ভয়াবহ বন্যার বিস্তার
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২২, ০২:৪৩ পিএম | আপডেট: ২৩ জুন ২০২২, ০২:৪৫ পিএম
প্রতীকী ছবি
প্রতিবছর বাংলাদেশের এক অমোঘ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হলো বন্যা। কিন্তু এবারে মৌসুমের তৃতীয় দফা বন্যায় সিলেটের চার জেলার ৮০ শতাংশের বেশি এলাকা জলমগ্ন হয়ে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে দুই আগাম বন্যায় নদী ও জলাভূমি যখন ভরাট, তখন আরও বড় এই মৌসুমি বন্যায় একদিকে কৃষকের প্রধান শস্য বোরো ধানের উল্লেখযোগ্য অংশ ভেসে গেছে; অন্যদিকে গবাদিপশুসহ কোটি কোটি টাকার মাছ ও পোনা হারাতে হয়েছে কৃষককে। সর্বস্বান্ত হয়েছেন বহু মানুষ।
সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয়, সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হতেই দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে বন্যা। নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম, রংপুর, নীলফামারী, শেরপুর, লালমনিরহাট, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, টাঙ্গাইল ও মুন্সীগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা বিস্তৃত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সব মিলে এবারও বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সম্ভাব্য বন্যাকবলিত জেলাগুলোর প্রশাসনকে নিতে হবে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি।
বন্যা উপদ্রুত এলাকার মানুষের প্রধান সমস্যা খাদ্য ও নিরাপদ পানি, পানিবাহিত নানা ধরনের রোগব্যাধিসহ যোগাযোগ সংকট। এ জন্য বন্যাকবলিত ও সম্ভাব্য এলাকাগুলোর অসহায় মানুষ যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য, পানীয় ও আশ্রয় পায়, সে ব্যাপারে বিশেষ যত্নবান হওয়ার পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।
তাৎক্ষণিক ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচি তো অবশ্যই প্রয়োজন, পাশাপাশি পুনর্বাসন পরিকল্পনাও করতে হবে। কেন বন্যা প্রলয়ংকরী হয়ে উঠছে, তার কারণ অনুসন্ধান ও সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নদীর উৎস দেশের ভূ-সীমানার বাইরে হওয়ায় অভিন্ন নদীগুলোর গতিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশ, বিশেষ করে ভারত ও নেপালের সঙ্গে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিতে হবে।
দেশের নদীগুলোর নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে এবং এর ফলে কম পানিতেই বেশি বন্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় নদী খননের মাধ্যমে উজান থেকে বেয়ে আসা পলি নিয়মিতভাবে ও দ্রুত অপসারণ করা দরকার। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই আমাদের সম্ভাব্য বন্যা প্রতিরোধ এবং এর ক্ষয়ক্ষতি কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
তবে আপাতত দাঁড়াতে হবে বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে। পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করতে হবে। একটা ব্যাপার ভুলে গেলে চলবে না, বন্যার পানি কমছে। কিন্তু কৃষক এবং বানভাসিরা যতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার, হয়েছেন। তাদের অন্তহীন দুর্গতি শেষ হবে না এখনই। তাই সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে; যাতে দুর্গত মানুষ তাদের ক্ষতি যতটা সম্ভব পুষিয়ে নিতে পারেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও মৎস্যজীবীরা নিজেদের পেশায় ফিরতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনে তাদের পুনর্বাসন কিংবা বিশেষ বরাদ্দ দেওয়াসহ নানামুখী সহায়তা দিতে হবে।