এম এ মাসুদ
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২২, ০৫:০৮ পিএম
এম এ মাসুদ
বছর
কয়েক আগের কথা। ছিল
জুন মাস। অর্ধ বার্ষিক
পরীক্ষা চলছিল তখন। টেবিলের ওপর
প্রশ্নপত্র রেখে মাথা নিচু
করে হন্তদন্ত হয়ে পাঠ্য বইয়ের
পাতাগুলো একের পর এক
উল্টাচ্ছিলেন মাস্টার মশাই। কিন্তু মাঝে মাঝে উল্টে
যাচ্ছে তিন, চারটি পাতা।
নাহ্! আঙুল যেন কাজ
করছে না আর। বার
বার জিহ্বায় আঙুল ভিজিয়ে নিয়ে
এবার প্রতিটি পাতায় খুব মনোযোগ দিয়ে
কী যেন খুঁজছিলেন তিনি।
ভ্যাপসা গরমে গায়ের জামাটা
ভিজে গেছে প্রায়। ঘামে
আতশ কাঁচের মতো পাওয়ারি চশমাটাও
যেন ক্রমেই ঝাপসা হয়ে আসছে আর
নাকের ডগায় মুক্তোর দানার
মতো ঘামের ফোটা করছে জ্বলজ্বল
এই বুঝি ঝরে পড়বে
। দেখেই বুঝা যায় ক্লান্তি
বেশ পেয়ে বসেছে মাস্টার
মশাইকে।
এবার
তার সহকর্মী হলরুমে প্রবেশ করতেই সম্বিত ফিরে পেলেন মাস্টার
মশাই। কিছুটা ইতস্ততভাবে প্রশ্নপত্রটি নিয়ে চেয়ার ছেড়ে
উঠে দাঁড়ালেন এবং হলরুম ত্যাগ
করে সোজা চলে গেলেন
মাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষার রুমে। আর টেবিলে ফেলে
যাওয়া পাঠ্য বইটি পড়তে থাকলেন
মাস্টার মশাই এর ওই
সহকর্মী।
কিছুক্ষণ
পর মাস্টার মশাই ফিরে এসে
বইটি পড়তে দেখে বললেন,
স্যার পড়ছেন! পড়েন।
আমি
গ্যাডপি খুঁজছি। কিন্তু কোথায় যে পাবো গ্যাডপি?
কিছু বলার আগেই শিক্ষক
কমনরুমের পথে পা বাড়ালেন
তিনি। গ্যাডপি! সেটা আবার কী?
জীবনেতো কখনো গ্যাডপি নামক
কোনো শব্দ শুনিনি বা
দেখিনি! কি জানি সাহিত্যের
ভাষা---। মাস্টার মশাই
কী তবে জিডিপি কে
গ্যাডপি বলছেন!
বুঝতে
আর বাকি রইলো না
মাস্টার মশাই এর সহকর্মীর।
অনুমান সঠিক। মাধ্যমিক স্তরের হলরুমের কাছাকাছি যেতেই সেখানকার দায়িত্বে থাকা বিজ্ঞান বিভাগের
এক স্যার খানিকটা এগিয়ে এসে ওই সহকর্মীর
নিকট কৌতুহলবশত জানতে চাইলেন ''GDP' কী? ''Gross Domestic
Product,' বলে জবাব দিলেন তিনি।
যার অর্থ হলো মোট
দেশজ উৎপাদন। কে জানে, এভাবে
শিক্ষার্থীরাও হয়তো বা মোট
দেশজ উৎপাদন(GDP) কে গ্যাডপি হিসেবেই
জানবে অনন্তকাল। সেই সাথে যে
আরো কত কী--------! একটা
দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবছিলেন, হায়
আল্লাহ! পড়েছি কী, পড়াচ্ছি কী,
আর শিখছে কী? ঘাটতি কার?
মনে মনে ভাবতে থাকেন মাস্টার মশাই এর সহকর্মী আর আনমনে বলতে থাকেন- হাল ও মইয়ে না পারলেও অতীতেও দুধ দিয়েছেন তো! এখনো তো দুধ দিয়েই চলেছেন মাস্টার মশাই এর মতো আরো অনেক মাস্টার মশাই! টাকা-পয়সা দিয়ে একাডেমিক সনদের ফল পরিবর্তন করে, ভুয়া নিবন্ধন ও কম্পিউটার সনদ দিয়ে যোগ্য ও মেধাবীদের বঞ্চিত করে ঢুকে পড়েছেন শিক্ষক হিসেবে। ঠেকিয়ে দিয়েছেন অন্য সহকর্মীদের পদোন্নতি। এখন শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মোটা অঙ্কের মাইনে তো পান তারা! হাল ও মইয়ে না পারলেও প্রতিষ্ঠান প্রধানকে মাঝে মধ্যে দুধ দেন তো! সেটাই বা কম কীসে!
লেখক : এম এ মাসুদ, কান্দি গার্লস আলিম মাদ্রাসা, পীরগাছা, রংপুর