা গরিব দুঃখীদের মাঝে বিতরণ করা যাবে। এই কাজটা করেন। তাহলে প্রান্তিক পোল্টি খামারিদের কিছুটা হলেও উপকার হবে। এই ৮ লাখ মুরগিতে যেমন পুষ্টি থাকবে গরীব ও বন্যা দুর্গতদের পুষ্টির চাহিদাও মিটবে এবং খামারিদের ও একটা ভিত তৈরি হবে।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আপনারা হলেন দেশের বুনিয়াদ। এই যে পোল্ট্রি খামারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান। এটা একটা প্রান্তিক খামারি তার জায়গায় শিক্ষিত ছেলেদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু তাদের জন্য নীতিমালা না করে সিন্ডিকেটের পাল্লায় পড়ে যেমন খুশি তেমন ভাবে তাদের উঠানো বসানো এটা তো চলতে পারে না। এই পোল্ট্রি খামারীদের জন্য একটা নীতিমালা করতে হবে।

সবশেষ একটি দৈনিক পত্রিকার সংবাদের উদাহরণ টেনে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অনেক কাজ করেছেন এখন একটু দেশের দিকে নজর দেন।

আলোচনা সভায় বাংলাদেশ প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারী ঐক্য পরিষদের মহাসচিব কাজী মোস্তফা কামাল প্রান্তিক খামারিদের জন্য ৮ দফা দাবী উত্থাপন করেন।

দাবীগুলো হলো:-

১. কোন হ্যাচারীর মালিক বানিজ্যিক ভাবে রেডি ব্রয়লার মুরগী ও লেয়ার মুরগী পালন করতে পারবে না এবং অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

২. পোল্ট্রি খাদ্যের দাম কমাতে হবে। খাদ্য ও বাচ্চার মান প্রানীসম্পদ অধিদপ্তর এবং বিএসটিআই কর্তৃক সার্বক্ষনিক মনিটরিং করতে হবে।

৩. খামারিদের বিদ্যুৎ বিল, শিল্প হারে নিতে হবে।

৪. বিগত ২০১০ সালের জুলাই মাসে সরকার কর্তৃক নির্ধারন করা ১ দিনের ব্রয়লার ও লেয়ার বাচ্চার দাম ৩০ ও ৩২ টাকা ধার্য্য করা হয়েছিল। সেই আদেশ কেন কার্যকর হলোনা তদন্ত করতে হবে।

৫. রাণীক্ষেত, গাম্ববো ও বার্ড ফ্লু জাতীয় জটিল রোগের টিকা ও ঔষধ বিনা মূল্যে খামারিদের কে দিতে হবে ।

৬. প্রতিটি উপজেলায় প্রাণীসম্পদ, কর্মকর্তার সহযোগীতায় খামারিদেরকে একটি সমিতির আওতায় এনে জামানত ছাড়া স্বল্প সুদে বা বিনা সুদে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। এই ঋনের টাকা দিয়ে খামারিরা তাদের খামার পুণসংস্কার ও চলতি পুঁজির চাহিদার লক্ষ্যে ব্যবহার করবে। ঋণ দাতা ব্যাংক ও সমিতির নির্বাহী কমিটি ঋনের টাকা ব্যবহারের ও আদায়ের তদারকি করবে ।

৭. রানীক্ষেত, বার্ড ফ্লু ও প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদেরকে সম্পূর্ণ ভর্তুকি দিতে হবে। অথবা ইন্সুরেন্সের আওতাভূক্ত করে ক্ষতি পূরণ দিতে হবে ।

৮. প্রত্যেক উপজেলার প্রধান বা বড় বাজার গুলিতে খামারিদের সমিতির অনূকুলে ২/৩ শতক জায়গার উপর মুরগি ও ডিম বিক্রির দোকান নির্মাণ করে দিতে হবে। তাতে করে মন্দা মৌসুমে খামারিরা নিজেদের মুরগি ও ডিম বিক্রি করে অন্তত মূলধনের কিছুটা হলেও সংগ্রহ করতে পারবে ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম বীরউত্তম, পরিবেশবিদ মোস্তফা কামাল মজুমদার, প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (গ্রেড-১) ডা. আব্দুল জব্বার শিকদার, সংগঠনের সভাপতি মিজান বাশারসহ বিভিন্ন জেলার প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারীরা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh