বিপৎসীমার ২৮ সে.মি. ওপরে তিস্তার পানি

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২২, ০২:৪১ পিএম

ছবি : লালমনিরহাট প্রতিনিধি

ছবি : লালমনিরহাট প্রতিনিধি

ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য তিস্তা ব্যারেজের সবকটি জলকপাট খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এতেও পানি নিয়ন্ত্রণে আসছে না।

আজ সোমবার (২০জুন) দুপুর ১২টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প' লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ  ৫২.৮৮ সেন্টিমিটার  (স্বাভাবিক ৫২.৬০) যা বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে রেকর্ড করা হয়। এর আগে রবিবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত  তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর দুপুর ১২টায় পানি কমে বিপৎসীমার সেন্টিমিটার নিচে এবং বিকেল ৩টায় বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরে সন্ধ্যার পর থেকে তিস্তার পানি আবারো বাড়তে থাকে। পরে রাত পেরিয়ে সোমবার সকাল ৬টায় পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে দুপুর ১২টা থেকে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে ধরলা নদীর পানি শিমুলবাড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সে. মি ওপরে রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়াও জেলার সোতি নদী, মালদাহ, রত্নাই, স্বর্ণামতি নদী ডোবার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

তিস্তা ধরলার পানি বৃদ্ধিতে জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী,দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউপির রমনীগঞ্জ, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা,পলাশী সদর উপজেলার ফলিমারীর চর খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকার প্রায় ২০হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এদিকে অব্যাহত বৃষ্টির পানিতে নিম্নাঞ্চলের ৫হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। অপরিকল্পিত ভাবে বাড়িঘর ভবন নির্মাণ করে পানির গতিপথ রোধ এবং মৎস প্রজেক্ট দেয়া ডোবার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না থাকায়  নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল জানান, রবিবার রাত থেকে তিস্তার পানি আবারো বৃদ্ধি পেয়ে অত্র ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর প্রতিটি পরিবারকে ১০কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে।

উপজেলার ফকির পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলার রহমান খোকন জানান, গত দুইদিন ধরে প্রায় দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এখন পর্যন্ত কোন ত্রাণ সহায়তা পাওয়া হয়নি। এদিকে গত দুইদিন থেকে তিস্তার পানি ঘর বাড়িতে প্রবেশ করায় পরিবারগুলো রান্না করতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেকেই উঁচু স্থানে চুলা জ্বালিয়ে কোনোরকম রান্না করে একবেলা খেয়ে জীবন যাপন করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা বলেন, উজানের ভারী বৃষ্টি পাহাড়ি ঢলে রবিবার সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি বেড়ে সোমবার দুপুর ১২টা থেকে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার তীরবর্তী পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, বন্যা কবলিত জেলার পাঁচ উপজেলায় ১৫০ মেঃ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গত শনিবার তা বিতরণ করা হচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে শুকনো খাবার বিতরণের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে গত শনিবার দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ, হাতীবান্ধা উপজেলার নির্মাণাধীন দোয়ানী গাইড বাঁধ তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাসসহ গত আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চলমান একাধিক কাজ পরিদর্শন করেছেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh