শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২২, ০৭:১০ পিএম
ইনসেটে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ঘাতক মন্টু মিয়া
রাতের আঁধারে
বোরকা পরে শ্বশুর বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে স্ত্রী, শাশুড়ি ও জেঠা শ্বশুরকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সেইসাথে শ্বশুরসহ আরো ৩ জন আহত হয়ে আশঙ্কাজনক ভাবে ময়মনসিংহ মেডিকেল
কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এঘটনায় ঘাতক স্বামী মন্টু মিয়াকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
নিহতরা হলেন-স্ত্রী
মনিরা বেগম (৪০), শাশুড়ি শেফালী বেগম (৬০) এবং জেঠা শ্বশুর মাহমুদ হাজি (৬৫)। এছাড়া
আহতরা হলেন- ঘাতকের শ্বশুর ও জয়নাল আবেদীনের ছেলে মনু মিয়া (৭৫), স্ত্রীর ভাই মনু মিয়ার
ছেলে শাহাদাৎ হোসেন (৪০) এবং আহাদ আলীর স্ত্রী বাচ্চুনী বেগম (৫২)।
স্থানীয় ও আত্মীয়রা
জানায়, প্রায় ১৭ বছর পূর্বে জেলার শ্রীবরদী উপজেলার কাকিলাকুঁড়া ইউনিয়নের খোশালপুর
পুটল গ্রামের মনু মিয়ার কন্যা মনিরা বেগমের সাথে পার্শ্ববর্তী তাঁতিহাটি ইউনিয়নের গেরামারা
গ্রামের হাই মদ্দিনের ছেলে মন্টু মিয়ার বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই তাদের দাম্পত্য
জীবনে নানা কলহের শুরু হয়।
একলহ নিয়ে দফায়
দফায় মনিরা তার বাবার বাড়ি ফিরে গেলেও মন্টু মিয়া তাকে পারিবারিক ও স্থানীয় সালিশ-বৈঠক
করে ফিরিয়ে নিয়ে আসতো। কিন্তু এর কিছুদিন পর আবারো বিবাদ-কলহ শুরু হতো এবং মিমাংসা
হতো।
সর্বশেষ গত
কয়েক দিন আগে ফের দাম্পত্য কলহের জের ধরে মনিরা তার দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি
চলে আসে। মনিরা ও মন্টুর দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে ছেলে মনিরুজ্জামান অষ্টম শ্রেণিতে এবং
মেয়ে মারিয়া আক্তার মিম ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। এবারো মন্টু নানা বাহানা করলেও মনিরার মন
গলেনি। সাফ জানিয়ে দেয় সে আর তার বাড়িতে ফিরে যাবে না। প্রয়োজনে ডিভোর্স দিবে।
এসব কথা শুনে
মন্টু রাগে অভিমানে ক্ষুব্ধ হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) সন্ধ্যা ৭টার দিকে তার
শ্বশুর বাড়িতে বোরকা পরে ছদ্দবেশ ধারণ করে ধারালো দা ও ছুরি নিয়ে হামলা চালায়। প্রথমে
তার স্ত্রীকে রান্না ঘরে ঢুকে দা দিয়ে জবাই করে। এসময় তার ডাক চিৎকারে শ্বশুর-শাশুড়ি
ও অন্যান্য আত্মীয়রা ছুটে আসলে যাকে যেখানে পায় সেখানেই মন্টু কোপাতে থাকে। এক পর্যায়ে
তার শাশুড়ি, শ্বশুর, জেঠা শ্বশুর ও সম্বন্ধিসহ ৬ জনকে কুপিয়ে পালিয়ে যায়।
পরে স্থানীয়রা
তাদের উদ্ধার করে গ্রামের পাশ্ববর্তী জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
নিয়ে যায়। সেখানে নেওয়ার পথে ঘাতকের স্ত্রী মনিরা মারা যায় এবং বক্সিগঞ্জ হাসপাতালে
নেওয়ার পর ঘাতকের শাশুড়ি ও জেটা শ্বশুর মারা যায়। এদিকে রাতেই ঘাতক মন্টুর শ্বশুর মনু
মিয়াকে আশঙ্কাজনক ভাবে এবং আহত অন্য দ্ইুজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি
করা হয়।
এবিষয়ে মন্টুর
মেয়ে মারিয়া আক্তার মিম জানায়, প্রায়ই তার বাবা তার মাকে মারধর করতো ফলে তার মা তার
নানীর বাড়ি চলে আসতো। তাদের পড়াশোনার খরচ ও পরিবারের খরচও দিতে চাইতো না তার বাবা।
এখানে আসার পর তাকে এবং তার ভাইকে যাতে স্কুলে যেতে না পারে সেজন্য তাদের বই নিয়ে আসতে
দেয়নি তার বাবা। ঘটনার সময় মিম ঘরে থেকেই তার মা’র চিৎকার শুনে বেড়িয়ে এসে দেখে তার বাবা
তার নানী ও নানাকে কোপাচ্ছে। পরে তার এক মামা তাকে বাঁচাতে তাকে ধরে অন্য ঘরে নিয়ে
যায়।
এদিকে এঘটনার
খবর পেয়ে শেরপুর জেলার পুলিশ সুপার হাসান নাহিদ চৌধুরী, শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা বিপ্লব বিশ্বাসসহ পুলিশের অন্যান্য বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সদস্যরা
শ্রীবরদী অবস্থান নেয় এবং আসামিকে গ্রেপ্তার করতে তৎপর থাকে। সেই সাথে র্যাব, সিআইডিও
তৎপর হয়ে উঠে এই ত্রিপল মার্ডারের ঘটনায়।
অবশেষে আজ শুক্রবার
(২৪ জুন) ভোর রাতে ওই গ্রামের ঘাতকের শ্বশুর বাড়ির পাশের একটি আম গাছ থেকে ঘাতক মন্টুকে
ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ঘাতক মন্টু রাতে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে গা-ঢাকা দেওয়ার সুযোগ
না পেয়ে রাত ভর গাছে চড়ে ছিলো নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যেতে। কিন্তু সারা রাত এ হত্যাকাণ্ডের
ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নানা স্থানের লোকজনের সমাগম থাকায় সে গাছ থেকে নেমে পালাতে
পারেনি। পরে শুক্রবার ভোর রাতে ডিবি পুলিশ প্রথমে খোঁজ পেয়ে তাকে গাছ থেকে নামিয়ে নিয়ে
গ্রেপ্তার করে।
এঘটনায় শ্রীবরদী
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিল্পব কুমার বিশ্বাস জানায়, হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে আমরা
রাত থেকেই আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাতে থাকি এবং ভোর রাতে তাকে গ্রেপ্তার করতে
সক্ষম হই। মামলা ও পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।