মধ্যরাতে মারধর করে রাবি শিক্ষার্থীকে বের করে দিল ছাত্রলীগ

রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২২, ০৩:২০ পিএম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) মুন্না ইসলাম নামে এক আবাসিক ছাত্রকে মধ্যরাতে মারধর করে সিট থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। 

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলে এ ঘটনা ঘটে। 

ভুক্তভোগী মুন্না ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন- হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন, বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ হাসান জয় ও ছাত্রলীগ কর্মী তাওহীদ। 

হল সূত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ২ টার দিকে পারভেজ ও তাওহীদসহ কয়েকজন ২৪৮ নম্বর কক্ষে গিয়ে মুন্নাকে সিট ছেড়ে চলে যেতে বলেন৷ কিন্তু মুন্না তার বৈধ সিট ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এক পর্যায়ে তাওহীদ মুন্নার ঘাড় চেপে ধরে টানতে টানতে দরজার কাছে নিয়ে এসে মারধর শুরু করে। পরে তার বিছানাপত্র নামিয়ে দিয়ে ওই সিটে মাকছুদুল হাসান আসিফ নামে এক শিক্ষার্থীকে তুলে দেন। 

এদিকে আজ শুক্রবার (২৪ জুন) বেলা ১১টার দিকে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও একজন সহকারী প্রক্টর গিয়ে মুন্নাকে তার ওই সিটে তুলে দেন। এতে বিপাকে পড়েন ২৩০ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী আসিফ।পরে বিষয়টি প্রাধ্যক্ষকে জানালে তিনি ২৩০ নম্বর কক্ষে তার আগের সিটেই থাকতে বলেন।

এদিকে শিক্ষার্থীকে মারধরের বিষয়টি জানাজানি হলে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীবের নেতৃত্বে কয়েকজন শিক্ষক প্রাধক্ষের সাথে আলোচনা করেন। তারা প্রাধ্যক্ষকে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান। এসময় সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, রাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক কুদরত-ই-জাহান, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মুন্না ইসলাম বলেন, আমি এই হলের ২৪৮ নাম্বার রুমের একজন আবাসিক ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও ছাত্রলীগের নেতারা এসে আমাকে সিট থেকে নামিয়ে দেয় এবং মারধর করেন। পরে আজ সকালে প্রাধ্যক্ষ স্যার এসে আমাকে আমার সিটে তুলে দেন। তবে আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।


মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে ছাত্রলীগ কর্মী তাওহীদ বলেন, মুন্না নামের ওই শিক্ষার্থীকে মারধরের কোন ঘটনা ঘটেনি। আমাদের ছাত্রলীগের এক কর্মী আসিফের (মাকছুদুল) বাবা স্ট্রোক করায় মানবিক কারণে আমরা তাকে ওই সিটে তুলি এবং ওই সিটে থাকা শিক্ষার্থীকে আসিফের সাথে বেড শেয়ার করে থাকতে বলি। কিন্তু মুন্না নামের ওই শিক্ষার্থী আমাদের সাথে তুই-তুকারি করে। পরে হল প্রাধ্যক্ষের মাধ্যমে এ ঘটনার মীমাংসা হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে নবাব আব্দুল লতিফ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন বলেন, আসিফ আবাসিক, কিন্তু প্রশাসনের নির্দেশ আছে ১৯-২০ সেশনের কোনো শিক্ষার্থীকে হলে সিট দেওয়া যাবে না। তবুও প্রাধ্যক্ষ মুন্নাকে মানবিক কারণে সিট দিয়েছে। আর আসিফও ১৯-২০ সেশনের। আসিফেরও সমস্যা থাকায় আমরা দুইজনকেই বেড শেয়ার করে থাকতে বলি। তবে মারধরের ঘটনা মিথ্যা ও বানোয়াট।

জানতে চাইলে নবাব আব্দুল লতিফ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, গতকাল রাতে বিষয়টি জানতে পেরে আজ সকালেই আমি হলে এসে মুন্না ও মাকছুদুল নামের দুই শিক্ষার্থীকেই নিজেদের সিটে তুলে দিয়েছি। মারধরের ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আগামী ৭দিনের মধ্যে তাদেরকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই রিপোর্ট দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh