গোপনে চলছে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২২, ০১:২৪ পিএম

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর

করোনার কারণে প্রায় দুই বছর ধরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি বন্ধ থাকলেও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম তার চাকরির শেষ দিনে গোপনে বদলির আদেশ দেন। ওই দিনই ঢাকা মহনগরসহ বিভিন্ন জেলায় ১৯ জনের বদলির পর সেই আদেশ স্থগিত করা হয়। এ নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর এবং শিক্ষকদের মধ্যে নানা আলোচনা-সমালোচনার তৈরি হয়েছে। বিষয়টি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সচিব জানেন না বলে জানা গেছে।

এদিকে আরডিপিপি পাস না হতেই চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪)এর আরডিপি অনুমোদন না হতেই সেখানে কনসাল্টেন্ট পদে নিজেকে নিয়োগের প্রস্তাব নিজেই দিয়েছেন ডিজি। এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলমের ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেনি। তবে গত সোমবার তিনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিদায় সংবর্ধনা নিয়েছেন।

এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) পদে চলতি দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমেদ বলেন, আদেশ প্রত্যাহার হয়েছে। বদলী কতজন হয়েছে তা আমি জানি না।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জানা জানায়, অবসর গমনের জন্য গত ১৩ জুন ডিজিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করা হয়। অবসর গমনের দিনই ডিজি দুই বছর থেকে স্থগিত থাকা শিক্ষক বদলি চালুর জন্য নির্দেশনা দেন। সে অনুযায়ী আদেশও জারি করা হয়। এরপর ডিজির পছন্দের বিভিন্ন জেলার ১৯ জন শিক্ষকের বদলি করা হয়। এদের মধ্যে চাঁদপুরের ১ জন এবং কিশোরগঞ্জের মিঠামাইনের ১ জন বদলিস্থলে যোগদান করেছেন। এরপরই আবার বদলির নির্দেশনা বাতিল করা হয়। এছাড়া বদলির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ছুটিতে পাঠানো হয়। তাদের কাছে তথ্য নিতে গেলেও আর পাওয়া যায়নি। চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর থেকে মাহমুদা আক্তার নামে এক শিক্ষক ঢাকা মহানগরের যাত্রাবাড়ি এলাকায় বদলী হয়েছে এবং যোগদানও করেছেন বলে জানান চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো, সাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, শিক্ষক তাকে ফোন করে বলেছেন, তার আদেশ হয়েছে। যোগদান করছেন। তবে যাত্রাবাড়ির কোন স্কুলে সেটা বলতে পারেনি।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, যাদের বদলি করা হয়েছে তাদের চিঠি গোপনে হাতে হাতে দেওয়া হয়েছে। ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়নি। শুধু সংশ্লিষ্ট্র জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারা জানেন। তারা আবার মুখ খুলছে না। এছাড়া দায়িত্ব প্রাপ্ত ডিজি এ বিষয়ে জানলেও তিনি কথা বলছেন না। এদিকে শিক্ষক বদলীর আদেশ জারি হওয়ার পরে মন্ত্রণালয় এবং ডিজি অফিসে শত শত শিক্ষক বদলীর জন্য যোগাযোগ করছেন। তাদের বলা হচ্ছে এ আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। যখন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হবে তখন বদলি করা হবে। ডিজির নির্দেশে বদলির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন পরিচালক (পলিসি এন্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা, সহকারী পরিচালক (পলিসি এন্ড অপারেশন) তাপস কুমার আচার্য্য এবং শিক্ষা অফিসার সেলিনা আখতার।

এ বিষয়ে ১৫ জুন অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি এন্ড অপারেশন) মনীষ চাকমার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বদলির আদেশ হয়েছে এবং আবার স্থগিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে ডিজি মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেন।

ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসার আলেয়া ফেরদৌসী শিখা জানান, দুই বছর বদলি বন্ধ থাকার আদেশ প্রত্যাহারের চিঠি পেয়েছি। প্রধান শিক্ষকদের বদলি কার্যক্রম চলমান আছে। তবে সহকারী শিক্ষকদের বদলি জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত চলবে বলে চিঠিতে জানানো হয়। ঢাকা মহানগরে বদলি হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে ডিপিইও তিনি বলেন, অনেকে আমার কাছে এসেছেন যে তাদের বদলির আদেশ হয়েছে। তবে আমি হাতে পাইনি।

জামালপুর থেকে আসা এক শিক্ষক অধিদপ্তরে বলেন, আমার স্বামী ঢাকায় পুলিশে চাকরি করে। আমি ৩ থেকে ৪ বছর বদলীর জন্য আবেদন করছি। আমার বদলী হয়নি। অর্থচ আমার আগে কয়েকজনের বদলীর আদেশ করা হয়েছে।

পিইডিপি-৪ উপপরিচালক মো. ফরহাদ আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, আরডিপিপি পাস না হতেই চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪)এর আরডিপি অনুমোদন না হতেই সেখানে কনসাল্টেন্ট পদে নিজেকে নিয়োগের প্রস্তাব নিজেই করেছেন ডিজি মনসুরুল আলম। পিইডিপি-৪ এর আওতায় প্রোগ্রাম সাপোর্ট টিমে ৬ জন পরামর্শকের জন্য ডিপিতে সংযুক্ত রয়েছে। সে অনুযায়ী পিইডিপি-৪ এর প্রারম্ভিবক পর্যায়ে ৬ জন পরামর্শক কর্মরত থাকলেও বর্তমানে প্রায় দুই বছর যাবৎ কোন পরামর্শক কর্মরত নাই। পিইডিপি-৪ এর মত এত বিশাল বাজেটের কর্মসূচি পরামর্শক ছাড়াই চলমান রাখার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এক্ষেত্রে পিইডিপি-৪ এর পরবর্তী কার্যক্রম সুষ্টু ও সুন্দরভাবে সম্পন্নের স্বার্থে আরডিপিপিতে সাতটি টার্মস অব রেফারেন্স (টিআরও) সংস্থান রাখা হয়েছে। যা চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়ে ছিল। ডিজি অবসরে যাওয়ার দিনিই সাতজন টিআরও নিয়োগের জন্য অনুমোদন দিয়েছেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh